‘দিলুর অভিনয় দর্শকের মনে আজও দাগ কেটে আছে’

ফিচার প্রতিবেদক

বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত সংশপ্তক ধারাবাহিকটি যারা দেখেছেন তাদের বড় মালু চরিত্রটির কথা ভোলার নয়। জনপ্রিয় চরিত্রকে পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছিলেন অভিনয়শিল্পী মুজিবুর রহমান দিলু। জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী, নাট্য পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা গতকাল জীবনমঞ্চ ত্যাগ করেছেন। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শ্রদ্ধা জানানো শেষে গতকাল বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয় তাকে। তার প্রয়াণে শোকে মূহ্যমান হয়ে পড়েছেন নাট্যাঙ্গনের ব্যক্তিত্বরা।



মুজিবুর রহমান দিলু অসংখ্য মঞ্চ টিভি নাটকে অভিনয় করেছেন। দেশের সিনিয়র টিভি ব্যক্তিত্ব হারূন তার প্রযোজিত অনেকগুলো নাটকেও অভিনয় করেছেন মুজিবুর রহমান দিলু। অভিনেতার মৃত্যুতে শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছেন তিনি। গতকাল টকিজের কাছে প্রয়াত অভিনেতাকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করেছেন। পাঠকের জন্য তা এখানে তুলে ধরা হলো

মুজিবুর রহমান দিলুর সঙ্গে আমার পরিচয় যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি তখন থেকেই। মুজিবুর রহমান দিলু একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় তিনি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। ফিরে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ঢাকা ড্রামা গঠন করেন। নাট্যদল থেকে তার পরিচালনা রচনায় অনেকগুলো নাটক তৈরি হয়েছে।

মঞ্চ থেকে মুজিবুর রহমান দিলুর অভিনয়জীবনের শুরু। তার অভিনয় নিদের্শনা সে সময় মঞ্চনাটকে নতুন মাত্রা নিয়ে এসেছিল। তিনি অনেক মঞ্চনাটক করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য মঞ্চনাটক আমি গাধা বলছি, নানা রঙ্গের দিনগুলি, জনতার রঙ্গশালা আর টেলিভিশন নাটকে তো খুবই জনপ্রিয় ছিলেন। ১৯৭২ সালে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনে অভিনয়শিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ১৯৭৬ সাল থেকে বিটিভিতে নিয়মিত অভিনয় করেছেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত তার সংশপ্তক, সময়ে অসময়ে ধারাবাহিকগুলো অন্যতম। নাটকগুলোর মধ্য দিয়ে অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। দিলু অভিনীত সংশপ্তকের মালু চরিত্রটি আজও দর্শকদের মনে দাগ কেটে আছে।


আমার প্রযোজনায়ও অনেকগুলো নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে নীলপানীয়া, কিছু তো বলুন, মহাপ্রস্থান নাটকগুলো অন্যতম। আশির দশকে ছোটদের জনপ্রিয় গল্প সংগীতের সমন্বয়ে শ্রুতি নাটক টোনাটুনি প্রকল্পের নির্দেশক ছিলেন দিলু। তার কণ্ঠে পাতা ওল্টাও শিশুদের মধ্যে অসম্ভব জনপ্রিয় ছিল, যা আজও অনেকেই মনে রেখেছেন। খুব ভালো একজন অভিনেতা ছিলেন মুজিবুর রহমান দিলু। ছিলেন অসামান্য প্রতিভার অধিকারী। ২০০৫ সালে গুলেনবারি সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন কোমায় ছিলেন দিলু। এর পর থেকে সেভাবে আর অভিনয় করতে পারেননি। তার আগ পর্যন্ত তিনি অভিনয় করে গেছেন, যা দর্শকের মনে আজও দাগ কেটে আছে।

সংক্ষিপ্ত পরিচিতি: মুজিবুর রহমান দিলুর জন্ম নভেম্বর ১৯৫২। স্কুলে পড়ার সময়ই স্বাধিকার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন দিলু। ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে যে মিছিলে গুলিতে আসাদ শহীদ হয়েছিলেন সেই মিছিলে ছিলেন তিনিও। দিলু ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। তিনি ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশে ফিরে ঢাকায় সরাসরি রণাঙ্গনে যোগ দেন। তিনি ঢাকায় কয়েকটি দুঃসাহসিক অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি শান্ত মরিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী পরিচালক পদে কর্মরত ছিলেন। স্ত্রী, দুই ছেলে এক মেয়ে নিয়ে রাজধানীর উত্তরায় বাস করতেন মুজিবুর রহমান দিলু।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন