সংসদে রাষ্ট্রপতি

সরকার শিগগিরই জনগণকে কভিড-১৯ টিকা দিতে পারবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকার শিগগিরই দেশের জনগণকে কভিড-১৯-এর টিকা দিতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। জাতীয় সংসদে গতকাল দেয়া ভাষণে তিনি বলেন, কভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এবং ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট অব লাইফ সায়েন্সেস প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন সরাসরি ক্রয়ের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় সিএমএসডির মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে ভ্যাকসিন ক্রয় বাবদ ৬০ মিলিয়ন ডলার ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে প্রদান করা হয়েছে। আমি আশা করছি, সরকার শিগগিরই দেশের জনগণকে কভিড-১৯-এর টিকা দিতে পারবে।

রীতি বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রত্যেক সংসদের বছরের প্রথম অধিবেশনে ভাষণ দিয়ে থাকেন। পরে ভাষণের ওপর একটি ধন্যবাদ প্রস্তাব আনা হয়। পুরো অধিবেশনে ওই প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করেন সংসদ সদস্যরা। আলোচনা শেষে রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানিয়ে জাতীয় সংসদে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়।

বছরের প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিনে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকের শুরুতে রাষ্ট্রপতি সংসদে ১৪৭ পৃষ্ঠার ভাষণের সংক্ষিপ্তসার পাঠ করেন। সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সময় উপস্থিত ছিলেন। ভাষণে রাষ্ট্রপতি অর্থনীতি, বাণিজ্য-বিনিয়োগ, খাদ্য-কৃষি, পরিবেশ-জলবায়ু, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে সরকারের কার্যক্রম সাফল্য তুলে ধরেন। এছাড়া দেশে আইনের শাসন সুসংহত সমুন্নত রাখার পাশাপাশি সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ দমনে সরকার গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রমেরও প্রশংসা করেন তিনি।

ভাষণে দল-মতের পার্থক্য ভুলে সবাইকে দুর্নীতি, মাদক, সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ নির্মূলে আরো ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশ  জাতির অগ্রযাত্রাকে বেগবান করতে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও সুশাসন সুসংহতকরণ, গণতন্ত্র চর্চা উন্নয়ন কর্মসূচিতে সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সরকারের নিরবচ্ছিন্ন প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রেখে দেশ থেকে দুর্নীতি, মাদক, সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ নির্মূলের লক্ষ্যে আমাদের আরো ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। আসুন দল-মত-পথের পার্থক্য ভুলে ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে আমরা লাখো শহীদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করি।

সময় জাতীয় সংসদকে দেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রবিন্দু উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, গণতন্ত্রায়ণ, সুশাসন নিরবচ্ছিন্ন আর্থসামাজিক উন্নয়নে সব রাজনৈতিক দল, শ্রেণী পেশা নির্বিশেষে ঐকমত্য গড়ে তোলার সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য আমি উদাত্ত আহ্বান জানাই। স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার আইনের শাসন সুসংহতকরণ এবং জাতির অগ্রযাত্রায় সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধী দলকেও গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে। আমি সরকারি দল বিরোধী দল নির্বিশেষে মহান জাতীয় সংসদে যথাযথ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানাই।

সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করে ভাষণে রাষ্ট্রপতি বলেন, সরকার সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে সব ক্ষেত্রেই অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জন করেছে। সম্প্রতি সরকারের সবচেয়ে বড় অর্জন হলো সাফল্যের সঙ্গে কভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জরুরি ভিত্তিতে হাজার চিকিৎসক হাজার ৫৪ জন নার্সকে নিয়োগ দান করা হয়েছে। কভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোয় ১০ হাজার ৫২৫টি সাধারণ বেড, ৬৬৬টি আইসিইউ, ৭৩টি ডায়ালাইসিস বেড, ৫৫৪টি ভেন্টিলেটর, ১৩ হাজার ৫১৬টি অক্সিজেন সিলিন্ডার, ৬৭৮ হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা ৬৩৯টি অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটরের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

আর্থিক খাত ব্যবস্থাপনায় সরকারের কার্যক্রম তুলে ধরে রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, সরকার সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার দক্ষতা উত্কর্ষ সাধন এবং প্রাজ্ঞ রাজস্ব নীতি সহায়ক মুদ্রানীতি অনুসরণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। গত এক দশকে গড়ে দশমিক শতাংশ পর পর তিন বছর শতাংশের উপর প্রবৃদ্ধি অর্জনের পর বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দশমিক ১৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিক অর্জন বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। নভেল করোনাভাইরাস মহামারীতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে দশমিক ২৪ শতাংশে। তবে একই সময়ে মাথাপিছু জাতীয় আয় দশমিক ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে হাজার ৬৪ ডলারে দাঁড়িয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার পাশাপাশি মূল্যস্ফীতিও সহনীয় পর্যায়ে রাখা সম্ভব হয়েছে। আইএমএফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে সবচেয়ে বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।

সময় বাংলাদেশ দানাদার খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ধরে রেখেছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, কৃষি উন্নয়নের সফলতা বাংলাদেশকে বিশ্ব পরিমণ্ডলে মর্যাদার নতুন আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে। পানিসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, সৌরশক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করে পরিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। কৃষি উন্নয়নে সরকারের সব সুযোগ-সুবিধা যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারলে দেশের খাদ্য পুষ্টিনিরাপত্তা অর্জন করে বিদেশে কৃষিপণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন দিক উন্মোচনে সক্ষম হবে।

মো. আবদুল হামিদ বলেন, আমরা আজ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে। শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন সমৃদ্ধির যে পথে আমরা হাঁটছি, সে পথেই আমাদের আরো এগিয়ে যেতে হবে। বছর মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। তবে আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালে বিশ্বসভায় একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশের মর্যাদায় অভিষিক্ত হওয়া। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জনগণের সর্বাত্মক অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমরা একটি কল্যাণমূলক, উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে সক্ষম হব।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন