করোনা আক্রান্ত

পুলিশ ক্ষতিপূরণ নিয়ে অর্থ বিভাগের মত চেয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

মেসবাহুল হক

মহামারীর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত দায়িত্বরত অবস্থায় কভিড-১৯- আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১০ হাজার পুলিশ সদস্য। এসব পুলিশ সদস্যকে সরকার ঘোষিত ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের মতামত চেয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ।

পুলিশ, চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীসহ করোনা মহামারী চলাকালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা ফ্রন্টলাইনার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য প্রণোদনা হিসেবে ক্ষতিপূরণ দেয়ার ঘোষণা রয়েছে সরকারের। এক্ষেত্রে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হলে ক্ষতিপূরণ বাবদ গ্রেডভেদে থেকে ১০ লাখ এবং মারা গেলে ২৫ থেকে ৫০ লাখ টাকা দেয়ার কথা সরকারের।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার লোভে দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়া রিজেন্ট হাসপাতাল জোবেদা খাতুন সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা তথা জেকেজি হেলথকেয়ারসহ আরো অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থের বিনিময়ে কভিড-১৯ পজিটিভ হওয়ার সনদ সংগ্রহের অভিযোগ উঠেছে। কারণে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভুয়া সনদ দিয়ে ক্ষতিপূরণের আবেদনেরও পাহাড় জমতে থাকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগে। এরই মধ্যে অর্থ বিভাগ করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের অর্থ দেয়া শুরু করেছে। অন্যদিকে অনেকের করোনা আক্রান্ত হিসেবে ভুয়া সনদ সংগ্রহের বিষয়টি সামনে আসায় প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টিও এক প্রকার ঝুলে গিয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আক্রান্তদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্তহীনতায় সরকার। অবস্থায় সম্প্রতি অর্থ বিভাগে চিঠি দিয়ে পুলিশ সদস্যদের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার বিষয়ে মতামত জানতে চেয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ।

মহামারীর মধ্যে দায়িত্বরত অবস্থায় প্রায় ১০ হাজার পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে জননিরাপত্তা বিভাগের ওই চিঠিতে জানানো হয়। এতে বলা হয়, পুলিশ বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত প্রায় ১০ হাজার পুলিশ সদস্য নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সরকারি দায়িত্ব পালনকালে এতে সংক্রমিত হয়েছেন। অর্থ বিভাগের -সংক্রান্ত এক পরিপত্রে দায়িত্ব পালনকালে কভিড-১৯- আক্রান্ত হলে এককালীন ক্ষতিপূরণ প্রদানের সিদ্ধান্ত থাকায় আক্রান্তরা ক্ষতিপূরণের জন্য পুলিশ সদর দপ্তরের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদনপত্র দাখিল করেছেন।

চিঠিতে আরো বলা হয়, করোনায় আক্রান্ত হওয়া বাংলাদেশ পুলিশের প্রায় ১০ হাজার সদস্যের সরকার ঘোষিত ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রাপ্তির লক্ষ্যে জমা দেয়া আবেদন অর্থ বিভাগে পাঠানো হবে কিনা বিষয়ে মতামত দেয়ার অনুরোধ করা হলো।

প্রসঙ্গে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, যারা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন, তাদের পরিবারকে বর্তমানে ক্ষতিপূরণের অর্থ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু আক্রান্তদের ক্ষতিপূরণ দেয়া এখনো শুরু হয়নি। এখন আক্রান্তের হার এত বেশি হয়ে গিয়েছে আর রিজেন্ট জেকেজির মতো অসংখ্য ভুয়া সনদ দেয়া প্রতিষ্ঠান বের হবে, এটা আমরা আগে বুঝিনি। বিষয়টি নিয়ে এখন একটু চিন্তা করতে হচ্ছে। কোনটা সত্য আর কোনটা নয়, এগুলো এখন দেখার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আক্রান্তদের কাউকেই ক্ষতিপূরণ দেব না, তা কিন্তু নয়। বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে দেখতে হবে। যে-সংখ্যক আক্রান্ত হয়েছেন এবং ভুয়া সনদ নিয়েছেন, আমরা আগে এটা ভাবিনি যে এতসংখ্যক ক্ষতিপূরণের আবেদন করবেন। এখন এটা আমাদের ভাবাচ্ছে যে কোন ক্যাটাগরির সনদে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে।

জানা গিয়েছে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতদের ক্ষতিপূরণ বাবদ চলতি বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭৫০ কোটি টাকা। এখান থেকে এরই মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত ৬০ সরকারি চাকরিজীবীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ২৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হয়ে মারা গিয়েছেন ৮৪ পুলিশ সদস্য। এর মধ্যে ৫২ জনের পরিবার ক্ষতিপূরণ পেয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিদিন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় দপ্তর থেকে আক্রান্তদের ক্ষতিপূরণ পেতে শত শত আবেদন জমা পড়ছে। কিন্তু ভুয়া সনদ দিয়ে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশায় যারা আবেদন করছেন, তাদের বিষয়ে বিকল্প চিন্তা করছে অর্থ বিভাগ। এক্ষেত্রে এরই মধ্যে ভুয়া প্রতিষ্ঠান হিসেবে যেগুলো চিহ্নিত হয়েছে, তাদের প্রদত্ত সনদ গ্রহণযোগ্য হবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের চিহ্নিত করতে যাচাই-বাছাইয়ের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এমনকি একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদান বন্ধের বিষয়টিও চিন্তাভাবনা করে দেখা হচ্ছে। করোনায় আক্রান্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদান নিয়ে এসব বিষয় সামনে আসায় এখন পর্যন্ত অর্থ বিভাগে মোট কতগুলো আবেদন এসে জমেছে, তাও গুনে দেখা হয়নি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন