সিএমএসএমই খাত নিয়ে ওয়েবিনারে বক্তারা

বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমেই আঞ্চলিক উন্নয়ন ঘটাতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা . মশিউর রহমান বলেছেন, বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমেই সিএমএসএমই খাতের সুষম আঞ্চলিক উন্নয়ন ঘটাতে হবে। ব্যবসা করার জন্য উদ্যোক্তাদের আইনগত পদক্ষেপ নিতে যখন ঢাকায় আসতে হয়, তখনই সমস্যার তৈরি হয়। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য ঢাকা কেন্দ্র থেকে বিচ্ছুরিত হয়ে সব অঞ্চলে পৌঁছাতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনোভেশন, ক্রিয়েটিভিটি অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ (আইসিই) সেন্টার এবং ইউএনডিপি বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে গৃহীত রিভাইভ প্রকল্পের অংশ হিসেবে গতকাল ভার্চুয়াল মাধ্যমে বাংলাদেশে সিএমএসএমইএস: জার্নি, চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড ফিউচার ডিরেকশন শীর্ষক খুলনা বিভাগীয় ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়। রিভাইভ প্রকল্পের অধীনে আটটি বিভাগীয় ওয়েবিনারের শেষ দিনে আয়োজনে আইসিই সেন্টারের ভাইস চেয়ারম্যান . খন্দকার বজলুল হকের সভাপতিত্বে এবং নির্বাহী পরিচালক মো. রাশেদুর রহমানের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা . মশিউর রহমান এবং মূল বক্তা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনারারি অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ।

এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম, চ্যানেল আইয়ের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক সংবাদপ্রধান এবং ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি মো. শাইখ সিরাজ। আলোচক ছিলেন ইউএনডিপি বাংলাদেশের সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি মো. খুরশিদ আলম, খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. কাজী আমিনুল হক এবং খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী অফিসার পলাশ কান্তি বালা।

. মশিউর রহমান বলেন, বর্তমানে শিল্পের যে খাতগুলো প্রসারিত হচ্ছে সেগুলোর সাপ্লাই চেইনের সঙ্গে ছোট শিল্পের সংযোগ ঘটাতে হবে। এই লিংকেজ স্থাপনটা অতীব জরুরি। নির্দিষ্টভাবে খুলনা অঞ্চলের সমস্যার সঙ্গে পোর্টের সংখ্যার একটা ব্যাপার আছে, কেননা বর্তমান বাস্তবতায় দেশের অর্থনীতির জন্য একটা পোর্টের ওপর বেশি চাপ পড়ছে। অদূর ভবিষ্যতে সমস্যা কেটে যাবে।

খুলনা অঞ্চলের সম্ভাবনাময় মাছ চাষের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোয়ালিটি কন্ট্রোল ইস্যুতে এখানে সমস্যার তৈরি হয়েছে। মান পরীক্ষায় সার্টিফায়েড হওয়ার জন্য অঞ্চলের পণ্য ঢাকায় আনতে হয়, তারপর আবার ফ্যাক্টরিতে নেয়া হয়। চট্টগ্রাম অঞ্চলেও সার্টিফায়েড হওয়ার ক্ষেত্রে একই সমস্যা আছে। খুলনা অঞ্চলে সম্ভাবনাময় পাট শিল্পের প্রতি নজর দেয়া প্রয়োজন। সুন্দরবনের মধুর প্রসেসিংয়ের জন্য এখনো কোনো শিল্প খাতের উন্নয়ন হয়নি, যা আছে তা এখনো কুটির পর্যায়ে রয়েছে। ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের জন্য সঠিক প্রশাসনিক কাঠামো এখনো সুগঠিত হয়নি। আমাদের মেগাসিটি থাকলেও এখন বিকেন্দ্রীকরণের দিকে নজর দিতে হবে। সুযোগ সম্ভাবনা পরিপূর্ণরূপে ব্যবহার করতে উদ্যোক্তাদের জন্য কোনো সেন্টার তৈরি করতে হলে ঢাকার পাশাপাশি পিছিয়ে পড়া ওই অঞ্চলগুলোয় পৌঁছাতে হবে, অন্যথায় সংবিধানের সুষম আঞ্চলিক উন্নয়ন অর্জন সম্ভব হবে না।

অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, নিঃসন্দেহে দেশের অর্থনীতির অন্যতম একটি হাব হিসেবে খুলনা বিভাগ তার সম্ভাবনার দ্বারকে প্রসারিত করে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের কুটির, ক্ষুদ্র, ছোট মাঝারি শিল্পের জাতীয় পর্যায়ের একটি সমৃদ্ধ ডাটাবেজের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, খাতের উন্নয়নের মাধ্যমেই আর্থসামাজিক সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব। খাতের জন্য আমাদের খাতভিত্তিক নীতি প্রণয়নের দিকে নজর দিতে হবে।

মো. রাশেদুর রহমান বলেন, প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের সিএমএসএমই খাতের বিভাগভিত্তিক যে সমস্যাগুলো উঠে এসেছে সেগুলোকে নীতি প্রণয়ন বাস্তবায়নে বিবেচনায় নিলে কুটির, ক্ষুদ্র, ছোট মাঝারি শিল্প খাত দেশের অর্থনীতির চাকার গতিশীলতা বৃদ্ধিতে আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে যেতে সক্ষম হবে।

প্রোগ্রামের সভাপতি . খন্দকার বজলুল হক বলেন, আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করার জন্য প্রতিটি অঞ্চলের সম্ভাবনার সুযোগকে এখনই গ্রহণ করতে হবে। অঞ্চলভিত্তিক সুযোগ তৈরি হওয়ার পর সেই সুযোগ নেয়ার মানসিকতা থেকে আমাদের সবাইকে বের হতে হবে। সিএমএসএমই খাতের উন্নয়নে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন