করোনাকালে রেমিট্যান্স প্রবাহের গতি নিয়ে প্রশ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনা মহামারীর মধ্যেও অত্যধিক রেমিট্যান্সপ্রবাহ নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। দেখা দিয়েছে বিভিন্ন প্রশ্ন। মহামারীর মধ্যে এত বেশি রেমিট্যান্স কোত্থেকে আসছে, কীভাবে আসছে এবং ভবিষ্যতে আরো কতদিন এভাবে আসবেএসব প্রশ্ন তার মধ্যে অন্যতম। আবার সরকারি শতাংশ প্রণোদনাকেও রেমিট্যান্স বৃদ্ধির কারণ হিসেবে দেখছেন অনেকেই। কিন্তু এতসব প্রশ্নের উত্তরে কারণগুলো কতটা যৌক্তিক তা খুঁজে দেখার সময় এসেছে।

গতকাল ভার্চুয়াল সংলাপে এসব মন্তব্য করেন এসডিজি প্লাটফর্মের আহ্বায়ক বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো . দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্ম, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সাম্প্রতিক প্রবাসী আয়/রেমিট্যান্সপ্রবাহ এত টাকা আসছে কোথা থেকে? শীর্ষক ভার্চুয়াল সংলাপের আয়োজন করা হয়।

এসডিজি প্লাটফর্মের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে আমাদের পাশের দেশ ভারতের রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমেছে ৩২ দশমিক শতাংশ। ফিলিপাইনের প্রবাহ কমেছে শূন্য দশমিক শতাংশ। কিন্তু এর বিপরীতে বাংলাদেশের রেমিট্যান্সপ্রবাহ বেড়েছে ১৮ দশমিক শতাংশ। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের সংগৃহীত রেমিট্যান্সের পরিমাণ হাজার ১৭৪ কোটি ১৮ লাখ মার্কিন ডলার। অন্যদিকে শুধু ছয় মাসের ব্যবধানে প্রবৃদ্ধি ছিল ৩৮ শতাংশ।

সংলাপে উঠে আসে, অতিমারীর সময়কালে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশে ফেরত এসেছে। তাদের জন্য সরকার প্রণোদনার ব্যবস্থা করলেও তা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সমস্যা রয়ে যাচ্ছে। ব্যাংকঋণ সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে সঠিক কাগজপত্রের অভাবে প্রবাসীরা ঋণের জন্য আবেদন করতে পারছেন না। অনেক ক্ষেত্রে তথ্যের ঘাটতি থাকায় ব্যাংকও ঋণ দিতে দ্বিধান্বিত থাকছে। বেশকিছু সংখ্যক প্রবাসী ছুটিতে দেশে আসার পর লকডাউনের কারণে এখন আর কর্মক্ষেত্রে ফিরে যেতে পারছেন না। ফলে তাদের জীবনযাত্রায় তার ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যদিও বর্তমানে দেশের বৈদেশিক আয়ের ক্ষেত্রে বেশ ভালো প্রবৃদ্ধি লক্ষ করা যাচ্ছে কিন্তু দেশে ফিরে আসা প্রবাসীরা নানা ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন।

সংলাপে সভাপতিত্ব করেন . দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি সংশয় প্রকাশ করে বলেন, বর্তমানে দেশে প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পেলেও ভবিষ্যতে ধারা অব্যাহত রাখা কষ্টকর হবে। যারা দেশে ফেরত এসেছেন বা আসতে বাধ্য হয়েছেন, তারা অনেকেই সরকার ঘোষিত প্রণোদনার আওতায় আসছেন না।

. মোস্তাফিজুর রহমান প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে ১৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, হারের জন্য দরিদ্র পরিবারের যে উন্নয়ন হচ্ছে এটা ভাবা সঠিক হবে না। কেননা প্রবাসী আয়ের ৫০ শতাংশের উপরে আসে দারিদ্র্যসীমার উপরের মানুষদের কাছ থেকে। হুন্ডি ব্যবসার প্রকোপ কমা, হজের জন্য জমানো টাকা দেশে পাঠানোসহ অন্যান্য বিষয় বৃদ্ধির কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন।

সেন্টার ফর নন রেসিডেন্ট বাংলাদেশিস (এনআরবি) সভাপতি এমএস সেকিল চৌধুরী বিদেশে অবস্থারত বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোর কার্যক্রমের আওতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে বলেন, যারা দেশে ফেরত আসছেন তাদের জন্য কর্মক্ষেত্র তৈরি করা জরুরি।

রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) চেয়ারম্যান প্রফেসর . তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, নারী প্রবাসীরা অধিক পরিমাণে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। কারণ কভিডের কারণে তাদের চাকরি হারানোর হার কম ছিল।

সিপিডির চেয়ারম্যান . রেহমান সোবহান বলেন, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই প্রবাসীদের অবস্থার ক্ষেত্রে টেকসই কোনো অবস্থান তৈরি হয়নি। তাই নীতিনির্ধারকদের নিয়ে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদেও বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হওয়া প্রয়োজন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন