দৃষ্টিসীমার বাধা

অর্ধবেলা বন্ধ থাকছে সৈয়দপুর ও যশোর বিমানবন্দরের ফ্লাইট

মনজুরুল ইসলাম

ঘন কুয়াশার কারণে শনিবার দুপুর পর্যন্ত সৈয়দপুর বিমানবন্দরের আকাশে ভিজিবিলিটি (দৃষ্টিসীমা) ছিল ৭০০ মিটারের কাছাকাছি। অথচ উড়োজাহাজের নিরাপদ উড্ডয়ন অবতরণের জন্য ভিজিবিলিটি প্রয়োজন হাজার ২০০ মিটার। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষই (বেবিচক) নিয়ম বেঁধে দিয়েছে। ফলে বেলা ২টা পর্যন্ত কোনো ফ্লাইট পরিচালনা সম্ভব হয়নি বিমানবন্দরটিতে। ঘন কুয়াশার কারণে ভিজিবিলিটি কম থাকায় প্রায়ই ফ্লাইট বন্ধ রাখতে হচ্ছে যশোর বিমানবন্দরেও।

জানা গেছে, ঘন কুয়াশার কারণে ভিজিবিলিটি কম থাকায় সৈয়দপুর যশোর বিমানবন্দরে সকালে ফ্লাইটগুলো পরিচালনা করতে গিয়ে প্রায়ই ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দুই এয়ারলাইনস মিলে পাঁচ থেকে ছয়টি ফ্লাইট সময়মতো উড্ডয়ন করতে পারে না। যার প্রভাবে দিনের বাকি ফ্লাইট সূচিগুলোও এলোমেলো হয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে দুটি ফ্লাইট বিলম্বে ছাড়লে দিনের শেষ ভাগের ফ্লাইট বাতিল করতে হয়।

সম্প্রতি কার্যক্রম পরিচালনাকারী এয়ারলাইনসগুলোর সঙ্গে নিরাপদ উড্ডয়ন বিষয়ে বৈঠক করে বেবিচক। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় কোনো ভিজিবিলিটি ২২০০ মিটারের কম হলে কোনো ফ্লাইটকেই উড্ডয়ন-অবতরণের অনুমতি দেয়া হবে না। যদিও গত বছরও ভিজিবিলিটি ১২০০ মিটার হলেই ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি পেত এয়ারলাইনসগুলো, যা এখন কড়াকড়িভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে বেবিচক।

অন্যদিকে এয়ারলাইনসগুলো বলছে, আবহাওয়াজনিত কারণে ভিজিবিলিটি কমে গেলে বিমানবন্দরের ইনস্ট্রুমেন্টাল ল্যান্ডিং সিস্টেম (আইএলএস) ব্যবহার করে উড়োজাহাজের নিরাপদ উড্ডয়ন-অবতরণ করাতে পারেন বৈমানিকরা। কিন্তু সৈয়দপুর যশোর বিমানবন্দরে ব্যবস্থা না থাকায় সেটিও সম্ভব হচ্ছে না। অবস্থায় ভোগান্তিতে পড়ছেন অভ্যন্তরীণ গন্তব্যের যাত্রীরা। আবার সময়মতো ফ্লাইট ছাড়তে না পারলে অনেক যাত্রীই সেটিকে এয়ারলাইনসের ব্যর্থতা বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আবার ভিজিবিলিটি থাকায় ঢাকা থেকে ফ্লাইট ছাড়ার পরও সৈয়দপুর বা যশোরে গিয়ে দেখা যায় ঘন কুয়াশা। সেক্ষেত্রে ফ্লাইটটি পুনরায় ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয়, যা আবার এয়ারলাইনসগুলোর ব্যয় বাড়ায়।

বেসরকারি এয়ারলাইনস নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে ভিজিবিলিটি কম থাকায় এবার সৈয়দপুর যশোর বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট পরিচালনায় সমস্যা তৈরি হচ্ছে। প্রায়ই দুপুর পর্যন্ত ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি পাওয়া যায় না। কারণে পুরো দিনের শিডিউল মেলাতে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। মাঝে মাঝে ফ্লাইটও বাতিল করতে বাধ্য হচ্ছে এয়ারলাইনসগুলো। তিনি বলেন, বিমানবন্দরগুলোতে ইনস্ট্রুমেন্টাল ল্যান্ডিং সিস্টেম (আইএলএস) স্থাপন করা হলে অনেক কম ভিজিবিলিটিতেও ফ্লাইট পরিচালনা করা সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে যাত্রীদেরও ভোগান্তি কমে যাবে।

প্রসঙ্গত, আইএলএস হলো উড়োজাহাজ রানওয়েতে নিখুঁতভাবে অবতরণে সহায়তার জন্য স্থাপিত একটি পদ্ধতি, যেখানে বৈমানিকদের ভূমিতে অবতরণের জন্য উলম্ব আনুভূমিক গাইডেন্স দেয়ার জন্য ভিন্ন দুটি বেতার তরঙ্গ একযোগে ব্যবহার করা হয়। ক্যাটাগরি- ক্যাটাগরি- এবং ক্যাটাগরি- তিন ধরনের আইএলএস রয়েছে, যার মধ্যে ক্যাটাগরি- বেশি আধুনিক নিরাপদ। ঢাকা, চট্টগ্রাম সিলেটে দেশের তিন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়েতে আইএলএস থাকলেও সেগুলো সনাতনী ক্যাটাগরি--এর। এদিকে নিরাপদ অবতরণের জন্য ভিজিবিলিটি প্রয়োজন হাজার থেকে হাজার ৮০০ মিটার। কিন্তু কুয়াশাচ্ছন্ন মেঘলা আবহাওয়ায় ভিজিবিলিটি অনেক কমে আসে। সে সময় ক্যাটাগরি--এর আইএলএসের সাহায্য নিয়ে উড়োজাহাজ অবতরণ করতে নিরাপদ মনে করেন না বৈমানিকরা। অন্যদিকে এটিকে ক্যাটাগরি-- আপগ্রেড করা হলে ৬০০ মিটার পর্যন্ত ভিজিবিলিটিতেও নিরাপদে উড়োজাহাজ অবতরণ করাতে পারেন বৈমানিকরা।

বেসরকারি বিমান পরিবহন পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে দেশের সব বিমানবন্দরে আইএলএস স্থাপন করতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রাডার সিস্টেম আধুনিকায়নে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ক্রয়ের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। জিটুজি পদ্ধতিতে ফ্রান্স থেকে কেনা হবে অত্যাধুনিক রাডার সিস্টেম। আর রাডারের সঙ্গে শাহজালাল বিমানবন্দরে আধুনিক আইএলএস সিস্টেম স্থাপন করা হবে। পাশাপাশি চলতি বছরের মধ্যেই দেশের সব বিমানবন্দরেই আইএলএস সিস্টেম স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন