বাবার ছায়া থেকে স্যামসাং প্রধান লি কি বেরিয়ে আসছেন?

বণিক বার্তা ডেস্ক

শুরু থেকেই বাবার ছায়া থেকে বেরিয়ে গ্লোবাল টেক জায়ান্টের নেতা হিসেবে নিজের নাম লেখানোর চেষ্টা করেছেন লি জে-ইয়ং। তবে কয়েক বছর ধরে দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং ইলেকট্রনিক্সের ভাইস চেয়ারম্যানকে ঘিরে রেখেছে নানা আইনি জটিলতা। আজ তিনি ঘুষের অভিযোগে সাজার মুখোমুখি হতে পারেন। এমনটি ঘটলে বিশ্বের বৃহত্তম স্মার্টফোন মেমোরি চিপ প্রস্তুতকারক স্যামসাংয়ের নেতৃত্ব থেকে তিনি ছিটকে যেতে পারেন। এর মাধ্যমে চুক্তিভিত্তিক চিপ উৎপাদন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) মতো ক্ষেত্রগুলোতে জে-ইয়ংয়ের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনাও থমকে যেতে পারে।

প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কর্মদক্ষতা নিয়ে কাজ করা সিইও স্কোরের প্রধান গবেষক পার্ক জু-গান বলেন, স্যামসাং একটি সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। যেখানে কভিড-১৯ মহামারী পরিবর্তন ত্বরান্বিত করেছে এবং অন্যান্য তৃতীয় প্রজন্মের ব্যবসায়ী নেতারা আগ্রাসীভাবে নতুন ব্যবসা শুরু করছেন। এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে হুন্দাইয়ের ইভি গাড়ি প্রস্তুতকারক ম্যাগনার সঙ্গে এলজির যৌথ উদ্যোগের বিষয়টি বলা যায়। জায়ান্ট সংস্থাগুলোর প্রতিষ্ঠাতাদের নাতিদের নেতৃত্বে উচ্চাভিলাষী উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

জু-গান বলেন, যদিও নিয়মিত আইনি ঝুঁকির কারণে কারখানা ব্যবসা বৃদ্ধি ছাড়া ২০১৬ সালে হারমান ইন্টারন্যাশনাল অধিগ্রহণের পর এআইয়ের মতো নতুন ব্যবসার ক্ষেত্রগুলোতে স্যামসাংয়ের বড় পরিবর্তন দেখা যায়নি। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে স্যামসাংকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, সংস্থাটি একটি গ্লোবাল প্লাটফর্ম হয়ে উঠবে কিংবা একটি হার্ডওয়্যার সংস্থা হিসেবেই থেকে যাবে কিনা।

২০১৪ সালে বাবা স্যামসাংয়ের চেয়ারম্যান লি কুন-হি হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই জে-ইয়ং কার্যত স্যামসাং ইলেকট্রনিক্সের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। গত অক্টোবরে কুন-হি মারা যাওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত সংস্থাটির চেয়ারম্যান পদ ফাঁকা পড়ে রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রধান কারণ হলো ছেলে জে-ইয়ংকে নিয়ে আইনি জটিলতা থেকে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা।

২০১২ সাল থেকে ৫২ বছর বয়সী লি ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও জে-ইয়ং তার বাবার মতো সেমিকন্ডাক্টরের কোনো ব্যবসা দাঁড় করাতে পারেননি। এখনো খাত থেকেই স্যামসাংয়ের অর্ধেক মুনাফা আসে। বেশ কয়েকটি দুর্নীতির অভিযোগে জে-ইয়ং ২০১৭ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এক বছর কারাভোগও করেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, রাজনৈতিক সুবিধা পেতে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট পার্ক গিউন-হাইয়ের বন্ধুর কয়েকটি সংস্থায় কোটি ৬০ লাখ ডলার সহায়তা দিয়েছিলেন। ঘটনায় প্রেসিডেন্ট গিউ-হাইকে ক্ষমতা হারাতে হয়।

জে-ইয়ংয়ের অন্যতম লক্ষ্য হলো চুক্তিভিত্তিক চিপ উৎপাদনসহ স্যামসাংয়ের নন-মেমোরি চিপ ব্যবসা। সংস্থাটি ২০৩০ সালের মধ্যে খাতে ১২ হাজার ১৪৭ কোটি ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছে। খাতে ১৭ শতাংশ বাজার দখলে নিয়ে স্যামসাং দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে।

গত বছর স্যামসাং ভেরিজনের থেকে ৬৬০ কোটি ডলারের চুক্তি জেতার পেছনে জে-ইয়ংয়ের দক্ষতাকে সামনে আনা হয়। যেখানে নির্দিষ্ট ব্যবসা ক্ষেত্রে হুয়াওয়ের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় স্যামসাং এখনো ছোট। এছাড়া টেক জায়ান্টের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে জে-ইয়ংকে উত্তরাধিকার শুল্ক প্রদানের বিষয়টিরও মোকাবেলা করতে হবে। কুন-হি মারা যাওয়ায় তার তালিকাভুক্ত স্টকহোল্ডিংয়ের উত্তরাধিকারী হওয়ার জন্য তার পরিবারকে উত্তরাধিকার শুল্ক হিসেবে হাজার কোটি ডলারেরও বেশি অর্থের প্রয়োজন হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

এক বছরের আটকাবস্থা থেকে মুক্ত হয়ে লি জে-ইয়ংকে নতুন রূপে দেখা গেছে। তার মধ্যে স্টাফ ক্যাফেটেরিয়ায় দুপুরের খাবার খাওয়া, কর্মীদের সঙ্গে সেলফি তোলা আনন্দ-উল্লাসের মতো বিষয়গুলো দেখা গেছে। গত বছরের মে মাসে তিনি তার সন্তানের হাতে পরিচালনার অধিকার হস্তান্তর করবেন না বলে জানান এবং শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যক্রমে নাশকতার মতো ঘটনার ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

গত ডিসেম্বরে আদালতে চূড়ান্ত বিবৃতি দেয়ার সময় আদালতে জে-ইয়ং বলেছিলেন, সত্যিকারের একটি সুপার-ক্লাসের টেকসই কোম্পানি, আমি একটি নতুন স্যামসাং তৈরি করতে চাই।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন