অপরিশোধিত জ্বালানি তেল

বৈশ্বিক চাহিদা প্রবৃদ্ধি অর্জনে চ্যালেঞ্জ রয়ে যাচ্ছে

বণিক বার্তা ডেস্ক

বিদায়ী বছরের প্রায় পুরোটাজুড়ে নভেল করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীর ধাক্কা সামলেছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল খাত। বছরের শেষভাগে এসে দেশে দেশে করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগে খাতসংশ্লিষ্টদের মনে আশা জাগে, ২০২১ সালে বিশ্বজুড়ে জ্বালানি পণ্যটির চাহিদায় উল্লম্ফন দেখা দেবে, যা জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে। তবে নতুন বছরে করোনা নিয়ে উদ্বেগ পুরোপুরি কাটেনি। বরং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, করোনা সহসা বিদায় নাও নিতে পারে। বরং বিশ্বজুড়ে প্রাণঘাতী ভাইরাসের বিবর্তিত রূপ ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত। পরিস্থিতিতে চলতি বছর অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা প্রবৃদ্ধির হার কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নাও হতে পারে।

গত সপ্তাহে প্রকাশিত মার্কিন এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (ইআইএ) এক প্রতিবেদনে ২০২১ সালে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা প্রবৃদ্ধির হার আগের প্রাক্কলনের তুলনায় দৈনিক লাখ ২০ হাজার ব্যারেল কমিয়ে আনা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে জ্বালানি পণ্যটির বার্ষিক গড় চাহিদা দাঁড়াতে পারে দৈনিক কোটি ৭৭ লাখ ৭০ হাজার ব্যারেলে।

তবে মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ২০২২ সালে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দৈনিক গড় চাহিদা দাঁড়াতে পারে ১০ কোটি ১০ লাখ ৮০ হাজার ব্যারেলে। চলতি বছরের তুলনায় ২০২২ সালে জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক গড় চাহিদা বাড়তে পারে দৈনিক ৩৩ লাখ ১০ হাজার ব্যারেল।

নেদারল্যান্ডসভিত্তিক এনার্জি অ্যান্ড কমোডিটিজ ট্রেডিং এজেন্সি ভিত্তলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল হার্ডি বলেন, চলতি বছর অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক গড় চাহিদা আগের বছরের তুলনায় দৈনিক ৬০-৬৫ লাখ ব্যারেল বাড়তে পারে। তবে প্রবৃদ্ধি কাঙ্ক্ষিত নয়। এত অল্প প্রবৃদ্ধি জ্বালানি তেলের বাজার ভারসাম্য ফেরানোর প্রচেষ্টা কাঙ্ক্ষিত মূল্যবৃদ্ধিতে বড় কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না।

তিনি আরো বলেন, ইউরোপে নতুন করে লকডাউন শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদে চলতে থাকলে ২০২০ সালের ধারাবাহিকতায় চলতি বছরেও জ্বালানি তেলের চাহিদায় পতন বজায় থাকতে পারে, যা আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি পণ্যটির মূল্য নির্ধারণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানিকারকদের জোট অর্গানাইজেশন অব দ্য পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ (ওপেক) বলছে, করোনা মহামারীর কারণে ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা নয় কোটি ব্যারেলের কাছাকাছি নেমে এসেছিল। তবে চলতি বছর শেষে জ্বালানি পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদা সেখান থেকে প্রতিদিন গড়ে ৫৯ লাখ ব্যারেল বাড়তে পারে। চাহিদা দাঁড়াতে পারে দৈনিক কোটি ৫৯ লাখ ব্যারেলে। ৫৯ লাখ ব্যারেল বাড়লেও পরিমাণ করোনা মহামারীর-পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় এখনো কম রয়েছে।

ওপেকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ২০২১ সালে জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রবৃদ্ধি সম্ভাব্য বাজার পরিস্থিতির পুরোটাই নির্ভর করছে করোনা মহামারীর গতিপ্রকৃতির ওপর। ভ্যাকসিন পুরোপুরি কার্যকর হলে এবং করোনা সংক্রমণের লাগাম টানা সম্ভব হলে জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা অনেক বেশি চাঙ্গা হয়ে উঠবে। নতুবা কারোনাকালীন চ্যালেঞ্জ দীর্ঘমেয়াদে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাজারে বজায় থাকতে পারে।

এদিকে চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক (এপ্রিল-জুন) নাগাদ আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারে উন্নীত হতে পারে। মেলবোর্নভিত্তিক অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ড ব্যাংকের (এএনজেড ব্যাংক) এক নোটে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।

একই রকম সম্ভাবনার কথা জানান ইরাকের তেলমন্ত্রী ইহসান আবদুল জব্বার। সম্প্রতি এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে উন্নীত করতে পণ্যটির উত্তোলনকারী রফতানিকারক দেশগুলো একযোগে কাজ করছে। বিশেষত ওপেক প্লাসের আওতায় গৃহীত উদ্যোগের সুফল মিলছে। সৌদি আরব স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে জ্বালানি তেলের দৈনিক গড় উত্তোলন ১০ লাখ ব্যারেল কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। এসব উদ্যোগের ফল পাওয়া যাবে চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে গিয়ে। ওই সময় আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ৬০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।

রয়টার্স অয়েলপ্রাইসডটকম অবলম্বনে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন