কাকরাইলে মা-ছেলে হত্যায় ৩ আসামির মৃত্যুদণ্ড

বণিক বার্তা অনলাইন

রাজধানীর কাকরাইলে বহুল আলোচিত মা ও ছেলেকে গলা কেটে হত্যা মামলায় নিহতের স্বামীসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত। আজ রবিবার ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. রবিউল আলম এ রায় ঘোষণা করেন।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, নিহত শামসুন্নারের স্বামী আব্দুল করিম, তার তৃতীয় স্ত্রী ও নিহতের সতীন শারমিন আক্তার মুক্তা ও মুক্তার ভাই আল আমিন ওরফে জনি।

রায় ঘোষণার সময় আসামিদের কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। রায় ঘোষণার পর তাদের আবার কারাগারে পাঠানো হয়।

ওই আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মাদ সালাহউদ্দিন হাওলাদার জানান, আলোচিত এ হত্যা মামলায় আমরা যুক্তিতর্কে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে তিন আসামিরই মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছিলাম। আদালত থেকে সে রায়ই পেয়েছি। আমরা রাষ্ট্রপক্ষ খুশি।

পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, মহান আল্লাহ আমাদের যে সকল নিয়ামত দান করেছেন তার মধ্যে সুসন্তান অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিয়ামত। সন্তানের আশা ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল হলো তার পিতা। আর স্ত্রী হলেন সহর্ধমিনী, অর্ধাঙ্গিনী ও সন্তানের জননী। সেকারণে প্রত্যেক স্ত্রী তার স্বামীর কাছে সম্মানের পাত্রী। স্বামীর নিকট স্ত্রীর রয়েছে বহুমাত্রিক অধিকার। স্বামী ও স্ত্রী একে অন্যের সহায়ক ও পরিপূরক।

বিচারক উল্লেখ করেন, ইসলাম ধর্ম শান্তি ও সত্যের ধর্ম। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন শরীফের সূরা মায়িদাহ একটি আয়াত তুলে ধরে বিচারক বলেন, ‘যে কেউ কোন ব্যক্তিকে হত্যা করে, অন্য কোন প্রাণের বিনিময় ব্যতীত কিংবা পৃথিবীতে কোন ফ্যাসাদ সৃষ্টির অপরাধ ছাড়া, সে যেন সকল মানুষকে হত্যা করলো। 

এরপর সূরা বাকারার একটি আয়াত উল্লেখ করে বিচারক বলেন, মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআন শরীফে স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কে বলেছেন, ‘তারা তোমাদের আবরণ এবং তোমরা তাদের আবরণ।’

বিচারক বলেন, এই হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী বা মাস্টারমাইন্ড হলো আসামি আ. করিম। যিনি মৃত ভিকটিম শামসুন্নাহারের স্বামী ও মৃত ভিকটিম সাজ্জাদুল করিম শাওনের পিতা। অথচ আসামি আ. করিম নিজের অসৎ উদ্দেশ্যে ও হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য আসামি শারমিন আক্তার মুক্তা ও আসামি মো. আল আমিন (২) জনির সাথে পূর্ব পরিকল্পনা করে জনিকে দিয়ে নিজ স্ত্রী ও ঔরসজাত নিজ পুত্রকে নৃশংস ভাবে হত্যা করেছেন। সেকারণে সকল আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত এবং তা মৃত্যুদণ্ডই উপযুক্ত ও একমাত্র শাস্তি। 

মামলাটিতে গত বছর ১৬ জুলাই ঢাকা সিএমএম আদালতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রমনা থানার ইন্সপেক্টর মো. আলী হোসেন চার্জশিট দাখিল করেন। এরপর গত ৩১ জানুয়ারি রায় প্রদানকারী আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরু করেন। বিচারকালে আদালত ১৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। সর্বশেষ গত ১০ জানুয়ারি আদালত যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন।

চার্জশিটে হত্যার কারণ হিসেবে বলা হয়, আসামি আব্দুল করিম ২৮ বছর পূর্বে নিহত শামসুন্নাহারকে বিবাহ করেন। তাদের সন্তান নিহত শাওন ‘ও’ লেভেলে পড়ালোখা করতো। আসামি করিম জনৈকা ফরিদাকে দ্বিতীয় বিবাহ করেন। ওই ঘরেও আকাশ নামে একটি সন্তান রয়েছে। পরে ফরিদাকে তালাক দিয়ে ৪ বছর আগে আসামি মুক্তাকে বিবাহ করেন। তৃতীয় বিয়ে করার পর আসামি করিম প্রথম স্ত্রী ও সন্তানের খোঁজ খবর নিতেন না এবং মাঝে মধ্যে বাসায় এসে স্ত্রীকে মারধর করতেন। ঘটনার ৩/৪ মাস পূর্বে তৃতীয় স্ত্রী মুক্তা বাসায় এসে নিহত শামসুন্নাহারকে মারধর করে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে যায়।

এরপর নিহত শামসুন্নাহার মুক্তাকে তালাক দেওয়ার জন্য আসামি করিমকে চাপ প্রয়োগ করেন। কিন্তু রাজি না হওয়ায় নিহত শামসুন্নাহার ও ছেলে শাওন আসামি করিমকে মরধর করেন। নিহত শামসুন্নারের নামে অনেক সম্পাদ থাকায় আসামি আব্দুল করিম তাকে তালাক দিতে পারছিলেন না। তাই মারধরের ঘটনার পর আসামি আব্দুল করিম মুক্তা ও জনিকে নিয়ে নিহত শামসুন্নাহারকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ১ নভেম্বর আসামি জনি নিউমার্কেট থেকে একটি ছোরা কিনেন। পরে ওইদিন সন্ধার সময় ৭৯/১, ভিআইপি রোডস্থ কাকরাইলের ৫ম তলার নিহতদের বাসায় ঢুকে গৃহকর্মী রাশিদাকে রান্না ঘরে বন্দি করে রেখে প্রথমে শাওনকে বুকে ছরি চালিয়ে এবং পরে শামসুন্নাহারে পেটে মুখেসহ বিভিন্ন স্থানে ছুরি চালিয়ে আহত করে শেষে গলা কেটে হত্যা নিশ্চিত করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন