ক্রমেই চাঙ্গা হয়ে উঠছে ভারতীয় গমের বাজার

বণিক বার্তা ডেস্ক

ভারতে গমের বাজার ক্রমেই চাঙ্গা হয়ে উঠছে। ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের শুরু থেকে দেশটিতে কৃষিপণ্যটির দাম কুইন্টালপ্রতি ২০০ রুপির বেশি (ভারতীয় মুদ্রা) বেড়েছে। দেশটির ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতীয় গমের রফতানি চাহিদা বাড়ছে। একই সঙ্গে বৈশ্বিক গমের বাজার কিছুদিন ধরেই চাঙ্গা রয়েছে। বিশেষত রাশিয়া আর্জেন্টিনা থেকে সরবরাহ কমে আসায় গমের দাম চাঙ্গা হতে শুরু করেছে। আমদানিকারকরা ভারতমুখী হচ্ছেন। এসব কারণে ভারতের বাজারেও রফতানিযোগ্য গমের দাম বেড়েছে। আগামী দিনগুলোয় তা আরো বাড়তে পারে। খবর মানিকন্ট্রোল বিজনেস লাইন। 

চলতি বছরের শুরুতে ভারতের উত্তর প্রদেশের বাজারে প্রতি কুইন্টাল গম হাজার ৫৭৫ রুপিতে বিক্রি হয়েছিল। বর্তমানে কৃষিপণ্যটির দাম বেড়ে কুইন্টালপ্রতি হাজার ৭০০ রুপিতে উঠেছে। একইভাবে মধ্যপ্রদেশে বছরের শুরুতে প্রতি কুইন্টাল গমের দাম ছিল হাজার ৫০০ রুপি। বর্তমানে রাজ্যে প্রতি কুইন্টাল গম বিক্রি হচ্ছে হাজার ৭১০ রুপিতে। ইন্দোরে কৃষিপণ্যটির দাম কুইন্টালপ্রতি হাজার ৭০০ থেকে বেড়ে হাজার ৮৫০ রুপিতে উঠেছে। সেই হিসাবে ১৫ দিনের ব্যবধানে ভারতে গমের দাম বেড়েছে কুইন্টালে সর্বোচ্চ ২১০ রুপি।

বেঙ্গালুরুভিত্তিক কৃষ্ণ ফ্লাওয়ার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমকে দত্তরাজ বলেন, গত ১০-১৫ দিনেই গমের দাম কুইন্টালে ২০০ রুপির বেশি বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়তি চাহিদার জের ধরে ক্রমেই চাঙ্গা হয়ে উঠেছে গমের দাম।

রোলার ফ্লাওয়ার মিলস অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার (আরএফএমএআই) ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রমোদ কুমার বলেন, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে গমের রফতানি শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে রেখেছে রাশিয়া। একই সঙ্গে কৃষিপণ্যটির রফতানি কোটা বেঁধে দিয়েছে দেশটি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আর্জেন্টিনাসহ লাতিন আমেরিকার দেশগুলোয় প্রতিকূল আবহাওয়ার জের ধরে গমের উৎপাদন সরবরাহ কমার আশঙ্কা। এমন পরিস্থিতিতে আগেভাগেই গমের দাম বাড়তির দিকে রয়েছে, যা ভারতীয় গমের রফতানি চাহিদা চাঙ্গা করেছে। বাড়িয়েছে কৃষিপণ্যটির দাম।

শিকাগো বোর্ড অব ট্রেডের (সিবিওটি) প্রাইস ইনডেক্স অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চলতি বছরের শুরু থেকে গমের দাম প্রায় শতাংশ বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি বুশেল (৬০ পাউন্ড) গম বিক্রি হচ্ছে ডলার ৬০ সেন্টের ওপরে। অন্যদিকে ওয়ার্ল্ড গ্রেইনস কাউন্সিলের (ডব্লিউজিসি) তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রতি টন গমের রফতানি মূল্য ২৮৪ ডলারে উঠেছে। আর্জেন্টিনার বাজারে তা টনপ্রতি ২৯২ ডলার।

আগামী দিনগুলোয় ভারতের বাজারে গমের মূল্যবৃদ্ধি আরো জোরদার করার পেছনে বাংলাদেশ অন্যতম প্রভাবক হিসেবে কাজ করতে পারে বলে জানিয়েছে মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) ফরেন এগ্রিকালচারাল সার্ভিস। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ মূলত রাশিয়া থেকে সবচেয়ে বেশি গম আমদানি করে। বর্তমান পরিস্থিতিতে রাশিয়ায় যে হারে দাম বাড়ছে এবং ফেব্রুয়ারি থেকে রফতানি শুল্ক বেড়ে গেলে বাংলাদেশী আমদানিকারকরা গম আমদানিতে ভারতের প্রতি ঝুঁকবেন। কেননা রাশিয়ার তুলনায় সস্তায় গম আমদানি করা সম্ভব হবে। ভৌগোলিক নৈকট্যের কারণে পরিবহন ব্যয় তুলনামূলক কম লাগবে। সময় ভারতীয় গমের দাম আরো বাড়িয়ে দিতে পারে বাংলাদেশে কৃষিপণ্যটির বাড়তি চাহিদা।

এদিকে ইউএসডিএর প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, গত বছরের ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালে ভারতের গম রফতানিতে প্রবৃদ্ধির দেখা মিলেছে। সময় দেশটি থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ১০ লাখ টন গম রফতানি হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৯৬ শতাংশ বেশি। ২০১৯ সালে ভারত থেকে আগের বছরের তুলনায় দশমিক ৬৭ শতাংশ বেড়ে সাকল্যে লাখ হাজার টন গম রফতানি হয়েছিল। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ভারত থেকে কৃষিপণ্যটির রফতানি বেড়েছে লাখ ৯১ হাজার টন। ভারতের ইতিহাসে ২০১২ সালে সবচেয়ে বেশি ৬৮ লাখ ২৪ হাজার টন গম রফতানির রেকর্ড হয়েছিল।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন