আইডিয়া পিঠা পার্কের অন্য রকম সংগ্রাম

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, যশোর

অন্য রকম এক সংগ্রামে নেমেছে আইডিয়া পিঠা পার্ক। সংগ্রাম দেশীয় ঐতিহ্যের পিঠার সম্ভার ফিরিয়ে আনার। শুধু ফিরিয়ে আনাই নয়, নতুন প্রজন্মের সঙ্গে এর পরিচয় ঘটিয়ে বিদেশী ফাস্টফুডকে হটিয়ে দেয়ারও স্বপ্ন তাদের। স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে চলেছে একঝাঁক স্বপ্নবাজ তরুণ। এখানে কলেজ শিক্ষার্থীদের বিকল্প উপার্জনের পাশাপাশি লভ্যাংশের পুরোটা দিয়েই চলছে নানা সামাজিক কাজ। তাই প্রতিষ্ঠার দুই বছরের মধ্যেই ব্যতিক্রমী এক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে আইডিয়া পিঠা পার্ক।

প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তারা জানান, আইডিয়া পিঠা পার্ক যাত্রা করে ২০১৭ সালের নভেম্বর। প্রতিষ্ঠার পর থেকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ভিন্ন আয়োজনের প্রতিষ্ঠানকে। যশোরের খড়কী শাহ্ আব্দুল করিম রোডে আইডিয়া পিঠা পার্কে গিয়ে দেখা যায় অন্য রকম এক পরিবেশ। শহরের কোলাহলমুক্ত নিরিবিলি গ্রামীণ পরিবেশের মধ্যে দেশের হারিয়ে যাওয়া পিঠার স্বাদ নিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। শীতকালে মানুষ বেশি পিঠা খেতে আসেন।

আইডিয়া পিঠা পার্কে রয়েছে ১০১ রকম পিঠার সম্ভার, যা দেখে চমকিত হবেন যে কেউ। যেসব পিঠায় দাদি-নানিদের স্পর্শ ছিল, কিন্তু সময়ের ব্যবধানে শহুরে জীবনের যান্ত্রিকতায় তা হারিয়ে যেতে বসেছে, সেসব পিঠা যেন একত্রিত হয়ে নতুন প্রাণ পেয়েছে এখানে। ব্যক্তিবিশেষের পছন্দ অনুযায়ী ঝাল-মিষ্টি হরেক রকম পিঠার মিলন মেলা আইডিয়া পিঠা পার্কে।

এখানে এখন নিরলস পরিশ্রম করছেন ৪৩ জন স্বেচ্ছাসেবী, যারা সবাই কলেজ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এই একঝাঁক আলোকিত উদ্যোক্তা প্রতিনিয়ত নিরলসভাবে কাজ করছেন পিঠাশিল্প রক্ষার্থে।

হূদয় হরণ ভাপা পিঠা খেতে খেতে কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা আইডিয়া সমাজ কল্যাণ সংস্থার স্বপ্নদ্রষ্টা যশোর সরকারি এমএম কলেজের সহকারী অধ্যাপক হামিদুল হক শাহীনের সঙ্গে। তিনি জানালেন শূন্য থেকে যাত্রা করা আইডিয়া পিঠা পার্কের ঊষালগ্নের প্রতিবন্ধকতার কথা, আজকের পর্যায়ে পৌঁছানোর কথা, আগামী পরিকল্পনার কথা।

হামিদুল হক শাহীনের কথায়, আজকের জনপ্রিয় পিত্জা কোনো নিক্তিতেই দেশের মাংস-ছিটা রুটির চেয়ে এগিয়ে ছিল না। যদিও শক্তিশালী মার্কেটিং আর করপোরেটের ছোঁয়া আমাদের খাদ্যাভ্যাসে এনে দিয়েছে পরিবর্তন। আমরা হারাতে বসেছি বাংলার বৈচিত্র্যময় পিঠার সম্ভার। অথচ যথাযথ উদ্যোগ নেয়া গেলে আজ ফাস্টফুডের নামে শীতল বাতাসে বসে নিম্নমানের বিদেশী খাবার খাওয়া লাগত না। পিঠা হতে পারত আপ্যায়নের অনন্য উপকরণ। আজ যদি মানুষ শীতল বাতাসে বসে আয়োজন করে শীতপ্রধান দেশের বার্গার খেতে পারে তাহলে কেন ঠাণ্ডায় জমে যাওয়া মানুষরা আমাদের ভাপা পিঠা খাবে না? কেন আমাদের পুলি, পাকান, লবঙ্গ লতিকা, হূদয় হরণ, ছিটা রুটি-মাংসের স্বাদ বিশ্ব পাবে না? পিঠার মতো এমন অনন্য খাদ্যসম্ভার যে আমাদের রয়েছে, যথাযথ উদ্যোগ নিতে পারলে পিঠাই হতে পারে আমাদের অর্থনীতির আরেকটি প্রাণশক্তি।

তিনি আরো বলেন, আমাদের লভ্যাংশের সিংহভাগ ব্যয় করা হয় সামাজিক কাজে, যার মধ্যে রয়েছে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবৃত্তি, চিকিৎসা ব্যয়, পোশাক বিতরণ ইত্যাদি।

আইডিয়া পিঠা পার্কের কো-অর্ডিনেটর সোমা খান জানালেন তাদের স্বপ্ন পরিকল্পনার কথা। সোমার আশা, মার্কেটিং যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতার অভাব কাটিয়ে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বদরবারে আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারে বাংলার পিঠা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন