চলতি শীতের শুরুতে দেশে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত ও এতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সব মহলে উদ্বেগের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছিল। তবে এক মাস ধরে সংক্রমণ শনাক্ত ও মৃত্যুর হার অনেকটাই কমে এসেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, ডিসেম্বরের শেষ ১৫ দিনের তুলনায় চলতি মাসের প্রথম ১৫ দিনে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ। জানুয়ারির প্রথম ১৫ দিনে মোট সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে আগের ১৫ দিনের চেয়ে প্রায় ৩৩ শতাংশ কম। তবে এ সময় নমুনা পরীক্ষার সংখ্যাও কমেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, গত ১৫ থেকে ৩১ ডিসেম্বর দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ২ লাখ ২২ হাজার ৮৬টি। এসব নমুনা পরীক্ষায় সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ১৯ হাজার ৩০১ জনের। এই ১৫ দিনে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৪৩০ জনের। অন্যদিকে গতকাল সকাল পর্যন্ত চলতি মাসের প্রথম ১৫ দিনে সারা দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ২ লাখ ৪ হাজার ১৯৪টি। এ সময় কভিড-১৯ পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছে ১২ হাজার ৯৭৫ জন। মৃত্যু হয়েছে ৩০৩ জনের।
সার্বিক পরিসংখ্যানের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, গত ১৫ দিনে দেশে করোনা রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে আগের ১৫ দিনের তুলনায় ২৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ। সংক্রমণ শনাক্ত কমেছে ৩২ দশমিক ৭৭ শতাংশ। তবে এ সময় নমুনা পরীক্ষার সংখ্যাও কমেছে
ডিসেম্বরের শেষ ১৫ দিনের তুলনায় জানুয়ারির প্রথম ১৫ দিনে ৩০ শতাংশ রোগী কম মারা যায় এবং ৩৩ শতাংশ কম রোগী শনাক্ত হয়। তবে এ সময় নমুনা পরীক্ষার সংখ্যাও কমেছে ১৭ হাজার ৮৯২ বা প্রায় ৮ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ।
এদিকে গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গতকাল সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ১১৫টি আরটি-পিসিআর ল্যাব, ২৮টি জিন-এক্সপার্ট ল্যাব ও ৫৬টি র্যাপিড অ্যান্টিজেন ল্যাবে মোট ১৩ হাজার ৬৭৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এসব নমুনা পরীক্ষা করে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৭৬২ জনের দেহে। এর মধ্য দিয়ে দেশে এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৪ লাখ ৩১ হাজার ৭৯২। এসব নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে মোট সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা ৫ লাখ ২৬ হাজার ৪৮৫।
সে হিসাবে গতকাল সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ। অন্যদিকে মোট নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সার্বিক শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
এদিকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১৩ জনের কভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করতে পেরেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, যা দুই মাসে সর্বনিম্ন। এর আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ১২ নভেম্বর ২৪ ঘণ্টায় ১৩ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছিল। গতকালের হিসাব যুক্ত করে এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর মোট নিশ্চিতকৃত সংখ্যা ৭ হাজার ৮৬২।
এ ২৪ ঘণ্টায় মৃত ১৩ জনের মধ্যে নয়জন পুরুষ ও চারজন নারী। তাদের মধ্যে ১২ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গিয়েছেন।
বাড়িতে মৃত্যু হয়েছে একজনের। মৃতদের মধ্যে আটজনই ষাটোর্ধ্ব বয়সের। এছাড়া ৫১-৬০ বছর বয়সসীমার মধ্যে একজন ও ৪১-৫০ বছর বয়সসীমার মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে ১০ জনই ছিলেন ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা। এছাড়া একজন করে তিনজন ছিলেন রাজশাহী, খুলনা ও রংপুর বিভাগের বাসিন্দা।