সংস্কারহীন সুনামগঞ্জের রাবার ড্যাম

ছয় বছর ধরে অনাবাদি ৮ হাজার হেক্টর কৃষিজমি

আল আমিন, সুনামগঞ্জ

বন্যার পানি নিয়ন্ত্রণ বোরো আবাদে পর্যাপ্ত সেচের নিশ্চয়তার লক্ষ্যে ২০০০ সালে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার খাসিয়ামারা নদীতে রাবার ড্যাম স্থাপন করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) এতে ব্যয় হয় কোটি ১৩ লাখ টাকা। ২০১৪ সালের জুলাইয়ে পাহাড়ি ঢলের তোড়ে ভেঙে যায় রাবার ড্যাম-বক্তারপুর সড়ক। দীর্ঘ ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও সংস্কার হয়নি ভাঙা অংশটি। এতে প্রত্যেক বর্ষা মৌসুমে ভাঙা অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করে তলিয়ে যায় সহস্রাধিক হেক্টর ফসলি জমি। আবার শুষ্ক মৌসুমে ভাঙা অংশ দিয়ে পানি বেরিয়ে যাওয়ায় সেচ সংকটে অনাবাদি থাকছে প্রায় আট হাজার হেক্টর জমি।

এদিকে দীর্ঘ ছয় বছর ধরে একফসলি জমি অনাবাদি থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। তারা বলছেন, উপজেলার ওই অংশে কেবল বোরো ধান আবাদ করা যায়। রাবার ড্যামটি সংস্কার না করায় বছরের পর বছর ফেলে রাখতে হচ্ছে আবাদি জমি।

অন্যদিকে, ড্যামটি সংস্কার নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়েছেন এলজিইডি পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ২০১৪ সালের জুলাইয়ে পাহাড়ি ঢলের কারণে খাসিয়ামারা নদীর রাবার ড্যাম-বক্তারপুর সড়কটি ভেঙে যায়। এরপর থেকেই প্রত্যেক বছর বর্ষা মৌসুমে ভাঙা অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করে তলিয়ে যায় বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমি পুকুর। আবার শুষ্ক মৌসুমে পানি বেরিয়ে যাওয়ায় বোরো আবাদে সেচ সংকটে পড়তে হয় চাষীদের।

তারা জানান, রাবার ড্যামটি স্থাপনের ফলে লক্ষ্মীপুর সুরমা ইউনিয়নের বাসিন্দারা সহজেই উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে পারতেন। কিন্তু সড়কটি ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন দুই ইউনিয়নের কয়েক লাখ বাসিন্দা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে ভাঙনের পর থেকে এখন পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর সুরমা ইউনিয়নের টিলাগাঁও, বক্তারপুর, খাগুরা, কান্দাগাঁও, মহব্বতপুর, টেংরা, গ্রীসনগরসহ শতাধিক গ্রামের আট হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করতে পারছেন না কৃষকরা।

মিরপুর গ্রামের কৃষক আজিজুর রহমান বলেন, রাবার ড্যাম ভাঙনে অঞ্চলের ফসলি জমিগুলোয় বোরো আবাদ বিলুপ্তির পথে। ছয় বছর ধরে বোরো ধান আবাদ করতে পারছি না।

টিলাগাঁও গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা কলিম উদ্দিন মাস্টার বলেন, প্রতি বছর ভাঙা অংশ দিয়ে বন্যার পানি বাড়িঘরে প্রবেশ করে। ভাঙনের কারণে ফসলি জমিতে চাষাবাদ করা যাচ্ছে না। প্রতি বছর বন্যায় আমন ধান নষ্ট হয়। ভাঙনের জন্য বোরো চাষ করা যাচ্ছে না।

পশ্চিম টিলাগাঁও গ্রামের কেরামত আলী বলেন, ভাঙনের ফলে প্রতি বছর আমার সব পুকুর তলিয়ে যায়। গত ছয় বছরে কয়েক লাখ টাকার মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। এখন মাছ চাষ করতে ভয় হচ্ছে।

সুরমা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নুরুল ইসলাম নুরু বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে পাহাড়ি ঢলে রাবার ড্যামটি ভেঙে যায়। ভেঙে যাওয়ার ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই। প্রতি বছর প্রকৌশলীরা এসে জরিপ করে যান। তারপর আর তাদের দেখা মেলে না। ভাঙনের ফলে লক্ষ্মীপুর, সুরমা, বোগলাবাজার ইউনিয়নের প্রায় দুই লাখ মানুষ ভোগান্তিতে রয়েছে। এছাড়া ওইসব এলাকায় সরাসরি যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। যান চলাচল বন্ধ থাকায় সীমান্তের বাজারগুলোয় পণ্য পরিবহনে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোস্তফা ইকবাল আজাদ বলেন, ওই এলাকায় মোট আবাদি জমি আট হাজার হেক্টরেরও বেশি। কিন্তু ড্যাম ভাঙা থাকার কারণে ওইসব জমিতে আবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না। বছর ধানের দাম বেশি থাকায় কৃষকরা নিজ উদ্যোগে সেচের ব্যবস্থা করে ৩০-৩৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিন্তু র্যাবার ড্যামটি সংস্কার করা হলে পুরো এলাকার জমিই আবাদের আওতায় আনা যেত।

সুনামগঞ্জ এলজিইডির সিনিয়র প্রকৌশলী হরজিৎ সরকার বণিক বার্তাকে বলেন, প্রতি বছর পাহাড়ি ঢলে খাসিয়ামারা নদীর দুই পাড়ের যেকোনো এক পাড় ভেঙে যায়। রাবার ড্যাম ভাঙনের কাজটি বাস্তবায়নের জন্য ঢাকা থেকে এলজিইডির প্রকৌশলী এসে স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। নদীর পানি ধারণক্ষমতা কমে গেছে। অবস্থায় বিকল্প উপায়ে পানির প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। যাতে বন্যার সময় অতিরিক্ত পানি ড্যাম উপচে যেতে পারে। কাজের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনুমতি প্রয়োজন। কিন্তু তারা অনুমতি দিচ্ছে না।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (পওর-) শামছুদ্দোহা বণিক বার্তাকে বলেন, আমি জেলায় নতুন যোগদান করেছি। সম্প্রতি খাসিয়ামারা দোয়ারাবাজার উপজেলার রাবার ড্যামের ভাঙন পরিদর্শন করে এসেছি। রাবার ড্যামটি যেহেতু এলজিইডি বাস্তবায়ন করেছে ভাঙনের সংস্কারকাজও তাদেরই করা উচিত।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন