তিন জঙ্গির আত্মসমর্পণ

অভিশপ্ত অতীত ভুলতে চান তারা

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, হিলি

২০১৬ সালের নভেম্বরে রংপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের কাছে আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার বাসিন্দা জেএমবির তিনজন সদস্য। গত চার বছরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে শুরু করেছেন পড়াশোনা। মনে করতে চান না অভিশপ্ত অতীতের কোনো কথা।

আত্মসমর্পণকারী তিনজন ছিলেন দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার লোহারবন গ্রামের মনদেল হোসেনের হাফেজ মো. মাসুদ রানা (২২), বিন্যাগাড়ী গ্রামের জিল্লুর রহমানের ছেলে হাফিজুর রহমান (১৯) জয়রামপুর গ্রামের সারোয়ার হোসেনের ছেলে আখতারুজ্জামান ওরফে আক্তারুল (২০)

স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণের পর ওই তিন জঙ্গির পুনর্বাসনের জন্য র‍্যারের পক্ষ তাদের হাতে লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

মাসুদ রানার মা ফাতেমা বেগম জানান, দাখিল মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার পর কখন যে ভুল পথে পা দিয়েছিল মাসুদ তা পরিবারের কেউ জানতে পারেনি। বিষয়টি এক আত্মীয়কে জানানোর পর তিনি আত্মসমর্পণের পরামর্শ দেন। আত্মসমর্পণের ১৫ দিন আগে র‍্যাবের হাতে মাসুদকে তুলে দেয়া হয়। ৬২টি দিন র‍্যাবের হেফাজতে থেকে বাড়িতে ফেরে মাসুদ। এরপর থেকে পুনরায় পড়াশোনা শুরু করে সে। ঢাকায় একটি মাদ্রাসা থেকে দাখিল এবং বগুড়া সরকারি শাহ সুলতান কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে মাসুদ রানা।

স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণকারী আরেকজন হাফিজুর রহমান বলেন, পুরনো দিনের সেসব স্মৃতি আর মনে করতে চাই না। আত্মসমর্পণের আগে যে ভয় মনে ঢুকে ছিল। তা আজও আমাকে তাড়া করে বেড়ায়। অপরিচিত কাউকে দেখলে এখনো ভয় লাগে। মনের অজান্তে ভুল পথে চলে গিয়েছিলাম, স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসে অনেক ভালো আছি।

আক্তারুল বলেন, আমরা তিনজন বন্ধু ছিলাম। কলাবাড়ী দাখিল মাদ্রাসায় আমি হাফিজুর সপ্তম শ্রেণীতে এবং মাসুদ অষ্টম শ্রেণীতে পড়াশোনা করতাম। আমাদের মাদ্রাসার পিয়ন ছিলেন আরিফুল ইসলাম। তার বাড়ি রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলায়। তিনি নিয়মিত আমাদের তিনজনের খোঁজখবর রাখতেন। তার মাধ্যমেই আমরা ভুল পথের দিকে চলে যাচ্ছিলাম। একদিন সংবাদে জঙ্গি হিসেবে আমাদের তিনজনের নাম আসে। পরে আমরা র‍্যাবের মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করি। আত্মসমর্পণের পর ৬২ দিন আমরা র‍্যাব হেডকোয়ার্টারে ছিলাম। সময় র‍্যাবের কর্মকর্তারা নিয়মিত আমাদের খোঁজখবর রাখতেন। পরে বাবা-মাকে ডেকে আমাদের তাদের হাতে তুলে দেন। বর্তমানে আমি একটি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছি।

আত্মসমর্পণকারীদের অভিভাবকরা জানান, স্বেচ্ছায় আত্মসমপর্ণের পর নগদ লাখ টাকা করে তুলে দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বাকি লাখ টাকা আত্মসমর্পণকারী তিনজন  র‍্যাবের নামে খোলা পৃথক তিনটি যৌথ অ্যাকাউন্টে এফডিআর করে দিয়েছে র‍্যাব। সে অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতি তিন মাস পর পর ১০ হাজার ৮৮৮ টাকা করে লভ্যাংশ তুলে নিয়ে আসেন তারা। আর লভ্যাংশের টাকা দিয়েই চলছে তাদের পড়ালেখার কার্যক্রম।

র‍্যা-১৩ (রংপুর) ব্যাটালিয়নের মিডিয়া অফিসার এএসপি খন্দকার গোলাম মর্তুজা বলেন, সক্রিয় জঙ্গি সদস্যের প্ররোচনায় ওই তিন যুবক খুব অল্প বয়সে ভুল পথে পা দিয়েছিল। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার প্রাথমিক পর্যায়ে থাকা অবস্থায় তাদের সম্পর্কে আমরা জানতে পারি। পরে তারা তাদের ভুলগুলো শুধরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার প্রত্যয় ব্যক্ত করে। পরে র‍্যাব হেডকোয়ার্টারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবং র‍্যাব-১৩ ব্যাটালিয়নের আয়োজনে তিনজন আনুষ্ঠানিকভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসে পড়াশোনা শুরু করেছে। লোকাল কোম্পানি, ব্যাটালিয়ন সদর এবং র‍্যাব হেডকোয়ার্টার নিয়মিত তাদের মনিটরিং করছে। আমরা নিয়মিত তাদের সার্বিক বিষয়ের ওপর খোঁজখবর রাখছি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন