প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়ন

প্রশ্নের মুখে বিশ্বের শীর্ষ তহবিল ব্যবস্থাপকদের ভূমিকা

বণিক বার্তা ডেস্ক

সম্মিলিতভাবে ৫০ ট্রিলিয়ন ডলারের সম্পদ ব্যবস্থাপনা করা বিশ্বের শীর্ষ ৩০টি তহবিল ব্যবস্থাপক প্যারিস জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিশ্ব অর্থনীতিকে নেতৃত্বদানের ক্ষেত্রে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়েছে। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে কথা বলা হয়েছে। এএফপি।

লন্ডনভিত্তিক থিংক ট্যাংক ইনফ্লুয়েন্সম্যাপ তাদের বার্ষিক মূল্যায়নে বিশ্বের বিনিয়োগ মুঘলদের তিনটি মানদণ্ডে বিভক্ত করেছে: জলবায়ু সম্পর্কিত শেয়ারহোল্ডার রেজুলেশনকে সমর্থন, পোর্টফোলিওগুলোর সবুজতা এবং সেই পোর্টফোলিওগুলোর সঙ্গে কোম্পানিগুলোর সম্পৃক্ততা।

ইনফ্লুয়েন্সম্যাপের নির্বাহী পরিচালক ডিলান ট্যানার বলেছেন, বিশ্বব্যাপী অর্থনীতির ওপর এই সম্পদ ব্যবস্থাপকদের বিশাল প্রভাব বিবেচনায় নিলে এমনটি আশা করাই যায় যে বিশ্ব যাতে প্যারিস জলবায়ুু চুক্তির বাস্তবায়ন দেখতে পারে, সেটি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।

২০১৫ সালের জলবায়ু চুক্তি জাতিগুলোকে আশা দেখায়, কেননা সেখানে তাপমাত্রা দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার সুপারিশ করা হয় এবং সম্ভব হলে দশমিক ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু বর্তমান প্রবণতায় গ্রহের তাপমাত্রা হবে ন্যূনতম ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এখন পর্যন্ত দশমিক ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণায়নের কারণেই বিশ্বজুড়ে দেখা গেছে প্রাণঘাতী চরম আবহাওয়া, এর মধ্যে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে সুপারস্টর্মগুলো আরো ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে।

প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক মডেল সবুজ করার ক্ষেত্রে ইউরোপীয় সম্পদ ব্যবস্থাপকরা তাদের মার্কিন প্রতিপক্ষদের ছাড়িয়ে যায়।

অন্তত দশমিক ট্রিলিয়ন ডলারের সম্পদ ব্যবস্থাপনা করে, এমন শীর্ষ দশ কোম্পানির মধ্যে শীর্ষ মার্ক পেয়েছে লিগ্যাল অ্যান্ড জেনারেল আইএম, অ্যালিয়াঞ্জজিআই/পিআইএমসিও এবং আমুন্দি। যদিও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি ফাইডালিটি ইনভেস্টমেন্টস, ক্যাপিটাল গ্রুপ গোল্ডম্যান স্যাকস এএমএর অবস্থান তলানির দিকে।

ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি সম্পদ ব্যবস্থাপনা করা বিশ্বের সর্ববৃহৎ কোম্পানি ব্ল্যাকরক কয়লা থেকে দূরে সরে আসার সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরই মূলত ২০২০ সালে তাদের গ্রেড উন্নীত হয়। যদিও মার্কিন এই শীর্ষ ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিটি আরো বেশি সক্রিয় জলবায়ু নীতি বাস্তবায়ন নিয়ে শেয়ারহোল্ডারদের রেজল্যুশনকে সমর্থন করার পর ব্যর্থ মার্ক পেয়েছিল।

ট্যানার বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি, বিনিয়োগকারীরা এখন আগের চেয়েও বেশিমাত্রায় জানতে চাইছেন যে করপোরেট লবিং এবং ব্যবসায়িক মডেলগুলো প্যারিস চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা। এই জায়গাটিতে ব্ল্যাকরকের চেয়েও খারাপ করেছে ভ্যানগার্ড, ক্যাপিটাল গ্রুপ ফাইডালিটি ইনভেস্টমেন্টস।

একই সময় ২০২০ সালে ব্ল্যাকরক এবং আরো দুটি শীর্ষ তহবিল ব্যবস্থাপক জলবায়ু অ্যাকশন ১০০+ বিনিয়োগকারী উদ্যোগ- যোগ দেয়; যা কিনা একটি প্রতিশ্রুতিশীল অগ্রগতি এবং এটি করপোরেট রূপান্তরকে কার্বননিরপেক্ষতার দিকে নেয়ার কাজটি গতিময় করতে পারে বলে জানায় ইনফ্লুয়েন্সম্যাপ।

অবশেষে বিশ্বের বৃহত্তম তহবিলের একটি পোর্টফোলিও বিশ্লেষণবাজার মূলধনে ২০ ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি সম্পদের ব্যবস্থাপনা করা তিন হাজার কোম্পানি প্রমাণ করেছে যে তারা প্যারিস তাপমাত্রা লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেকটাই বিচ্যুত, বিশেষ করে নির্দিষ্ট কিছু সেক্টরে।

ট্যানার এএফপিকে বলেছেন, বিশ্বের গাড়ি প্রস্তুতকারকরা দ্রুতগতিতে বৈদ্যুতিক যানবাহনে রূপান্তরিত হচ্ছে না, কয়লা উৎপাদন কমছে ধীরে ধীরে কিংবা বিদ্যুৎ খাত জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদন নির্বাচন করছে না বা দ্রুতই নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনেও ঝুঁকছে না।

তিনি যোগ করেন, যেসব সেক্টর কোম্পানি কম কার্বন অর্থনীতিতে রূপান্তর কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করতে ব্যর্থ হয়েছে, তারা আটকে থাকা সম্পদ নিয়ে বিশাল ঝুঁকির মুখোমুখি হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন