বহুবিবাহ বন্ধে এবার উদ্যোগী তালেবান নেতারাই

বণিক বার্তা অনলাইন

ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী মুসলিম পুরুষদের একসঙ্গে চার স্ত্রী রাখার অনুমতি রয়েছে।  আফগানিস্তান ও পাকিস্তানসহ বেশকিছু মুসলিম দেশে এখনো একাধিক বিয়ে বৈধ। কিন্তু এক্ষেত্রে প্রচুর অর্থ ব্যয় ও ভাবমূর্তি সঙ্কটে পড়ায় আফগানিস্তানের শীর্ষ তালেবান নেতা একটি ডিক্রি জারি করে বিভিন্ন গ্রুপের নেতা ও কমান্ডারদের বহুবিবাহ না করার অনুরোধ জানিয়েছেন। 

তিনি বলেছেন, এর মাধ্যমে আমরা নিজেরাই আমাদের শত্রুদের সমালোচনা করার সুযোগ করে দিচ্ছি।  যদিও এর পেছনে ভিন্ন কারণের কথা জানিয়েছে তালেবান সূত্রগুলো।  কারণ বহুবিবাহ ও সংসার পরিচালনার অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেকে দুর্নীতি জড়িয়ে পড়ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

তালেবান সূত্রগুলো বলছে, বহুবিবাহ করতে গিয়ে কমান্ডারদের প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হচ্ছে। কারণ আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের পশতু আদিবাসী আইন অনুযায়ী, কনে পক্ষকে বড় অঙ্কের অর্থ পরিশোধ (পণ) করতে হয়। 

তালেবান শীর্ষ নেতার পক্ষ থেকে এই ডিক্রি এমন এক সংবেদনশীল রাজনৈতিক সময় এলো, যখন দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে জঙ্গিগোষ্ঠীটির সঙ্গে দেশটির সরকারের আলোচনা চলছে। 

সূত্র জানিয়েছে, বহুবিবাহ টিকিয়ে রাখতে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করা সদস্যদের দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তালেবান নেতৃত্ব উদ্বিগ্ন। বেশিরভাগ জ্যেষ্ঠ তালেবান নেতার একাধিক স্ত্রী রয়েছে।  তবে আগে থেকেই যাদের একাধিক স্ত্রী রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এই ডিক্রি প্রযোজ্য হবে না। 

তালেবান নেতা মোল্লা হিবাতুল্লাহর স্বাক্ষরে ইস্যু করা দুই পৃষ্ঠার ডিক্রিতে দ্বিতীয়, তৃতীয় কিংবা চতুর্থ বিয়েকে সরাসরি নিষিদ্ধ করা হয়নি।  তবে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।  তালেবান নেতাদের সতর্ক করা হয়েছে, বিয়ের অনুষ্ঠানে প্রচুর পরিমাণ অর্থ ব্যয় করার মাধ্যমে প্রতিপক্ষের সমালোচনা করার সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। 

ডিক্রিতে বলা হয়েছে, যদি সমস্ত নেতা ও কমান্ডার একাধিক বিয়ে থেকে দূরে থাকেন, তবে তাদের দুর্নীতি ও অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়ানোর প্রয়োজন পড়বে না। 

এ ডিক্রিতে একাধিক বিয়েকে সমর্থন করে ব্যতিক্রম বিধানের কথাও বলা হয়েছে।  যারা নিঃসন্তান, ছেলে সন্তান নেই, বিধবাকে বিয়ে করতে চান কিংবা যাদের একাধিক স্ত্রীর ভরণ-পোষণের মতো সক্ষমতা রয়েছে- তারা বহুবিবাহ করতে পারবেন। তবে এ ধরনের পরিস্থিতিতে একাধিক বিয়ে করতে ইচ্ছুক পুরুষকে তার সরাসরি শীর্ষ নেতার কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। 

তালেবান সূত্র নিশ্চিত করেছে, এ চিঠিটি আফগানিস্তান ও পাকিস্তান তালেবানের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। 

বহু বছর আগে থেকেই আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের পশতু সম্প্রদায়ে একাধিক স্ত্রী রাখার ঐতিহ্য রয়েছে।  বিয়ের ক্ষেত্রে নারীর মতামতেরও তেমন গুরুত্ব নেই।  বিয়ের পর সন্তান না হলে, ছেলে সন্তান না হলে ইত্যাদি কারণে পশতু সমাজে একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করার রীতি অনেক পুরনো। 

এছাড়া সামাজিক সম্মান রক্ষার নামেও বহুবিবাহ প্রচলিত।  বিধবাকে সাধারণত তার মৃত স্বামীর ভাইয়ের (বিবাহিত হলেও) সঙ্গে বিয়ে দেয়া হয়। এটিকে বিধবা ও পরিবারের সম্মান রক্ষা হিসেবে দেখা হয়।  এর বাইরে ধনী ব্যক্তিদের জন্য বহুবিবাহকে মর্যাদার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। 

এ ধরনের বিয়েগুলোতে ‘ওয়ালওয়ার’ বা পণ নামে এক প্রথা প্রচলিত রয়েছে।  এক্ষেত্রে মেয়েকে স্বামীর হাতে তুলে দেয়ার বিনিময়ে কনের পরিবার অর্থ গ্রহণ করে। 

এদিকে অর্থনৈতিক চাপ ও সামাজিক আচরণ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কয়েক দশক ধরে বহুবিবাহকে নিরুত্সাহিত করা হচ্ছে। তবে আধুনিক বিশ্বে এ ধারণাকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে ‘পুরুষের অভিলাষ’ দিয়ে- এমনটাই বলেন আফগান মানবাধিকারকর্মী রিতা আনওয়ারি। 

সূত্র: বিবিসি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন