পিকে হালদারের সঙ্গে সম্পৃক্ততা মিলেছে ৬২ জনের

হাজার কোটি টাকার বেশি জব্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক

রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রশান্ত কুমার হালদারের (পিকে হালদার) দুর্নীতি অর্থ আত্মসাত্কাণ্ডে ৬২ জনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এজন্য তাদের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে থাকা হাজার ৫৭ কোটি ৮০ লাখ টাকাও জব্দ করা হয়েছে। গতকাল দুদক সচিব মু. আনোয়ারুল হাওলাদার সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।

দুদক সচিব বলেন, অভিযুক্তদের কয়েকজনকে আজ (বৃহস্পতিবার) জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। পিকে হালদারের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধানে এখন পর্যন্ত তার সঙ্গে ৬২ জনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা। তাই তাদের ব্যাংক হিসাবে থাকা হাজার ৫৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা দুদক জব্দ করেছে।

এক প্রশ্নের জবাবে দুদক সচিব বলেন, আসলে পিকে হালদারের বিষয়টি এখন অনেক বড়। দেখা যাচ্ছে, তার বিভিন্নজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আছে। আমরা এরই মধ্যে অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তবে ৬২ ব্যক্তির সঙ্গে তার লিংক বা সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে মোটামুটি।

দুদক যাদের অর্থ অবরুদ্ধ করেছে তাদের মধ্যে রয়েছেন ন্যাচার এন্টারপ্রাইজ এমটিবি মেরিন লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী নওশেরুল ইসলাম। তিনি ২০১৫-১৯ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন ভুয়া কোম্পানির নামে ঋণ দেখিয়ে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, এফএএস লিজিং পিপলস লিজিং থেকে তার একাধিক হিসাবে হাজার ৫২০ কোটি টাকা জমা করেন। আবার জমাকৃত এসব অর্থের হাজার ৪৩২ কোটি টাকা বিভিন্ন সময় উত্তোলনও করেছেন। এখন তার বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে স্থিতি হিসেবে রয়েছে ৯৫২ কোটি টাকা। দুদক অর্থ অবরুদ্ধ করেছে।

ন্যাচার এন্টারপ্রাইজ এমটিবি মেরিনের আরেক স্বত্বাধিকারী মমতাজ বেগম ভুয়া কোম্পানির নামে ঋণ দেখিয়ে কয়েক বছরে তার একাধিক হিসাবে কোটি টাকা জমা করেছেন। সেসব হিসাব থেকে বিভিন্ন সময় তুলেও নিয়েছেন আড়াই কোটি টাকা। হিসাবে থাকা কোটি ৬৯ লাখ টাকা দুদক ফ্রিজ করেছে।

এমটিবি মেরিনের স্বত্বাধিকারী হিসেবে পরিচয় দানকারী বাসুদেব ব্যানার্জীও ভুয়া কোম্পানির নামে ঋণ দেখিয়ে তার একাধিক হিসাবে ৭৬৪ কোটি টাকা জমা করেছেন। এসব হিসাব থেকে বিভিন্ন সময় উত্তোলন করেছেন ৪৬২ কোটি টাকা। এখন এসব হিসাবে থাকা কোটি ৬৪ লাখ টাকা অবরুদ্ধ করেছে দুদক।

আরো যাদের অর্থ দুদক অবরুদ্ধ করেছে তাদের মধ্যে রয়েছে আশুতোষ চৌধুরীর ৬২ কোটি টাকা, উত্তম কুমার মিস্ত্রির ৪০ কোটি, সুস্মিতা সাহার ৩৭ কোটি, শংখ ব্যাপারীর ৫৩ কোটি সুকুমার সাহার ৪৫ কোটি টাকা।

অবৈধ ব্যবসাসহ বিভিন্ন অবৈধ উৎস থেকে অর্জিত সম্পদের বেশির ভাগই বিদেশে, বিশেষ করে কানাডায় পাচার করেছেন পিকে হালদার। বর্তমানে নিজেও বিদেশে অবস্থান করছেন তিনি। তবে ঢাকায় তার নামে একাধিক বাড়ি, প্লট ফ্ল্যাট রয়েছে এবং নামে-বেনামে একাধিক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। ক্যাসিনো-সংশ্লিষ্টতার মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে প্রথম যে ৪৩ জনের বিরুদ্ধে দুদক অনুসন্ধান শুরু করে, তাদের মধ্যে পিকে হালদার ছিলেন অন্যতম। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর গত বছরের ১০ আগস্ট তাকে তলব করেছিল দুদক। এরপর ২০১৯ সালের অক্টোবর তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। সেই নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই তিনি দেশ ছাড়েন বলে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

এরপর গত বছরের জানুয়ারি পিকে হালদারের বিরুদ্ধে ২৭৪ কোটি ৯১ লাখ ৫৫ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক। মামলার এজাহারে হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা পাচারেরও অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। মামলাটির তদন্ত করছেন দুদকের উপপরিচালক মো. সালাউদ্দিন। মামলার তদন্তে নেমে গত বুধবার পিকে হালদারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী অবন্তিকা বড়ালকে গ্রেফতার করে তিনদিনের রিমান্ডে নিয়েছে দুদক। এর আগে মামলার তদন্তে সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় গত জানুয়ারি পিকে হালদারের আরেক ঘনিষ্ঠ সহযোগী শংখ ব্যাপারীকে গ্রেফতার করা হয়।

পিকে হালদারকে গ্রেফতারে এরই মধ্যে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিস জারি করা হয়েছে। এছাড়া তার মা লীলাবতী হালদারসহ ২৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন