প্রথমবারের মতো গণশুনানি

বেসরকারি এলপিজির দাম কমানোর প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক

তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম সমন্বয় করতে প্রথমবারের মতো গণশুনানি করল বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গতকাল রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত শুনানিতে কমিশনের কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি (টিইসি) বেসরকারি এলপি গ্যাসের দাম কমানো এবং সরকারি এলপিজির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে।

বর্তমানে সাড়ে ১২ কেজির প্রতি সিলিন্ডার সরকারি এলপি গ্যাস ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা ব্যয় বিবেচনায় এটি ৭০০ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছিল রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি এলপি গ্যাস লিমিটেড। তবে শুনানিতে বর্তমান মার্জিন, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) এবং ক্রস সাবসিডি বিবেচনায় প্রতি সিলিন্ডারের ৯০২ টাকা পয়সা করার প্রস্তাব করেছে কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি।

অন্যদিকে বেসরকারি এলপিজি কোম্পানিগুলো সার্বিক খরচ অন্তর্ভুক্ত করে বর্তমান বাজার মূল্যহার বিবেচনায় প্রতি ১২ কেজি সিলিন্ডার হাজার ২৫৯ টাকা করার প্রস্তাব দেয়। তবে কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি তা কমিয়ে প্রতি সিলিন্ডার ৮৬৬ টাকা করার প্রস্তাব রেখেছে।

এছাড়া কোম্পানিগুলো ৩৫ কেজির প্রতি সিলিন্ডার এলপিজির দাম হাজার ৬৭২ টাকা ৫৫ পয়সা প্রস্তাব করলে কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি তা হাজার ৫২৫ টাকা করার প্রস্তাব রাখে। একইভাবে ৪৫ কেজির প্রতি সিলিন্ডারের দাম হাজার ২৪৬ টাকা করার প্রস্তাব করে কমিটি। যদিও বেসরকারি কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব ছিল হাজার ৭২১ টাকা ৫৫ পয়সা দাম নির্ধারণের।

কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির ভাষ্য, সৌদি আরামকো কোম্পানির সিপি প্রতি টন ৫৩৮ ডলার বিবেচনায় নিলে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম দাঁড়ায় ৯৫৪ টাকা, আর বর্তমান ৩৫৬ ডলার বিবেচনায় নিলে দাম দাঁড়ায় ৭৫৮ টাকা।

গণশুনানিতে সরকারি এলপিজির দাম বাড়ানো যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সংগঠনটির জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, সরকারি এলপিজির সাড়ে ১২ কেজির সিলিন্ডারে ৫৭৫ টাকা খরচ হয়। যার মধ্যে ৭৫ টাকা মার্জিন দেখানো হয়েছে। টাকা কীভাবে নির্ধারণ করা হলো, আর কোথায় খরচ হয় জানতে চান তিনি।

উত্তরে এলপি গ্যাস কোম্পানির পরিচালক (এমডি) ফজলুর রহমান খান বলেন, মার্জিন ৭৫ টাকা আগেই নির্ধারণ করা ছিল। তবে কিসের ভিত্তিতে টাকা নির্ধারণ এবং তা কোথায় খরচ হয়, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি তিনি।

অন্যদিকে, বেসরকারি এলপিজির সিলিন্ডারপ্রতি যে খরচ দেখানো হয়েছে তা- অযৌক্তিক বলে মনে করে ভোক্তা অধিকার সংগঠন। সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, বেসরকারি কোম্পানিগুলো যেসব খরচ দেখিয়েছে, তার বড় একটি অংশ পরিবহন খরচ। খরচ কমিয়ে আনতে না পারার দায় সরকারের। ভোক্তা ব্যয় বহন করতে পারে না। দেশে ব্যবসা করতে হলে এলপিজি খাতে বিনিয়োগকারীদের সরকারকে চাপ দিয়ে সুবিধা আদায় করতে হবে।

গণশুনানিতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) প্রতিনিধি রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, রাষ্ট্রীয় খাতের উন্নয়ন না করে সরকারি এলপি গ্যাসের দাম এমন পর্যায়ে নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে, যাতে রাষ্ট্রীয় খাত ধ্বংস হয়, ব্যবসায়ীদের সুবিধা হয়। তিনি সুলভ মূল্যে সরকারি এলপি গ্যাস দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে বণ্টন করার পক্ষে মত দেন।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের যে নিজস্ব ক্ষমতা রয়েছে, তার প্রয়োগ করতে হবে। যখন তারা সেটি করতে না পারে তখন ভোক্তাদের আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়।

সরকারি কোম্পানিসহ বর্তমানে দেশে এলপিজি আমদানি, মজুদ, বিতরণের সঙ্গে সক্রিয় রয়েছে ২৯টি প্রতিষ্ঠান। বার্ষিক এলপিজি ব্যবহারের পরিমাণ এক মিলিয়ন টন, যার ৯৮ শতাংশ আসে বেসরকারি খাত থেকে। ২০২৫ সালের মধ্যে দশমিক মিলিয়ন টন, ২০৩০ সালে দশমিক মিলিয়ন টনে উন্নীত হতে পারে বলে মনে করে বিইআরসি।

প্রসঙ্গত, ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের বার বার আবেদন আইনি প্রচেষ্টার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫ আগস্ট গণশুনানির মাধ্যমে এলপিজির দাম নির্ধারণের আদেশ দেন হাইকোর্ট। এরই অংশ হিসেবে গণশুনানির আয়োজন করে কমিশন। বিইআরসির চেয়ারম্যান সদস্যরা শুনানি পরিচালনা করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন