আবর্জনায় নষ্ট হচ্ছে পটিয়া শিল্পনগরীর বাণিজ্যিক পরিবেশ

দেবব্রত রায়, চট্টগ্রাম ব্যুরো

চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের পটিয়ায় সড়কের পাশেই আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ময়লা-আবর্জনার বিশাল স্তূপ। দুর্গন্ধ ছড়ানোর পাশাপাশি দিনের বেলায় ময়লার স্তূপে আগুন ধরিয়ে দেয় পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা। ফলে কালো ধোঁয়া ছড়ানোয় নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন স্থানীয়রা। অন্যদিকে ময়লার স্তূপের কারণে পাশে থাকা পটিয়া বিসিক শিল্পনগরীর বাণিজ্যিক পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পটিয়া পৌরসভার খামখেয়ালিপনার কারণে এলাকার পরিবেশ নষ্টের পথে। অস্থায়ী ডিপো সরানোর জন্য বারবার প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেও কোনো সমাধান হয়নি আজও। তাছাড়া ময়লার ডিপোর পাশে বিসিক শিল্পনগরী থাকায় সেখানকার বাণিজ্যিক পরিবেশ ব্যবসার জন্য উপযোগী নয়। ময়লার ডিপো অন্যত্র সরিয়ে না নিলে পটিয়ার পরিবেশে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে বলে মনে করেন তারা।

পটিয়া পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, পটিয়া পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডের বর্জ্য অপসারণের জন্য নির্ধারিত কোনো জায়গা বরাদ্দ নেই। কারণে পটিয়া পৌরসভা শ্রীমাই ব্রিজ থেকে গিরি চৌধুরী বাজার পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশেই বিসিক শিল্প এলাকার সামনে অস্থায়ীভাবে মজুদ করা হচ্ছে এসব বর্জ্য। তবে এসব বর্জ্য প্রক্রিয়াজাতের জন্য ইন্দ্রপুল এলাকায় জনবসতি স্থাপনার অদূরে একটি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়ার কথা থাকলেও প্রকল্পটি এখনো মন্ত্রণালয় থেকে কোনো ছাড়পত্র পায়নি।

বিসিকের তথ্যমতে, ১৯৮০ সালে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার আরাকান মহাসড়কের পটিয়া শ্রীমাই ব্রিজের দক্ষিণাংশে বাংলাদেশ শিল্প কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) পটিয়া জোন গড়ে তোলা হয়। ১০ দশমিক ৫৪ একর আয়তনের এই বিসিক শিল্পনগরীর মধ্যে প্রায় দশমিক ৪৮ একর জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। বরাদ্দকৃত জমির মধ্যে ৭৭টি বিভিন্ন আকারের প্লট তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে পোশাক খাতের বিভিন্ন কারখানা ছাড়াও প্রায় ২৫টির বেশি কারখানা শিল্পনগরীতে উৎপাদনে রয়েছে। তবে বেশ কয়েকটি প্লট এখনো খালি আছে বলে জানা গেছে।

সরেজমিন বিসিক শিল্পনগরীর পাশে গিয়ে দেখা যায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের শ্রীমাই ব্রিজের পূর্ব পাশ থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকায় পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা বর্জ্য ফেলে রাখা হয়েছে। মহাসড়কের উত্তর পাশে পৌরসভার নং ওয়ার্ড আর দক্ষিণ পাশে কচুয়াই ইউনিয়নের নং ওয়ার্ডের অবস্থান। দুর্গন্ধে সড়কটির পাশে হেঁটে যাওয়াই অনেক কষ্টের। তাছাড়া সড়কটির পাশেই বিসিক পটিয়া বিসিক শিল্পনগরী। সড়কটি দিয়ে হেঁটে চলাফেরা করা মানুষরা নাকে কাপড় দিয়ে দৌড়ে এলাকাটি অতিক্রম করলেই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন সবাই। এমনকি দিনের বেলায় ময়লার ডিপোতে আগুন ধরিয়ে দিতে দেখা যায় পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের। আবর্জনায় আগুন দেয়ার কারণে দিনে বেলায় অনেকটা অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি নিয়মিত এখানে ট্রাকযোগে প্রতিদিন ফেলা হচ্ছে পটিয়া পৌরসভার ময়লা আবর্জনা।

স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসী আবর্জনা অন্যত্র ফেলার জন্য দাবি জানিয়ে এলেও কোনো কাজ হয়নি। দিনের বেলা কিংবা রাতে ময়লা-আবর্জনা বেশি হয়ে গেলে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা ময়লার স্তূপের ওপর পরে থাকা পলিথিনে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। পলিথিনের আগুন দেয়ায় পুরো এলাকা অন্ধকার হয়ে যায়। এতে স্থানীয় বিসিক শিল্পনগরী ছাড়াও ইউনিয়নের বাসিন্দারা নানা সমস্যার মধ্যে আছে। বর্ষাকলে তো সড়ক দিয়ে হেঁটেই চলাচল করা যায় না। এদিকে বর্জ্যের কারণে বায়ূদূষণে স্থানীয়রা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বর্জ্য এলাকা থেকে দ্রুত অপসারণের দাবি জানান তারা।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. লোকমান জানান, আমরা অনেকবার প্রশাসন এবং উপজেলা পরিষদকে বিষয়টি নিয়ে বারবার চিঠি কিংবা অন্যান্য পন্থায় জানিয়েছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত আমরা কোনো সমস্যার সমাধান পাইনি। বর্জ্যের কারণে শিশু থেকে বয়স্করা নানা রোগে ভুগছে। এমনকি যখন আগুন জ্বালানো হয় তখন সড়ক দিয়ে চলাচল করা যায় না।

পটিয়া বিসিকের বিনিয়োগকারীরা জানান, পটিয়া বিসিকের সমস্যা নিয়ে গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে লেখালেখি হলেও কোনো সমস্যার সমাধান হয়নি। এমনকি বিসিকের অভ্যন্তরে সড়কের অবস্থাও ভালো না। তারপর আবার বিসিক এলাকার মহাসড়কের পাশে ময়লা ফেলার যে ডিপো স্থাপন করা হয়েছে, তার কারণে বিসিকসহ স্থানীয় পর্যায়ের প্রাকৃতিক বাণিজ্যিক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। আমরা দ্রুত সমস্যাটির সমাধান কামনা করি।

পটিয়ার কচুয়াই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এসএম ইনজামুল হক জসিম জানান, পটিয়া বিসিক শিল্পনগরীর পাশের প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পৌরসভার ময়লা এখানে ফেলা হচ্ছে। আমরা পৌরসভা চেয়ারম্যানের সঙ্গে বসে কয়েক দফা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেছি। বর্জ্য ফেলার স্থান পরিবর্তনের জন্য একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে বলে শুনেছি। তবে কবে নাগাদ বাস্তবায়ন হবে সেটা জানেন না বলে জানান তিনি।

প্রসঙ্গে পটিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, পরিচ্ছন্ন পটিয়া আমার প্রধান পদক্ষেপ। পৌরসভার মেয়রের সঙ্গে আমার বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত ময়লা অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (জেলা) মো. জমির উদ্দিন বণিক বার্তাকে জানান, সড়কের ময়লার ডিপোর বিষয়টি আমি শুনেছি। সড়কের পাশে এভাবে ময়লার ডিপো স্থাপন করা যায় না। বিষয়টি আমরা খোঁজখবর নিয়ে তারপর ব্যবস্থা নেব।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন