রাতে শহরে দুর্ঘটনা বাড়াচ্ছে বেপরোয়া ট্রাক চলাচল

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, সিলেট

সন্ধ্যার পর থেকে সিলেট নগরীর বিভিন্ন সড়কে দেখা মেলে বিভিন্ন পণ্যবোঝাই ট্রাকের। যদিও ট্রাফিক বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী রাত ৮টার আগে শহরের রাস্তায় ট্রাক প্রবেশের নিয়ম নেই। চালকরা নিয়ম ভেঙে টোল সময় বাঁচাতে সন্ধ্যার পর শহরের বিভিন্ন রাস্তা ব্যবহার শুরু করেন। তার ওপর বেপরোয়া গতির কারণে ঘটছে একের পর এক দুর্ঘটনা। সবশেষ ১১ জানুয়ারি রাতে নগরের সুবিদবাজার এলাকায় ট্রাকের চাপায় পিষ্ট হয়ে মারা যান দুই মোটরসাইকেল আরোহী। দুর্ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ নগরবাসী সুবিদবাজারে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে চারটি ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং ভাংচুর করে প্রায় ৩০টি ট্রাক।

একই দিন আরেকটি বেপরোয়া ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ভেঙে দেয় নগরের দক্ষিণ সুরমার হুমায়ুন রশীদ চত্বরের ফোয়ারা। এতে আহত হন ট্রাকচালক।

এর আগে জানুয়ারি রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর খাসদবির এলাকায় ট্রাকচাপায় কুটি মিয়া (৩০) নামে এক পথচারীর মৃত্যু হয়। ঘটনার পর আম্বরখানা-এয়ারপোর্ট সড়ক অবরোধ করে স্থানীয়রা। নগরে ট্রাকের চাপায় পিষ্ট হয়ে এভাবে হতাহতের ঘটনা ঘটছে নিয়মিতই। ফলে নগরের ভেতর দিয়ে ট্রাক চলাচল বন্ধেরও দাবি উঠেছে সম্প্রতি।

তবে বেশির ভাগ দুর্ঘটনা সচেতনতার অভাবে ঘটে বলে দাবি করেছেন সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্লাহ তাহের। তিনি বলেন, সবাইকে সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে মোটরসাইকেল চালকদের সতর্ক হতে হবে। কারণ এসব সড়কে অন্যান্য পরিবহন চলাচল করলেও তুলনামূলক ট্রাকের সঙ্গে মোটরসাইকেলের দুর্ঘটনাই বেশি হয়। তাছাড়া ট্রাকগুলো যাতে অতিরিক্ত ওজন নিতে না পারে, সেজন্য সড়ক জনপথ (সওজ) থেকে ওজন মাপার ওয়েট স্কেল ব্যবস্থা করতে হবে। রোড সাইন হিসেবে পার্শ্ব রাস্তা, গতি কমান, ডানে মোড় ইত্যাদি সংকেত দিলে অনেকটাই দুর্ঘটনার শঙ্কা কমে আসবে।

ট্রাফিক পুলিশ সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের বৃহৎ দুই পাথর কোয়ারি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং থেকে প্রতিদিন অসংখ্য ট্রাক নগরের ভেতর দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যায়। অতিরিক্ত পণ্যবোঝাই বেপরোয়াভাবে চলাচলকারী এসব ট্রাকের কারণেই ঘটে দুর্ঘটনা। নগরের ভেতরে ট্রাক চলাচল নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন সময় দাবি উঠলেও তা আমলে নেয়া হয়নি।

সিলেট মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নগরের ভেতরে ট্রাক চলাচলের জন্য সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। তেমুখী পয়েন্ট হয়ে সিলেট নগরে ট্রাক ঢুকতে পারবে রাত ৮টার পর। কোম্পানীগঞ্জ থেকে আসা ট্রাক রাত ৯টা হুমায়ুন রশীদ চত্বর থেকে রাত ১০টার পর নগরে ট্রাক ঢুকতে পারবে। নগরের ভেতরে চলাচল করতে পারবে সকাল ৮টা পর্যন্ত। এসব ট্রাক কেবল নগরের ইলেকট্রিক সাপ্লাই, আম্বরখানা সুনামগঞ্জ সড়ক ব্যবহার করবে।

তবে ট্রাকচালকরা এমন নির্দেশনা অমান্য করে সন্ধ্যার পর পরই ট্রাক নিয়ে ঢুকে পড়েন। নির্ধারিত সড়ক ছাড়াও উপশহর, শিবগঞ্জ, সোবহানীঘাটসহ কয়েকটি সড়কে ট্রাক চলতে দেখা যায়। সেতুর টোল ফাঁকি সময় বাঁচাতে চালকরা নগরের ভেতর দিয়ে ট্রাক নিয়ে চলাচল করেন।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী আলী আকবর বলেন, ট্রাক চলাচল আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। এটা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ দেখবে। তবে অতিরিক্ত পণ্যবাহী ট্রাকের কারণে নগরের সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

জেলা ট্রাকমালিক গ্রুপের কার্যকরী কমিটির সভাপতি গোলাম হাদি ছয়ফুল বলেন, পুলিশের নির্দেশনা মেনে রাত ৯টার পর নগরের ভেতরে ট্রাক প্রবেশ করে।

সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) ফয়সল মাহমুদ বলেন, বেপরোয়া ট্রাক নিয়ন্ত্রণে আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করি। আমাদের সদস্যরা রাত ১১টা পর্যন্ত সড়কে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর শুধু আম্বরখানা সুরমা বাইপাসে ট্রাফিক পুলিশ থাকে। তাই রাতে নগরে ট্রাক নিয়ন্ত্রণ কঠিন।

তিনি বলেন, ট্রাকে ওভারলোড বন্ধে আমাদের কিছু করার নেই। যদি ওভারলোড কন্ট্রোল স্কেল থাকত, তবে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারতাম।

এদিকে নগরের ভেতরে ট্রাকের প্রবেশ বন্ধে কোম্পানীগঞ্জ-বিমানবন্দর-তেমুখী বাইপাস সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ দীর্ঘদিন আগে নেয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।

ব্যাপারে সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী রিতেশ বড়ুয়া বণিক বার্তাকে বলেন, সড়ক নির্মাণের জন্য আমরা এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। আমরাও চাই সড়কটি হোক।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন