বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি দুর্নীতি

অপরাধীরা শাস্তি পাক

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য পর্যাপ্ত কয়লা মজুদ থাকার বিষয়টি খুব স্বাভাবিক হলেও তিন বছর আগে হঠাৎ কয়লার অভাবেই বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ঘটনার সূত্র ধরে সামনে আসে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের দুর্নীতির বিষয়টি। তদন্তে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সরকারও কমিটি গঠনপূর্বক বিষয়টি তদন্ত করে। এতে নানা অনিয়ম দুর্নীতির তথ্য উঠে আসে। পরবর্তী সময়ে অপরাধের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণের ভিত্তিতে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়। সম্প্রতি কয়লা খনি দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ওই কোম্পানির সাবেক ছয় ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ২২ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কারাগারে পাঠান বিশেষ জজ আদালত। সম্পাদকীয় লেখার সময় আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেছেন, তারা কারাগার থেকে বের হয়েছেন। রাষ্ট্রের সম্পদ রক্ষায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযুক্ত করে ধরনের মামলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি দুর্নীতি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর পরিচালন নীতি আইনি কাঠামোর দুর্বলতাকে সামনে এনেছে। সরকারি বিভিন্ন সংস্থার কার্যক্রমে স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। প্রশাসনিক সংস্কারের মাধ্যমে এক্ষেত্রে আরো স্বচ্ছতা আনা প্রয়োজন বলে বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করছেন। দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া খনি থেকে উত্তোলিত কয়লা চুরির ঘটনা একটি বড় ধরনের কেলেঙ্কারি অবশ্যই। ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক না কেন, তাদের প্রত্যেকেরই সাজা হওয়া উচিত। অভিযোগ আছে, কয়লা খনিতে দুর্নীতির অন্যতম প্রধান কারণ হলো ডিও (ডিমান্ড অর্ডার) বাণিজ্য, যার সঙ্গে তত্কালীন মন্ত্রী-এমপি, রাজনৈতিক নেতা কর্মকর্তারা জড়িত ছিলেন। কাজেই খনি থেকে উত্তোলিত কয়লার মধ্যে যে কয়লার ডিও বাণিজ্য হয়েছে, সেই ডিও প্রদানকারী এবং ডিও ব্যবসায়ীদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে। বিপুল পরিমাণ কয়লা চুরি যে একদিনে হয়নি, তা বলাই বাহুল্য। দীর্ঘদিন ধরেই কয়লা চুরি করে আসছিলেন দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তারা। ঘটনাটি এর আগে কারো নজরে আসেনি কেন, সেটিও এক বড় প্রশ্ন। কারণেও ঘটনাটির একটি ব্যাপকভিত্তিক তদন্ত প্রয়োজন।

দেশীয় কয়লা বা সম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড়পুকুরিয়া কেলেঙ্কারি একটি বড় আঘাত। দুর্নীতির ফাঁদে আটকে পড়লে এটি দেশের কয়লা খনি উন্নয়ন পরিকল্পনাকে হতাশায় নিমজ্জিত করবে। যারা জাতীয় সম্পদ চুরি করেছে তাদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাতেই হবে। কয়লা খনির দুর্নীতির বিষয়টি নিয়ে দুুদক কাজ করছে। তবে দুদকের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। দক্ষ উপযুক্ত জনবল দুদকের অভ্যন্তরেই তৈরি করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ সরঞ্জামাদির জোগান। কমিশনের নিজস্ব ফরেনসিক ল্যাব, মোবাইল ট্র্যাকিং সিস্টেম উন্নয়নের মাধ্যমে মামলার তদন্ত এবং আসামিদের গ্রেফতার প্রক্রিয়া দ্রুত করা যেতে পারে।

দুর্নীতি একটি বৈশ্বিক অপব্যবস্থা। পৃথিবীর অল্প কিছু দেশ ছাড়া অপসংস্কৃতি থেকে মুক্ত নয় জাতিসংঘের কোনো সদস্যরাষ্ট্রই। দুর্নীতি দেশের ক্ষতি করে। কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের পথে বাধা দেয়। জনগণ সামগ্রিকভাবে এবং নাগরিকদের অনেকে ব্যক্তিগতভাবে দুর্নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রাষ্ট্রের প্রচলিত আইনে দুর্নীতি একটি অপরাধ, যা শাস্তিযোগ্য। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকারকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোরালো রাজনৈতিক ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি স্বচ্ছতা জবাবদিহি আদায়ে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে যেকোনো ধরনের প্রভাবমুক্ত থেকে স্বাধীন কার্যকরভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। সরকারি কাজে স্বচ্ছতা সুশাসন নিশ্চিত করতে দুর্নীতির প্রশ্নে কোনো ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত সবার বিচার শাস্তি নিশ্চিত করা হবে, এটাই সবার প্রত্যাশা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন