পাচার করা অর্থে বিদেশে বাড়ি-ফ্ল্যাট

তালিকা চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দুদকের চিঠি

নিজস্ব প্রতিবেদক

পাচার করা অর্থে বিদেশে বিলাসবহুল বাড়ি বা ফ্ল্যাট কিনেছেন এমন বাংলাদেশী নাগরিকদের তথ্য চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ১১ জানুয়ারি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের কাছে দুদকের মানি লন্ডারিং বিভাগের মহাপরিচালক আল ফিরোজের পাঠানো ওই চিঠিতে জরুরি ভিত্তিতে এসব তথ্য চেয়েছে সংস্থাটি।

চিঠিতে বলা হয়, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে অর্থ পাচারের মাধ্যমে বিদেশে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট বা বাড়ি ক্রয়ের খবরের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের এক সুয়োমোটো রুলে (নং ২২/২০২০) দুদককে অন্যতম রেসপন্ডেন্ট করা হয়েছে এবং অর্থ পাচারকারীদের নাম, ঠিকানা, পরিচয় এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সর্বশেষ অবস্থা জানানোর নির্দেশনা  দেয়া হয়েছে। অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিদেশে বাড়ি বা ফ্ল্যাট কিনেছে, এমন বাংলাদেশী নাগরিকদের তালিকা পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন।

এর আগে গত বছরের ২২ অক্টোবর বিভিন্ন দেশে পাচারকৃত অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব গ্রহণকারী বাংলাদেশীদের তালিকা চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আরেকটি চিঠি পাঠিয়েছিল দুদক। সেই চিঠিতে ইনভেস্টমেন্ট কোটায় যেসব বাংলাদেশী নাগরিক পৃথিবীর অন্যান্য দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছে তাদের সম্পর্কে তথ্য চাওয়া হয়েছিল।

চিঠিতে বলা হয়, আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে মিস-ইনভয়েসিং, হুন্ডি, বাল্ক ক্যাশ ট্রান্সফার ইত্যাদির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ বিভিন্ন দেশে পাচার হয়ে থাকে। এতে মূলধন হারিয়ে প্রতিনিয়ত উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার জন্য যে পরিমাণ দেশীয় বিনিয়োগ প্রয়োজন তা নিশ্চিত করতে হলে অর্থ পাচার রোধ করা একান্ত দরকার।  অর্থ পাচারের ধারা রোধ করা সম্ভব না হলে অর্থনৈতিক গতিশীলতা ভবিষ্যতে থমকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ১৮ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কে আব্দুল মোমেন বাংলাদেশ থেকে কানাডায় টাকা পাচারের সত্যতা পাওয়ার কথা জানান। প্রাথমিকভাবে অর্থ পাচারে জড়িত যাদের তথ্য পাওয়া গেছে তার মধ্যে সরকারি কর্মচারীই বেশি বলেও জানান তিনি। এছাড়া তালিকায় রাজনীতিক ব্যবসায়ীরাও আছেন বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে  সেই অনুষ্ঠানে তিনি কারো নাম প্রকাশ করেননি। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন বিবেচনায় নিয়ে গত ২২ নভেম্বর হাইকোর্টের একই বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ আদেশ দেন।

ওই আদেশে হাইকোর্ট অর্থ পাচারকারী, দুর্বৃত্তদের নাম-ঠিকানার পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা, তাও জানতে চান। 

সেই ধারাবাহিকতায় ১৭ ডিসেম্বর বিষয়টি আদালতে ওঠে। সেদিন আদালত দেশের বাইরে অর্থ পাচারে জড়িত পাচার করা অর্থে যারা বিদেশে বাড়ি তৈরি করেছেন, তাদের নাম-ঠিকানা তাদের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য জানতে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পররাষ্ট্র সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, দুদকসহ বিবাদীদের সময় দেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন