পাইকারি বাজারে চাল কেনাবেচায় ভাটা

দাম কমার শঙ্কায় ব্যবসায়ীরা

সুজিত সাহা, চট্টগ্রাম ব্যুরো

সরকারি মজুদ কমে আসায় বাজার স্থিতিশীল রাখতে গত মাসের শেষের দিকে নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে চাল আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। সেই সঙ্গে কমানো হয় আমদানি শুল্কও। সরকারের অনুমোদন নিয়ে এরই মধ্যে ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। এতে পাইকারি বাজারে নতুন চালে কিছুটা কমে এসেছে। তবে পুরনো চালের দাম প্রায় আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। অবস্থায় দাম আরো কমার আশায় পাইকারি বাজারে ক্রেতার আনাগোনা কমে গেছে।

মূলত ভারত থেকে স্বর্ণা সিদ্ধ মিনিকেট সিদ্ধ জাতীয় চালের আমদানিই সবচেয়ে বেশি হয়। প্রতি বছরের মতো এবারো একই জাতের চালের আমদানির সম্ভাবনা দেখছেন ব্যবসায়ীরা। কারণে গত কয়েক দিনের ব্যবধানে দুটি জাতের চালের দাম বস্তাপ্রতি সর্বোচ্চ ২০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, চালের সরবরাহ সংকট দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার আমদানি শুল্ক ৬২ দশমিক শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনলে বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খাদ্য বিভাগের অনুমতি নিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু করে। এর মধ্যে আমদানীকৃত বেশকিছু চাল বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশও করেছে। তবে ভারত থেকে চাল আমদানি শুরুর পরও সার্বিকভাবে চালের বাজারে এখনো প্রভাব পড়েনি। ভারত থেকে মিনিকেট আতপ সিদ্ধ চাল এবং স্বর্ণা সিদ্ধ জাতীয় চালের আমদানি হওয়ায় একই ক্যাটাগরির বাংলাদেশী চালের দামেই শুধু প্রভাব পড়েছে। বাড়তি দামে আগে সংগ্রহ করা চাল হঠাৎ করে বড় ধরনের লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে চাইছেন ব্যবসায়ীরা। এতে পাইকারি পর্যায়ে লেনদেনও কমে অর্ধেকে নেমে গেছে।

১০ দিন আগে পাইকারি বাজারে চাল ক্রেতাদের ভিড় থাকলেও বর্তমানে ক্রেতা সংখ্যা হঠাৎ করেই কমে গেছে। চাহিদা কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরাও আগের তুলনায় বস্তাপ্রতি কিছুটা কম দাম অফার করছেন। তবে চিকন চালের বাজার এখনো আগের দামই ধরে রেখেছেন তারা।

চট্টগ্রামের বৃহত্তর চালের পাইকারি বাজারের সাম্প্রতিক চিত্র প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চাক্তাই রাইস মিল মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি শান্ত দাশগুপ্ত বণিক বার্তাকে বলেন, বিশ্ববাজার থেকে সরকার ঘোষিত সম্পূর্ণ চাল আমদানি না হলে দেশের চালের বাজারের গতি কোন দিকে যাবে তা বলা যাচ্ছে না। তবে ভারত থেকে যে মানের চাল বাংলাদেশে আমদানি হয়েছে শুধু সেগুলোর দামই কমতির দিকে। গত কয়েক মাসের চালের বাজারের রমরমা ভাব এখন আর নেই। দাম কমার শঙ্কায় পাইকারি চালের বাজারগুলোতে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে দাবি করেছেন তিনি।

চট্টগ্রামের চাক্তাই পাহাড়তলী পাইকারি চালের আড়তে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিনিকেট সিদ্ধ চালের দাম বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ২০০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে হাজার ৩৫০ থেকে হাজার ৪০০ টাকায়, স্বর্ণা সিদ্ধ চাল বস্তাপ্রতি প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কমে হাজার ১৫০ টাকা এবং সিদ্ধ জিরাশাইল চাল বস্তাপ্রতি ৫০ টাকা কমে হাজার ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাটারি সিদ্ধ চাল আগের মতো বস্তাপ্রতি (২৫ কেজি) হাজার ৪০০ টাকা এবং গুটি সিদ্ধ ১০০ টাকা কমে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) হাজার টাকায় লেনদেন হচ্ছে।

অন্যদিকে আতপ চালের দাম বস্তাপ্রতি সর্বোচ্চ ১০০ টাকা পর্যন্ত কমে লেনদেন হচ্ছে পাইকারি বাজারে। বর্তমান বাজারে পুরনো চাল হিসেবে বেতি মানভেদে হাজার ৩০০ থেকে হাজার ৬০০ টাকায় পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তবে চিনিগুঁড়া চালের দামে কোনো পরিবর্তন নেই। চাল মানভেদে হাজার ৮০০ থেকে সর্বোচ্চ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি বস্তা মিনিকেট আতপ হাজার ৬০০ থেকে হাজার ৭০০ টাকায় এবং পাইজাম আতপ মানভেদে হাজার ২০০ থেকে হাজার ৪০০ টাকায় লেনদেন হচ্ছে।

ব্যবসায়ীদের দাবি, ভারত থেকে চাল আমদানি শুরুর পর পাইকারি বাজারে উত্তরবঙ্গ থেকে চালের সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের বৃহৎ পাইকারি বাজারগুলোতে লেনদেন কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরাও আগাম চাল ক্রয়ে অনাগ্রহী হয়ে পড়েছেন। আগে প্রতিদিন চট্টগ্রামের বৃহৎ দুটি পাইকারি বাজার চাক্তাই পাহাড়তলীতে গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ ট্রাক চাল প্রবেশ করত। বর্তমানে সেটি কমে ৫০-৭০টিতে নেমে এসেছে। সরবরাহ কমিয়ে চালের বাজার স্বাভাবিক রাখতে ব্যবসায়ীরা ক্রয়ের পরিবর্তে মজুদ চাল ধীরে ধীরে দাম কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাইছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চাক্তাইয়ের এক চাল ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, যেকোনো ভোগ্যপণ্যের বাজার চাহিদা সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল। দাম কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে মিলাররা সরবরাহ কমিয়ে দেয়। ফলে সরকার চাল আমদানির সুযোগ দেয়ায় বিদেশী চাল এলেও হঠাৎ করেই দেশীয় চালের দাম কমে যায় না। মজুদ চাল বিক্রির জন্য মিল থেকে সরবরাহ কমিয়ে বাজারকে স্থিতিশীল করতে পাইকারি ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি বৃহৎ মিলগুলো চেষ্টা করছে বলে দাবি করেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন