পুকুরে চিতল চাষে তারেকের সাফল্য

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, হিলি

সাধারণত চিতলের দেখা মেলে হাওড়, বাঁওড় বা বিলে। একসময় প্রায়ই জেলেদের জালে ধরা পড়ত বড় বড় চিতল। সময়ের পরিক্রমায় অন্যান্য দেশীয় মাছের মতোও চিতলেরও দেখা মিলছে না দেশের অধিকাংশ উন্মুক্ত জলাশয়ে। হারিয়ে যেতে বসা মাছটিকে এবার পুকুরে কার্পজাতীয় মাছের সঙ্গে চাষ করছেন দিনাজপুরের বিরামপুরের বিনাইল গ্রামের মৎস্যচাষী এএসএম তারেক। দুই বছর ধরে পদ্ধতি চিতল চাষ করে সফলতা পেয়েছেন তিনি। তার সফলতা দেখে এলাকার অনেকেই এখন পুকুরে চিতল মাছ চাষ করছেন।

এএসএম তারেক ২০১৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। ২০১২ সালে ছাত্রজীবন থেকেই নিজ গ্রামে গড়ে তোলেন তাজ এগ্রো ফার্ম। শুরুতে অল্প কয়েকটি পুকুর নিয়ে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করেন তিনি। এতে সফল হলে বাড়তে থাকে পুকুরের সংখ্যা। বর্তমানে ১৩টি পুকরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করছেন তিনি। ২০১৯ সালে তিনি পুকুরে চিতল মাছ চাষ শুরু করেন।

এএসএম তারেক বলেন, দেশীয় বিলুপ্তপ্রায় মাছগুলো ফিরিয়ে আনতে আমার প্রতিষ্ঠান উদ্যোগ নিয়েছে। কয়েক বছর ধরে মাছটি খুবই কম পাওয়া যাচ্ছে। আমি চিতলের সঙ্গে কার্পজাতীয় রুই, কাতল মাছের চাষাবাদ শুরু করেছি।

তিনি বলেন, শুরুতে ৫০০ গ্রাম ওজনের কার্পজাতীয় মাছ পুকুরে ছাড়া হয়। পরে চিতলের পোনা ছাড়ি। একই সঙ্গে মা তেলাপিয়াও ছাড়া হয়। এতে মা তেলাপিয়া যে বাচ্ছা দেয়, তা চিতলের খাবার হিসেবে ব্যবহার হয়। বর্তমানে আমার পুকুরে একেকটি চিতল প্রায় চার-পাঁচ কেজি ওজনের হয়ে গেছে। বাজারে প্রতি কেজি চিতল বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা। আমার ৪০ শতাংশের একটি পুকুরে ৫০টির মতো চিতল রয়েছে। তাতে দুই বছরেই থেকে ১০ লাখ টাকা পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এছাড়া আমার খামারে দুই হাজারের মতো চিতলের মা (ব্রুড) মাছ রয়েছে।

স্থানীয় মৎস্যচাষী জ্যোত্স্না বেগম শহিদুল ইসলাম বলেন, আগে চিতল মাছের পোনা পাওয়া যেত না। তাই ইচ্ছা থাকলেও মাছ চাষ করা সম্ভব হতো না। এখন বিরামপুরেই চিতল মাছের পোনা পাওয়ায় পুকুরে চাষ শুরু করেছি।

তারেকের খামারে কর্মরত শ্রমিক আব্দুল করিম মেহেদুল ইসলাম বলেন, খামারে কাজ করে -১০ জন বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে। পুকুর দেখাশোনা করা, মাছ মারা মাছকে খাবার দেয়াসহ পুকুরের বিভিন্ন কাজ আমরা করি, যা বেতন পাই তা দিয়ে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়াসহ পরিবার পরিজন নিয়ে ভালোভাবে সংসার চালাতে পারছি।

বিরামপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান বলেন, পুকুরে অন্য মাছের সঙ্গে চিতল চাষ রংপুর বিভাগের মধ্যে বিরামপুরেই প্রথম। তার সফলতা আশপাশের অনেক যুবককে চিতল চাষে আগ্রহী করে তুলেছে। উদ্যোগ বেকার সমস্যার সমাধানের পাশাপাশি বিলুপ্তপ্রায় মাছটিও সংরক্ষণ হবে।

দিনাজপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা . এএসএম রেজাউল করিম বণিক বার্তাকে বলেন, আমরা বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় প্রজাতির মাছ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ক্যাটাগরিতে চিতলও পড়ে। চিতলের সঙ্গে কার্পজাতীয় মাছের চাষ চাষীদের জন্য খুব সহজ। এজন্য মৎস্য অধিদপ্তর থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। বিষয়ে আমরা চাষীদের প্রশিক্ষণসহ নানা রকম পরামর্শ দিয়ে উদ্যোক্তা তৈরির চেষ্টা করছি। এরই মধ্যে তারেক নামে একজন উদ্যোক্তাকে পেয়ে গেছি, যে চিতল চাষ করে সফল হয়েছেন। তার কাছে দুই হাজার পিস মা (ব্রুট) চিতল রয়েছে, যা থেকে বছরেই প্রচুর পরিমাণ পোনা উৎপাদন করা সম্ভব হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন