অপরিশোধিত জ্বালানি তেল

মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় ৭৭ বছরের সর্বনিম্নে ভেনিজুয়েলার রফতানি

বণিক বার্তা ডেস্ক

ভেনিজুয়েলার জ্বালানি তেল রফতানিতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা চলছে। এর পরও কিছু মিত্র দেশ ভেনিজুয়েলা থেকে নামে-বেনামে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি অব্যাহত রেখেছে। তবে গত বছর দেশটির অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিশোধিত তেলজাত পণ্য রফতানি ৭৭ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে গেছে। সময় দেশটির জ্বালানি তেল রফতানি ৩৭ দশমিক শতাংশ সংকুচিত হয়ে দৈনিক মাত্র লাখ ২৬ হাজার ৫৩৪ ব্যারেলে পৌঁছে। খবর অয়েলপ্রাইসডটকম রয়টার্স।

সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোর শাসনামলের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রাখায় এবং দেশটি অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ক্রেতা খুঁজে না পাওয়ার কারণে জ্বালানি তেল রফতানিতে নিম্নমুখী প্রবণতা বজায় রয়েছে। রিফিনিটিভ ইকন ভেনিজুয়েলার রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি প্রতিষ্ঠান পিডিভিএসএর অভ্যন্তরীণ নথির বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, ২০২০ সালে মিত্র দেশগুলোতে গড়ে প্রতিদিন লাখ ২৬ হাজার ৫৩৪ ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানি করেছে ভেনিজুয়েলা। দেশটির ইতিহাসে ১৯৪৩ সালের পর কখনই জ্বালানি পণ্যটির দৈনিক রফতানি এতটা কমেনি।

ভেনিজুয়েলার জ্বালানি তেল খাতের জন্য সবচেয়ে বড় সংকটের বছর ছিল ২০১৯। ওই বছরের শুরুর দিকে দেশটির জ্বালানি তেল খাতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় একদিকে দেশটির খনিগুলো থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের উত্তোলন কমতে শুরু করে, অন্যদিকে কমে আসে জ্বালানি পণ্যটির রফতানিও। ফলে দেশটি জ্বালানি পণ্যটির রফতানি বাজার থেকে ছিটকে পড়ে।

ওই বছর দেশটির অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিশোধিত তেলজাত পণ্য রফতানি এক ধাক্কায় ৩২ শতাংশ সংকুচিত হয়ে দৈনিক ১০ লাখ ব্যারেলে নেমে আসে। আয়ের প্রধান উেসর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত চাপে ওই বছরের শুরু থেকেই দেশটির রফতানি পঙ্গু হতে শুরু করে। তেল শিল্পে বিনিয়োগের অভাব, বছরের পর বছর ধরে চলা অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতিতে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল মজুদে বিশ্বে শীর্ষে থাকা দেশটির তেল খাতের সমস্যাগুলো আরো বাড়িয়ে দিয়েছিল।

২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞাগুলো আরো বাড়িয়ে দেয়ায় এবং করোনা মহামারীতে বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলের চাহিদা রেকর্ড পরিমাণ কমে যাওয়ায় ভেনিজুয়েলার অর্থনীতি আরো ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট মাদুরো ভেনিজুয়েলার তেল রফতানিতে নিপীড়ন বেআইনি অবরোধ-কে সর্বাধিক অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, অপরিশোধিত জ্বালানি তেল থেকে আসা ভেনিজুয়েলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় ৯৯ শতাংশ কমে গেছে।

অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ভেনিজুয়েলার প্রধান রফতানি পণ্য। সমাজতান্ত্রিক দেশটির অর্থনীতির মূল ভিত্তি খাত। কারণে জ্বালানি তেল খাতের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞাগুলো ভঙ্গুর করে দেয় ভেনিজুয়েলার সামগ্রিক অর্থনীতিকে। হাইপারইনফ্লেশনে তিন বছরে ভেনিজুয়েলার মুদ্রার মূল্য ৯৯ শতাংশ কমে যায়। ফলে দেশটি উচ্চমূল্যের নোট ছাড়তে বাধ্য হয়েছে, যেগুলো স্বল্প সময়ের ব্যবধানে অকেজো হয়ে গেছে।

ব্লুমবার্গ নিউজের সূচক অনুযায়ী, ভেনিজুয়েলায় গত ১২ মাসে মূল্যস্ফীতি হাজার ৭৯০ শতাংশ বেড়েছে। এতে বেড়ে গেছে খাদ্যমূল্য। অসন্তোষ ছড়িয়েছে জনগণের মধ্যে। ছড়িয়ে পড়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন। পরিস্থিতিতে ভেনিজুয়েলার বামপন্থী প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোর প্রতিদ্বন্দ্বী জুয়ান গুয়াইদোকে দেশটির বৈধ প্রেসিডেন্ট হিসেবে সমর্থন দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এতে ভেনিজুয়েলাকে ঘিরে বিদ্যমান সংকট আরো জোরালো হয়।

তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানি বাড়াতে নানা সৃজনশীল উপায় অবলম্বন করেছে মাদুরো সরকার। গত মাসে ব্লুমবার্গ জানায়, গত নভেম্বরে ভেনিজুয়েলা অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানি প্রায় তিন গুণ বাড়িয়েছে। এক্ষেত্রে শনাক্তকরণ এড়াতে তেলবাহী ট্যাংকারগুলো প্রকৃত পরিচয় গোপন করে ভেনিজুয়েলার জ্বালানি তেল রফতানি করছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন