নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের ১৩তম প্রয়াণ দিবস আজ। তার স্মরণে আজ ভারতের নাট্যসংগঠন ‘রিষড়া দূরায়ন’
আয়োজিত ‘জুট থিয়েটার ফেস্টিভ্যাল ২০২১’-তে প্রদর্শিত হবে তারই বিখ্যাত মঞ্চনাটক ‘হরগজ’। সেলিম আল দীনের রচনা ও স্বপ্নদলের প্রযোজনায় ‘হরগজ’
নাটকটি নিদের্শনা দিয়েছেন জাহিদ রিপন। ‘রিষড়া দূরায়ন’-এর ইউটিউব চ্যানেলে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় (ভারতীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা) নাটকটি দেখানো হবে।
ভারতের রিষড়ায় ১৮৫৫ সালে এশিয়ায় প্রথম জুট মিল স্থাপনের ঐতিহাসিক ঘটনাকে উদযাপন করতে ‘রিষড়া দূরায়ন’
এ ‘জুট থিয়েটার ফেস্টিভ্যাল’
(পট্ট নাট্য মেলা) আয়োজন করে। এতে এবারই প্রথম নয় দিনব্যাপী ইন্টারন্যাশনাল ভার্চুয়াল থিয়েটার পর্ব অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
দীর্ঘদিন আগে বাংলাদেশের মানিকগঞ্জ জেলার হরগজে সংঘটিত প্রলয়ঙ্করী টর্নেডোর অভিজ্ঞতা নিয়ে সেলিম আল দীন ‘হরগজ’ নাটকটি রচনা করেন। প্রায় আণবিক বিস্ফোরণতুল্য সে ঝড়ের পর প্রথম উদ্ধারকারী দলের সেখানে গমন এবং আকৃতির জগত থেকে তাদের হঠাৎ নিরাকৃতির জগতে উপস্থিত হওয়ার প্রতিক্রিয়া ও পরিণতি নিয়ে নাটকটি আবর্তিত। কাব্যিক এ প্রযোজনায় শেষ পর্যন্ত হরগজ যেন তাদের সামনে রূপান্তরিত হয় বিশ্বব্যাপী ভাঙা মানব ভুবনের রূপক রূপে। যেখানে কোনো মানুষই আর সম্পূর্ণ নেই! ‘হরগজ’-এ নাট্যকার ত্রাণদল প্রধান আবিদের মাধ্যমে নব্যকালে এক যিশু খ্রিস্টের রূপকে দৃশ্যমান করেছেন। যিনি ত্রাণদাতা রূপে উপস্থিত হয়ে দুর্গত মানুষের প্রতি সহমর্মিতায় সময়ের ব্যবধানে নিজেই যেন আর্তে পরিণত হন। আর পাশাপাশি দর্শক মুখোমুখি হয় এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতার! প্রযোজনাটির আলোক পরিকল্পনায় রয়েছেন ঠান্ডু রায়হান, মঞ্চ পরিকল্পনায় ফজলে রাব্বি সুকর্ণ এবং প্রযোজনা-ব্যবস্থাপনায় রয়েছেন শিশির সিকদার।
সেলিম আল দীন ১৯৪৯ সালের ১৮ আগস্ট ফেনীর সেনেরখিলে জন্মগ্রহণ করেন। তাকে বাংলা নাটকের শেকড়সন্ধানী নাট্যকার বলা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ছোটবেলা থেকেই লেখালেখির সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা। নাটক রচনার পাশাপাশি নাটক নিয়ে তিনি গবেষণা চালিয়ে গেছেন আজীবন। বাংলা ভাষার একমাত্র নাট্যবিষয়ক কোষগ্রন্থ ‘বাংলা নাট্যকোষ’ সংগ্রহ, সংকলন, প্রণয়ন ও সম্পাদনা করেছেন তিনিই। তার উল্লেখযোগ্য নাটক ‘জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন’, ‘মুনতাসীর ফ্যান্টাসি’, ‘শকুন্তলা’, ‘কীত্তনখোলা’, ‘কেরামতমঙ্গল’, ‘যৈবতী কন্যার মন’, ‘চাকা’, ‘হরগজ’, ‘প্রাচ্য’, ‘হাতহদাই’, ‘নিমজ্জন’, ‘ধাবমান’, ‘পুত্র’, ‘বনপাংশুল’ ইত্যাদি। মৈমনসিং গীতিকা অবলম্বনে তার গবেষণাধর্মী নির্দেশনা ‘মহুয়া’ ও ‘দেওয়ানা মদিনা’। তার রচিত ‘চাকা’ ও ‘কীত্তনখোলা’ অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে।
শিক্ষকতার পাশাপাশি সারা দেশে নাট্য আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিতে ১৯৮১-৮২ সালে সেলিম আল দীন গড়ে তোলেন বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার। তার আগেই শিল্পসঙ্গী নাট্যনির্দেশক নাসির উদ্দীন ইউসুফের সঙ্গে যুক্ত হয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ঢাকা থিয়েটার। তার সম্পাদনায় নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ থেকেই প্রকাশিত হতো নাটকবিষয়ক পত্রিকা ‘থিয়েটার স্টাডিজ’। সেলিম আল দীন রচিত নাটকের প্রথম মঞ্চায়ন হয় ১৯৭২ সালে। নাটকটি প্রযোজনায় ছিল বহুবচন, নাটকের নাম ‘সর্পবিষয়ক গল্প’। একুশে পদক, বাংলা একাডেমি ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত ড. সেলিম আল দীন ২০০৮ সালের আজকের দিনে মারা যান। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশেই তাকে সমাহিত করা হয়।
