বাড়তি রফতানিতে কমে এল মজুদ

দীর্ঘমেয়াদি মূল্যবৃদ্ধির মুখে মালয়েশীয় পাম অয়েল

বণিক বার্তা ডেস্ক

নভেল করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারী মালয়েশিয়ার পাম অয়েল শিল্পকে টালমাটাল পরিস্থিতিতে ফেলেছে। একদিকে সীমিত হয়ে এসেছে উৎপাদন, অন্যদিকে বাড়তির দিকে রয়েছে পণ্যটির রফতানি। পরিস্থিতিতে মালয়েশিয়ায় পাম অয়েলের মজুদ ১৩ বছরের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে এসেছে, যা মালয়েশীয় পাম অয়েলের দাম বাড়িয়ে ২৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে উন্নীত করেছে। বর্তমান বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে খাতসংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, মজুদ কমার লাগাম টেনে ধরা সম্ভব না হলে মালয়েশীয় পাম অয়েলের দামে বিদ্যমান ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দীর্ঘমেয়াদে বজায় থাকতে পারে। খবর স্টার অনলাইন রয়টার্স।

মালয়েশিয়ান পাম অয়েল বোর্ডের (এমপিওবি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদায়ী বছরের ডিসেম্বরে মালয়েশিয়ায় সব মিলিয়ে ১৩ লাখ ৩০ হাজার টন অপরিশোধিত পাম অয়েল উৎপাদন হয়েছে। এক মাসের ব্যবধানে দেশটিতে পণ্যটির উৎপাদন কমেছে ১০ দশমিক শতাংশ। মালয়েশিয়ায় পাম অয়েল উৎপাদনে মন্দা ভাবের সূচনা হয় ২০২০ সালে। করোনা মহামারীতে লকডাউন শুরু হলে দেখা দেয় তীব্র শ্রমিক সংকট। ওই সময় অনেক বাগান কারখানার কার্যক্রম সীমিত কিংবা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। সেই ধাক্কা কাটিয়ে এখনো মহামারী-পূর্ববর্তী অবস্থানে ফিরতে পারেনি মালয়েশিয়ার পাম অয়েল উৎপাদন খাত।

তবে উৎপাদন সীমিত হয়ে এলেও মালয়েশিয়া থেকে পাম অয়েল রফতানি চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। এমপিওবির তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে মালয়েশিয়া থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ১৬ লাখ ২০ হাজার টন পাম অয়েল রফতানি হয়েছে। মাসের ব্যবধানে মালয়েশিয়ার পাম অয়েল রফতানিতে প্রায় এক-চতুর্থাংশ বা ২৪ দশমিক শতাংশ প্রবৃদ্ধির দেখা মিলেছে।

এমপিওবির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত মাসে মালয়েশিয়া থেকে উৎপাদনের তুলনায় বাড়তি পাম অয়েল রফতানি হয়েছে, যা জোগান দিয়েছে আগের মজুদ। স্বাভাবিকভাবে কমে এসেছে মালয়েশীয় পাম অয়েলের মজুদ। ধারাবাহিকতায় গত ডিসেম্বরে মালয়েশিয়ায় পাম অয়েলের সমাপনী মজুদ আগের মাসের তুলনায় ১৯ শতাংশ কমে ১২ লাখ ৬০ হাজার টনে নেমে এসেছে। ২০০৭ সালের জুলাইয়ের পর এটাই মালয়েশিয়ায় পাম অয়েলের সর্বনিম্ন মজুদের রেকর্ড।

সীমিত উৎপাদনের বিপরীতে রফতানি চাঙ্গা থাকার বিষয়ে খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিসেম্বরে বিনা শুল্কে পাম অয়েল রফতানি করেছে মালয়েশিয়া। কারণে ইন্দোনেশিয়া কিংবা অন্যান্য দেশের তুলনায় মালয়েশীয় পাম অয়েলের দাম ছিল তুলনামূলক কম। সুযোগ লুফে নিয়েছেন আমদানিকারকরা, যা বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ উৎপাদনকারী রফতানিকারক দেশ মালয়েশিয়ার পাম অয়েল রফতানি চাঙ্গা করে তুলেছে।

করোনা মহামারীর মধ্যে সীমিত উৎপাদনের বিপরীতে বাড়তি রফতানি মালয়েশিয়ার বাজারে পাম অয়েলের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধি ঘটিয়েছে বলে জানান এমপিওবি চেয়ারম্যান দাতুক জাযলান ইয়াকুব। তিনি বলেন, করোনা মহামারী, লকডাউন প্রতিকূল আবহাওয়া বিদায়ী বছরে পাম অয়েল উৎপাদনে রীতিমতো ধস নামিয়েছে। এর বিপরীতে রফতানি চাহিদা চাঙ্গা থাকায় পাম অয়েলের দাম বেড়ে ২৫ বছরের সর্বোচ্চে উন্নীত হয়েছে।

বুরসা মালয়েশিয়া ডেরিভেটিভস এক্সচেঞ্জে গত ২৩ ডিসেম্বর ভবিষ্যতে সরবরাহ চুক্তিতে প্রতি টন পাম অয়েলের দাম হাজার ৮৫৪ রিঙ্গিতে (স্থানীয় মুদ্রা) উন্নীত হয়, যা ২৫ বছরের সর্বোচ্চ। বর্তমানে দেশটির বাজারে প্রতি টন পাম অয়েল হাজার ৮০০ রিঙ্গিতের আশপাশে বিক্রি হচ্ছে। মূল্যবৃদ্ধির ধারা চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকজুড়ে (জানুয়ারি-মার্চ) বজায় থাকতে পারে বলে জানিয়েছে এমপিওবি। বিষয়ে দাতুক জাযলান ইয়াকুব বলেন, শীত মৌসুমে পাম অয়েল জমে যায়। ফলে শীতে পণ্যটির রফতানি দাম দুটোই কম থাকে। এবার পরিস্থিতি পুরোপুরি উল্টো। শুল্কমুক্ত সুবিধার কারণে শীতকালে রফতানি চাঙ্গা থাকায় মালয়েশিয়ায় পাম অয়েলের মজুদ ১৩ বছরের বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে কমে এসেছে। দাম বেড়েছে রেকর্ড পরিমাণ। পরিস্থিতি দ্রুত না বদলালে কিংবা উৎপাদন বাড়ানো না গেলে মালয়েশীয় পাম অয়েলের দামে এমন চাঙ্গা ভাব আরো কিছুদিন বহাল থাকতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন