মিল মালিকরা আগেই ধান কিনে মজুদ করে রাখেন। যে কারণে চালের দাম বাড়লেও কৃষক তার মূল্য পান না। ধান চাষে খরচের তুলনায় কম দামে বিক্রি করতে হয়, তাই কৃষক ধান চাষ থেকে সরে আসছেন। সরকার যে ধান সংগ্রহ করে সেখানে সবাই অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না। তাই কম দামে মিল মালিকের কাছে বিক্রি করতে হয়।
গতকাল অনলাইন প্লাটফর্মে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্ম, বাংলাদেশ-এর পক্ষ থেকে আয়োজিত ‘চালের দাম বাড়ছে কেন? কার লাভ, কার ক্ষতি’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংলাপে এসব তথ্য উঠে আসে। উত্তরাঞ্চল, দক্ষিণাঞ্চল ও হাওড় অঞ্চলের মোট নয়টি জেলা থেকে প্রায় ৪০ জন কৃষক, কৃষাণী এবং কৃষি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি এ মতামত তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য মুহা. ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক।
এসডিজি প্লাটফর্মের আহ্বায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সংলাপের সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ধান উৎপাদনের সঠিক প্রাক্কলনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এ প্রাক্কলনের ওপর ভিত্তি করেই নীতিনির্ধারকরা সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। সরকারের দান-চাল মজুদ করার সক্ষমতা কম হওয়ায় কারণে বেশির ভাগ সময়ই সরকারের পক্ষে বাজার প্রভাবিত করার সুযোগ থাকে না। এছাড়া তুলনামূলক ছোট কৃষকের কাছে থেকে ধান সংগ্রহ করতে হবে। ছোট ও মাঝারি কৃষকের টিকে থাকার সক্ষমতা কম, তাই তাদের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবির বলেন, উৎপাদনের ভুল প্রাক্কলন নিয়ে সংলাপে উপস্থিত বক্তাদের মন্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন। উৎপাদনের প্রাক্কলন সঠিক ছিল। খাদ্য সংকটের সম্ভাবনা আছে বলে মনে করেন না।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে কৃষি খাতে যতখানি উন্নতি হয়েছে, ততখানি কৃষকের উন্নতি হয়নি। অন্যদিকে উৎপাদনের প্রাক্কলনেও সমস্যা রয়েছে। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে রক্ষা করাই এ খাতের মূল চ্যালেঞ্জ। আগামী বোরো ধান চাষের পরবর্তী সময়ে খাদ্য পরিস্থিতিকে নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে। বর্তমানে চালের বাড়তি দাম যেন উৎপাদকের কাছে পৌঁছতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। চালের দাম যেন নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি না করে তা খেয়াল রাখতে হবে।
ধান চাষে লাভবান না হওয়ায় ধানের উৎপাদন ক্রমাগত কমছে বলে জানান চ্যানেল আইয়ের বার্তা প্রধান ও পরিচালক শাইখ সিরাজ। সরকারি গুদামে ছোট কৃষকদের ফসল সংরক্ষণ করার সুযোগ করে দিতে হবে যেন ফসলের সঙ্গে সঙ্গে কৃষককে অল্প দামে ফসল বিক্রি না করতে হয়।
এছাড়া বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিআইডিএস) সাবেক গবেষণা পরিচালক ড. এম আসাদুজ্জামান, সাবেক মহাপরিচালক ড. কাজী শাহাবুদ্দিন, বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, বাংলাদেশ অটো রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে এম খোরশেদ আলম খান, বাংলাদেশ রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহ আলম বাবু প্রমুখ।