কীটপতঙ্গ আক্রমণের শঙ্কা সরকারি খাদ্যগুদামে

জেসমিন মলি

দেশের খাদ্যগুদামগুলোয় খাদ্য সংরক্ষণের উপযুক্ত পরিবেশ নেই বলে মনে করছেন নীতিনির্ধারকরা। সংরক্ষণের আধুনিক ব্যবস্থার অভাবে এসব গুদামে কীটের আক্রমণের শঙ্কা করছেন তারা। বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বিভিন্ন বৈঠকেও একাধিকবার আলোচনা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের সরকারি খাদ্যগুদামের অধিকাংশ স্থাপনাই বেশ পুরনো। এসব খাদ্যগুদামে খাদ্যশস্য সংরক্ষণের উপযুক্ত পরিবেশের অভাবও রয়েছে। আবার দীর্ঘমেয়াদে খাদ্য সংরক্ষণ করতে গুদামে যেসব আধুনিক ব্যবস্থার প্রয়োজন, সেটিরও ঘাটতি রয়েছে। ফলে এসব খাদ্যগুদামে কীটের আক্রমণের শঙ্কাও থেকে যায়। আবার সংরক্ষণের উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় বিভিন্ন সময়ে গুদামজাত খাবারের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এমনকি কীটনাশক ব্যবহারের জন্য এসব খাদ্যগুদামে সংরক্ষিত খাদ্যশস্য কটু গন্ধযুক্ত হয়ে পড়ার কথাও শোনা গিয়েছে একাধিকবার।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বিভিন্ন বৈঠকেও সরকারি খাদ্যগুদামে সংরক্ষিত খাদ্যের মান নিয়ে আপত্তি তুলেছেন একাধিক সংসদ সদস্য। খাদ্যগুদামের মান নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বৈঠকগুলোয় একই সঙ্গে গুদামে খাদ্য সংরক্ষণের উপযুক্ত পরিবেশ না থাকার বিষয়টিও উঠে এসেছে।

কমিটির পক্ষ থেকে সম্প্রতি সারা দেশের খাদ্যগুদামগুলোয় খাদ্যশস্য সংরক্ষণের উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতে মন্ত্রণালয়ের গৃহীত উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সংসদীয় কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে খাদ্যশস্য সংরক্ষণের উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতে গৃহীত নিজস্ব উদ্যোগ সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করে খাদ্য মন্ত্রণালয়।

ওই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে সারা দেশে মোট ৬৪৪টি স্থানীয় সংরক্ষণাগার (এলএসডি), ১২টি কেন্দ্রীয় সংরক্ষণাগার (সিএসডি), ছয়টি সাইলো, একটি ফ্লাওয়ার মিল একটি ওয়্যারহাউজ রয়েছে। এর মধ্যে ৫৯৬টি এলএসডি, ১২টি সিএসডি, পাঁচটি সাইলো ছাড়াও ফ্লাওয়ার মিল ওয়্যারহাউজ কার্যকর রয়েছে। এসব গুদামের বর্তমান ধারণক্ষমতা ২১ লাখ ৫৪ হাজার ৪২৯ টন হলেও কার্যকর ধারণক্ষমতা ২০ লাখ ২১ হাজার ৬০২ টন।

প্রতিবেদনে খাদ্যশস্য সংরক্ষণের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে কীটনাশক ব্যবহারের তথ্যও উঠে এসেছে।  প্রতিবেদনে বলা হয়, খাদ্যশস্যে যাতে কীটের আক্রমণ না ঘটে সেজন্য প্রটোকল অনুযায়ী কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়। সদ্যসমাপ্ত বছরের থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশের খাদ্যগুদামগুলোয় মোট ৩৩৪ লিটার পিরিমিফস মিথাইল (তরল) কীটনাশক এবং প্রতিষেধক ব্যবস্থা হিসেবে ৪২১ কেজি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড (ট্যাবলেট) ব্যবহার করা হয়।

এতে আরো জানানো হয়, গুদামে সংরক্ষিত খাদ্যশস্যে কীটনাশক ব্যবহারের বিষয়টি তদারকির জন্য প্রত্যেক উপজেলা বা স্থাপনায় মন্ত্রণালয়ের একজন করে কারিগরি খাদ্য পরিদর্শক রয়েছে। তিনি প্রতি মাসে দুবার সংরক্ষিত খাদ্যশস্যের মান পরীক্ষা করেন। এছাড়া উপজেলা কারিগরি খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিজ আওতাভুক্ত বিভিন্ন এলএসডি, সিএসডি বা সাইলো প্রতি মাসে কমপক্ষে ১৫ দিন গিয়ে কারিগরি খাদ্য পরিদর্শকের কাজ তত্ত্বাবধান করেন। মজুদ খাদ্যশস্যের কীট মান নিয়ন্ত্রণের জন্য রুটিনমাফিক গুদামগুলো পরিদর্শন করেন আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক দপ্তরে কর্মরত সহকারী রসায়নবিদ। সে পরিদর্শনের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করেই কীটনাশক ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এছাড়া গুদামজাত খাদ্যশস্য যাতে যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব হয়, সেজন্য জিপি শিট ব্যবহার করা হয়।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশের আবহাওয়ায় আর্দ্রতা কম তাপমাত্রা বেশি। ধরনের আবহাওয়া কীটপতঙ্গ জন্মানোর জন্য আদর্শ পরিবেশ। দেশের গুদামগুলো বর্তমানে বেশ পুরনো হয়ে পড়েছে। কারণে এসব গুদামে সহজেই পোকামাকড়ের আক্রমণ হয়ে থাকে। এজন্য খাদ্যশস্য সংরক্ষণে বিশেষ যত্ন নেয়া হয়, যাতে পোকামাকড়ের উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এজন্য গুদামে খাদ্য সংরক্ষণের জন্য জিপি শিট ব্যবহারসহ নানা প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেয়া হয়ে থাকে। 

তারা আরো জানান, চলতি অর্থবছরে খাদ্যগুদামগুলোয় ব্যবহারের জন্য এক হাজারটি জিপি শিট সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে চারশ জিপি শিট ইস্যুও করা হয়েছে।

কর্মকর্তারা বলছেন, খাদ্যশস্য মজুদে সনাতনী পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। সেজন্য আধুনিক সাইলো তৈরির উদ্যেগ নেয়া হয়েছে। এসব সাইলোয় খাদ্যশস্য মজুদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ থাকে। আবার স্থাপনা নির্মাণে বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। ফলে এসব সাইলোয় কীটপতঙ্গ জন্মানোর সুযোগ কম। এছাড়া বাতাসের আর্দ্রতা উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণের জন্য উপযুক্ত কারিগরি সক্ষমতার ব্যবস্থা নেয়া থাকে। 

সার্বিক বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব . মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বণিক বার্তাকে বলেন, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দুই মৌসুমে খাদ্যশস্য সংগ্রহ করা হয়। সেসব খাদ্যশস্যই দীর্ঘমেয়াদে সংরক্ষণ করা হয়। দেশে খাদ্যগুদামের অবকাঠামোগুলো পুরনো। ফলে মাঝেমধ্যে সংরক্ষিত খাদ্যের মানে তারতম্য দেখা দেয়। তবে আমরা চেষ্টা করি খাদ্যশস্য যাতে নিরাপদ রাখা যায়। এছাড়া খাদ্য সংরক্ষণে আধুনিক সাইলো নির্মাণের উদ্যেগ নেয়া হয়েছে। আশা করা যায়, দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চলতি বছরের মধ্যেই এসব সাইলোয় খাদ্যশস্য মজুদ করা সম্ভব হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন