উচ্চশিক্ষা

নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে গড়ে ওঠা সিইটিএল

সাইফ সুজন

দক্ষ প্রশিক্ষিত একাডেমিক লিডারশিপ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০১৪ সালে দেশের ছয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু করা হয় সেন্টার অব এক্সিলেন্স ইন টিচিং অ্যান্ড লার্নিং (সিইটিএল) প্রতিষ্ঠার পর কয়েক বছর সিইটিএলের উদ্যোগে সক্রিয়ভাবেই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। যদিও কয়েক বছর ধরে অনেকাংশেই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে গড়ে ওঠা সিইটিএলগুলোর অধিকাংশই।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সহযোগিতায় ছয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু করা হয় সিইটিএল। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। চালু হওয়ার পর সিইটিএলের উদ্যোগে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্যোগ নেয়া হয়। শিক্ষক প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে কারিগরি সহায়তা দেয় ব্রিটিশ কাউন্সিল। এক পর্যায়ে সেন্টার এর জনবল কাঠামো রাজস্ব খাতেও আনা হয়। প্রতি বছর এসব সেন্টার পরিচালনার জন্য অর্থ বরাদ্দও দেয়া হয়।

যদিও সংশ্লিষ্টদের মতে, কেন্দ্রীয়ভাবে পর্যবেক্ষণ না থাকা সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছার অভাবে লক্ষ্য অনুযায়ী কাজ করতে পারছে না সিইটিএলগুলো। প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিইটিএলের পরিচালক পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক . সৈয়দ হাফিজুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, যে দর্শনকে সামনে রেখে সিইটিএল চালু করা হয়েছিল, সেটি অনুধাবনের ক্ষেত্রে একটি বড় শূন্যতা দেখা যাচ্ছে। কেন্দ্রীয়ভাবে তদারকি না থাকায় বিচ্ছিন্নভাবে কিছু কার্যক্রম চললেও লক্ষ্য থেকে অনেক দূরে থেকে গেছে এসব সিইটিএল। যদিও উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সিইটিএলের মাধ্যমে দক্ষ প্রশিক্ষিত একাডেমিক নেতৃত্ব তৈরি করা হচ্ছে। আমাদের দেশেও একই ধরনের সুযোগ রয়েছে। এজন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের পাশাপাশি সচেতনতাও বাড়ানো দরকার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাবি, জাবি সিইটিএল কিছু কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। খুবির সিইটিএল কয়েক বছর আগে ভালো কাজ করলেও সম্প্রতি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। আর রাবি চবির সিইটিএলের কার্যক্রম নেই বললেই চলে।

এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সিইটিএলের। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শুধু নামেমাত্রই চালু রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। কয়েক বছর ধরে কোনো ধরনের কর্মসূচিই নেয়া হয়নি সেন্টার থেকে। প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সিইটিএলের পরিচালক অধ্যাপক . মোহাম্মদ নাসিম হাসান বলেন, একটি সেন্টার পরিচালনার জন্য যে অর্থ জনবল প্রয়োজন, এর কোনোটিই আমাদের এখানে নেই। শুরুর দিকে কয়েক বছর অর্থ বরাদ্দ দেয়া হলেও গত দুই অর্থবছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় বাজেটে সেন্টারের জন্য কোনো অর্থই বরাদ্দ রাখা হয়নি। বরাদ্দ দেয়া হয়নি কোনো অফিস কক্ষ। তাহলে একটি সেন্টার কীভাবে কার্যক্রম চালাবে?

তবে শিক্ষক প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিইটিএল। পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার শিক্ষককে প্রশিক্ষণের আওতায় এনেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। সিইটিএলের উদ্যোগে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশ কর্মকর্তাকেও। প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিইটিএলের পরিচালক অধ্যাপক . সাবিতা রিজওয়ানা চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, আমরা শিক্ষক প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে ছয়টি মডিউল অনুসরণ করি। এর মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ের প্রশিক্ষণগুলো শিক্ষকদের দেয়া হয়েছে। বর্তমানে গবেষণা বিষয়ক কিছু প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। শিক্ষকদের কাজে সহায়তার জন্য প্রায় ৩০০ কর্মকর্তাকেও এরই মধ্যে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হচ্ছে। বর্তমানে কভিড-১৯-এর কারণে শ্রেণীকক্ষের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এজন্য অনলাইনে পাঠদান মূল্যায়নের জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।

এদিকে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়া সিইটিএলগুলো পুনরায় গতিশীল করার কথা ভাবছে ইউজিসি। ইউজিসির কর্মকর্তারা জানান, প্রতিষ্ঠার পর সিইটিএলগুলোকে রাজস্ব খাতে নিয়ে আসে ইউজিসি। আর কারিগরি সহায়তা দেয় ব্রিটিশ কাউন্সিল। তবে সিইটিএলগুলোর কার্যক্রম ইউজিসি থেকে পর্যবেক্ষণ করা হতো না। সম্প্রতি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিইটিএলের পরিচালক ইউজিসির স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং, কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স বিভাগকে চিঠি দিয়ে সিইটিএলগুলোকে কেন্দ্রীয়ভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য অনুরোধ জানান। বিষয়টি আমলে নিয়ে বিষয়ে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে ইউজিসি।

ইউজিসির স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং, কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স বিভাগের কার্যক্রমের বিষয়গুলো দেখভাল করেন সদস্য অধ্যাপক . বিশ্বজিৎ চন্দ। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, আমি নিজেও বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালে সিইটিএলের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। নিষ্ক্রিয়তার বিষয়টি অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তবে বর্তমানে আমরা বিষয়ে কাজ করছি। আমরা সিইটিএলগুলোকে শুধু সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সেগুলোকে শিক্ষক প্রশিক্ষণের একটি রিজিওনাল হাবে রূপান্তর করার কথা ভাবছি। শিগগিরই বিষয়ে এক ধরনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি সিইটিএল খোলা হয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। পর্যন্ত বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা তিনটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান সিইটিএল খুলেছে। এর মধ্যে রয়েছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, গ্রিন ইউনিভার্সিটি ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস (ইউল্যাব) সরকারি কোনো পৃষ্ঠপোষকতা না থাকা সত্ত্বেও তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিইটিএল সক্রিয়ভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রশিক্ষণ প্রদান করছেন শিক্ষকদের।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন