২০২১ সালের প্রত্যাশা

অর্থনৈতিক উন্নয়নে ‘গেম চেঞ্জার’ হবে মাতারবাড়ী

সালমান এফ রহমান, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প বিনিয়োগ উপদেষ্টা

২০২০ সালে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রকল্প পদ্মা সেতুর বাহ্যিক অবকাঠামো সংযুক্ত হয়েছে। আর বছর আমাদের চোখ রাখতে হবে মাতারবাড়ী বন্দর প্রকল্পের দিকে। কয়েক দিন আগে বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা ঘটে গেছে। মাতারবাড়ীতে প্রথমবারের মতো ভিড়েছে মাদার ভেসেল। প্রকল্পটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গেম চেঞ্জার হবে বলে আমার বিশ্বাস।

নতুন বছরে বাংলাদেশের প্রথম চ্যালেঞ্জ হবে গণটিকাদান কর্মসূচি। কভিড-১৯ মহামারীতে পর্যুদস্ত অর্থনীতি জনস্বাস্থ্য স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে টিকাদান কর্মসূচি সফল করতে হবে। টিকাদানের মাধ্যমে দেশের বেশির ভাগ মানুষের মধ্যে প্রতিরোধ সক্ষমতা জন্মানো গেলে মহামারী অবসানে সময় লাগবে না। আশার খবর হলো, দক্ষিণ এশিয়া তো বটেই, বিশ্বের বহু দেশের তুলনায় বাংলাদেশ এক্ষেত্রে এগিয়ে আছে। অক্সফোর্ড  অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত টিকা বাংলাদেশ প্রথম ধাপেই পাবে। টিকা এরই মধ্যে যুক্তরাজ্যে ব্যবহারের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ভারতে অনুমোদন দেয়ার পর বাংলাদেশও অনুমোদন দিয়ে দিতে পারে। যেহেতু অতীতেও আমাদের গণটিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা রয়েছে, আশা করি এবারের কর্মসূচি বাস্তবায়নও কঠিন হবে না।

২০২১ সালে শেয়ারবাজার আয়তন কলেবরে আরো বড় হবে। করোনা মহামারীর মধ্যেও সম্প্রতি আমাদের শেয়ারবাজারের টার্নওভার দেড় হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করেছে। রবির মতো কোম্পানি বাজারে এসেছে। এছাড়া সুকুক বন্ডের মাধ্যমে বন্ডের বাজারও তৈরি হয়েছে। সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনে যে নতুন নেতৃত্ব এসেছেন, তারা শুধু বাজারবান্ধবই নন, শক্তভাবে বাজারে শৃঙ্খলা আনতেও বদ্ধপরিকর। এসবের ফলই আমরা ২০২১ সালে পাব। আমার দৃঢ় বিশ্বাস শেয়ারবাজারের কলেবর আরো বড় হবে।

২০২০ সালে করোনা মহামারীর মধ্যেও ব্যবসা বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নে আমরা বেশকিছু কাজ করতে সক্ষম হয়েছি। বিশেষ করে সেবা সহজীকরণ অর্থাৎ ব্যবসা চালু করার দিক দিয়ে আমরা অটোমেশনে এসেছি। জমি নিবন্ধনে সময় কমিয়ে আনার বাধ্যবাধকতা চালু করে তা বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এখন খুব অল্প সময়েই অনলাইনে ঢাকা চট্টগ্রামে জমি নিবন্ধন করা সম্ভব। বিনিয়োগকারী, বিশেষ করে সংখ্যালঘু বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় আইনগত সংস্কার এনেছি। এনফোর্সিং কনট্রাক্ট বিভাগে আমরা বছর দারুণ অগ্রগতি অর্জন করতে পারব। এছাড়া দেউলিয়াত্বের প্রক্রিয়ার বিষয়েও কিছু সংস্কার আনার আশা করছি। সর্বোপরি সবচেয়ে বড় যে পরিবর্তনটি আমরা এনেছি, তা হলো মানসিকতার পরিবর্তন। সরকারের রাজনৈতিক নেতৃত্ব থেকে শুরু করে আমলাতান্ত্রিক পর্যায় পর্যন্ত এক ধরনের মানসিকতা এসেছে যে ব্যবসা করার প্রক্রিয়াগত জটিলতা সহজ করতে হবে। ২০২২ সাল নাগাদ ডুইং বিজনেস সূচকে বাংলাদেশকে ডাবল ডিজিটে নিয়ে আসতে পারব বলে আমরা খুবই আত্মবিশ্বাসী।

অবকাঠামোগত দিক থেকে আমি অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে আশাবাদী। সারা দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে সফল হবে বলে আমার বিশ্বাস। নতুন বছর আমার বিশেষ আশা বাংলাদেশের তরুণদের নিয়ে। বহু তরুণ ফ্রিল্যান্সার বাংলাদেশে রয়েছেন, যাদের মধ্যে প্রচুর সম্ভাবনা আছে। আমরা ২০২০ সালে তাদের নিবন্ধন করিয়েছি, যার ফলে বিদেশ থেকে অর্থ আনতে এবং দেশে ঋণ বা সরকারি সুবিধা পেতে তাদের সমস্যা হবে না। আমি আশা করি, দক্ষ জনশক্তির মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং খাত আয়ের দিক থেকে তৈরি পোশাক শিল্পকেও একদিন ছাড়িয়ে যাবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন