অক্সফোর্ডের পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন বেড়েছে!

বণিক বার্তা অনলাইন

করোনা লকডাউনের মধ্যে অনলাইনে অনুষ্ঠিত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে তদন্ত করেছে কর্তৃপক্ষ।  এ ধরনের তদন্ত এর আগেও হয়েছে। তবে এবার অভিযুক্তের সংখ্যাটি গতবারের চেয়ে দ্বিগুণ। 

গত মার্চের শেষ নাগাদ প্রথম করোনভাইরাস লকডাউন আরোপের পরে নামিদামি অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ পরীক্ষা বাতিল হয়ে যায়।  অক্সফোর্ডও এর ব্যতিক্রম ছিল না।  বিখ্যাত এ উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা বাতিল হওয়া পরীক্ষায় স্বয়ংক্রিয় পাস নম্বর পেয়েছেন।  তবে আন্ডারগ্র্যাজুয়েটদের শেষ বর্ষের এবং পাশাপাশি কিছু স্নাতকোত্তর পরীক্ষা ওপেন-বুক মূল্যায়নের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়েছে।  এতে করে পরীক্ষায় প্রতারণার সুযোগ প্রসারিত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড ডেইলি মেইলের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করার অভিযোগে সন্দেহভাজন ৫৫ জনের ব্যাাপারে তদন্ত করেছে কর্তৃপক্ষ।  গত বছর একই সময় এই সংখ্যাটি ছিল ২৬।

বাকিংহামের সেন্টার ফর এডুকেশন অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট রিসার্চের (সিইইআর) পরিচালক উচ্চশিক্ষা বিশেষজ্ঞ প্রফেসর অ্যালান স্মিথার্স বলেন, এই পরিসংখ্যান প্রমাণ করে কিছু শিক্ষার্থী ‘অন্যায্য সুবিধা’ নেয়ার চেষ্টা করেছিলেন।  প্রত্যক্ষ নজরদারির মধ্যে পরীক্ষাই (ইনভিজিলেটেড) এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয় এড়ানোর ‘সর্বোত্তম উপায়’।

তথ্যের স্বাধীনতা আইনের আওতায় অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, এ বছর মূল্যায়নের সময় ৩৬ জন শিক্ষার্থীর বিষয়ে চৌর্যবৃত্তির (প্লাজিয়ারিজম) সন্দেহে তদন্ত করা হয়েছে।

অপর ১৯ জনকে ওপেন-বুক মূল্যায়নের সময় অসদুপায় অবলম্বনে জড়িত থাকার সন্দেহে তদন্তের মুখোমুখি করা হয়।  এই পরীক্ষা পদ্ধতিটি প্রচলিত পরীক্ষার চেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে নেয়া হয় এবং পরীক্ষার্থীরা নিজ নিজ বাড়িতে বা আবাসিক হলে একা বসে পরীক্ষা দিয়ে থাকেন।  এসময় পরীক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তক, নোট এবং অন্যান্য পাঠ সহায়িকার সহায়তা নেয়ার অনুমতি দেয়া হয়।

এই বছর সর্বমোট ১১ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে নিয়ম ভঙ্গের প্রমাণ পাওয়া গেছে এবং তাদের নির্ধারিত শাস্তিও দেয়া হয়েছে। এছাড়া আরো ১৬ জন তদন্তাধীন।  তবে ওপেন-বুক মূল্যায়নে অংশ নেয়া কোনো শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

গত বছর একই সময়ে অসদুপায় অবলম্বনের মাত্র ২৬টি সন্দেহভাজন ঘটনা ছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত মাত্র তিনজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয় এবং তাদের শাস্তি দেয়া হয়।  গত বছর এসব পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্রের বিষয়ে চৌর্যবৃত্তির (প্লাজিয়ারিজম) অভিযোগ ছিল। ওই সময় ওপেন-বুক মূল্যায়নে প্রতারণায় কেউ সন্দেহভাজনের তালিকায় ছিলেন না। কারণ এই পদ্ধতিটি এবছরই প্রথমবারের মতো অক্সফোর্ডে প্রবর্তন করা হয়েছে।

অক্সফোর্ডের তথ্য-উপাত্তে দেখা যাচ্ছে, গত বছর সন্দেহভাজনদের মধ্যে নয় জনের উত্তরপত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের আচরণ ও শৃঙ্খলা প্যানেলের পর্যালোচনার জন্য পাঠানো হয়েছিল।  আর ছয় শিক্ষার্থীকে শূন্য দেয়া হয়েছিল। অবশ্য পরে তাদের উত্তরপত্র পুনরায় দাখিল করার অনুমতি দেয়া হয়। 

অধ্যাপক স্মিথার বলেন, কভিড বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিকল্প খুঁজতে বাধ্য করেছে। কিন্তু অক্সফোর্ডের ডাটা দেখাচ্ছে যে, এটি পরীক্ষার্থীদের পক্ষে অন্যায্য সুবিধা নিতে চেষ্টা করার সুযোগ উন্মুক্ত করে।  এটি আফসোসের ব্যাপার।  তবে একটা ভালো ডিগ্রি অর্জনের প্রচণ্ড চাপও কিন্তু শিক্ষার্থীদের এ ধরনের আচরণ করতে উৎসাহিত করতে পারে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, এ বছর ১ হাজারের ১০০-এর বেশি প্রশ্নপত্রের জন্য ২৩ হাজারের বেশি অনলাইন এক্সাম সিটিং হয়েছে।  সব শিক্ষার্থীকে ওপেন-বুক এবং ক্লোজ-বুক অনলাইন পরীক্ষার জন্য অনার কোড সরবরাহ করা হয়েছে।  আমরা খুব খুশি যে, অধিকাংশ শিক্ষার্থী নিয়ম মেনে পরীক্ষা দিয়েছে।ন  কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা রয়েছে।  খুব কম সংখ্যক শিক্ষার্থীই একাডেমিক অসদাচরণ করেছে বলে প্রমাণিত হয়েছে এবং সে অনুযায়ী তাদের শাস্তিও দেয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, এই প্রথম আমরা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বই খুলে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ দিয়েছি। এই অভিজ্ঞতা থেকে যা শিখেছি পরবর্তীতে তা কাজে লাগানো হবে।

সূত্র: ডেইলি মেইল

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন