বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত দেশের দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক পরিকল্পনার অন্যতম অগ্রাধিকারমূলক খাত। কভিড-১৯ অতিমারীর পরিপ্রেক্ষিতে এবং সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অভিজ্ঞতার আলোকে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বিদ্যুৎ খাত নিয়ে সামগ্রিক অবস্থান ও কৌশলগুলো পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন আছে। গত এক দশকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমাদের সক্ষমতা বেড়েছে, গ্রাহকের সংখ্যাও বেড়েছে। তার পরও আর্থিক দায় বাড়ছে, বাড়ছে ভর্তুকি ও ঋণের চাপ। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে উন্নত সঞ্চালন ও বিতরণ প্রক্রিয়া অপরিহার্য। জ্বালানি মিশ্রণ বহুমুখীকরণের ওপর বিশেষ করে কয়লা ও তেলভিত্তিক জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। সেই সঙ্গে অদক্ষতা, দুর্নীতি ও অসংগতি ইত্যাদি বন্ধের দিকেও নজর দেয়া প্রয়োজন।
গতকাল ‘অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বিদ্যুৎ খাত: ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা ও উদ্যোগসমূহ’
শীর্ষক ভার্চুয়াল সংলাপে এমন বক্তব্য উঠে আসে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) আয়োজনে এ বিশেষজ্ঞ সংলাপটি অনুষ্ঠিত হয়। সংলাপে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে টেকসই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়ে ড. ফাহমিদা অনুষ্ঠানটির সূচনা করেন।
সংলাপে সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মূল প্রতিবেদনে বলেন, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সময়কালে (২০২১-২৫) বিদ্যুৎ খাত একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় অতিক্রম করবে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অভিজ্ঞতার আলোকে, সেই সঙ্গে কভিড-পরবর্তী বাস্তবতার নিরিখে বিদ্যুৎ খাতের পরিকল্পনাগুলো সাজানো প্রয়োজন। দেশের শতকরা প্রায় ৩৭ ভাগ বিদ্যুৎকেন্দ্রে এখনো ৪০ শতাংশের কম দক্ষতা মাত্রায় বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। অদক্ষতার বিষয়ে নজর দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে জ্বালানি মিশ্রণের ক্ষেত্রে বেশকিছু জরুরি পদক্ষেপ নেয়া অত্যন্ত প্রয়োজন, বিশেষত নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
খাতভিত্তিক বিশ্লেষণকে গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়, আবাসিক ও শিল্প খাতের চাহিদাকে এবং ভবিষ্যৎ চাহিদার শ্লথ প্রবৃদ্ধিকে বিবেচনায় রেখে চাহিদা প্রক্ষেপণ করতে হবে। সাম্প্রতিককালে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন তাড়াহুড়ো না করে সুস্থিরভাবে পরিকল্পনা করার সময় সরকারের হাতে রয়েছে। জ্বালানি মিশ্রণের জন্য অদক্ষ ও তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলোকে বন্ধ করা এবং কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্পকে গুরুত্ব দেয়ার কথাও উঠে আসে।