আমরা কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারিদের (সিএমএসএমই) খুব ভালোবাসি এবং তাদের জন্য সবসময়ই কথা বলি, যাতে তাদের জন্য কিছু করা যায়। সংগত কারণেই এ খাত স্বল্প বিনিয়োগে কর্মসংস্থান বাড়াতে, জিডিপিতে অবদান রাখতে, স্থানীয় পণ্যের ব্যবহার এবং মূল্য সংযোজনে ভূমিকা রাখে। রিটেইল ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে এ খাত উৎপাদিত পণ্যের বিপণনে সর্বোপরি গ্রামীণ অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। কুটির আর মাইক্রোর অবস্থান অবশ্য একটু ভিন্ন। কারণ এরা সাধারণত ইনফরমাল, ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে উপযুক্ত নয়। কারণ এদের বেশির ভাগের ট্রেড লাইসেন্স নেই। ট্রেড লাইসেন্স পেতে যে দলিলাদির দরকার, তা সবার থাকে না। মূলত এ খাত এনজিও বা মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নেয়, যদিও সুদহার বেশি কিন্তু নিয়মকানুন সহজ এবং ঋণের পরিমাণ খুবই অল্প। ক্ষুদ্র ও মাঝারিদের অবস্থা কিছুটা ভিন্ন। তাদের বিনিয়োগ ক্ষমতাও বেশি, তাই অনেকটাই ফরমাল এবং নিয়মকানুন মেনে উদ্যোগে অংশগ্রহণ করে। ইদানীং যে বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রে তা হলো সিএমএসএমইদের জন্য একই ধরনের নীতি গ্রহণযোগ্য কিনা, কারণ তাদের অবস্থান, বিনিয়োগ ক্ষমতা, শ্রমিক নিয়োগ, লাইসেন্স গ্রহণ, বাজারজাত, বাণিজ্য ব্যবস্থাপনা তো ভিন্ন।
সিএমএসএমইদের ভালো করা এবং তাদের মাধ্যমে কী করে আরো নতুন উদ্যোক্তা বের করে নিয়ে আসা যায়, সে ব্যাপারে নীতিপ্রণেতা, গবেষক, অর্থনীতিবিদ সবার মতামত রয়েছে। অনেক সুপারিশও করা হয়েছে। যখন দেখা গেল কভিড-১৯-এর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এসব উদ্যোক্তা তাদের জন্য ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের একটি বড় অংশ ব্যবহার করতে সক্ষম হচ্ছেন না, তখন ব্যাপারটি নিয়ে ভাবনা বেড়ে গেল। অর্থ মন্ত্রণালয় সম্প্রতি কয়েক পর্বের আলোচনার আয়োজন করে। সবাই স্বীকার করেন যে এ প্রণোদনা প্যাকেজের যেটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে, তার অধিকাংশ মাঝারি উদ্যোক্তাদের কাছেই গেছে। কুটির ও মাইক্রো উদ্যোক্তারা কিছুটা হতাশাগ্রস্ত। এদের মধ্যে অনেকে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করে শেষে হাল ছেড়ে দিয়েছেন, ঋণ পাওয়ার আশা ত্যাগ করেছেন।
কেন এ অবস্থার সৃষ্টি হলো, বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত সার্কুলার এবং সার্কুলার লেটারসহ মোট প্রায় ৩০ ধরনের বেশি নির্দেশনা দিয়েছে গত এপ্রিল থেকে। সরকারের যথেষ্ট সদিচ্ছা রয়েছে বোঝা যায়। এ সার্কুলারগুলোর মাধ্যমে এ খাতকে প্রণোদনার সুযোগ দেয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থার কথা ঘোষণা দেয়া হয়েছে। দেখা যায় গত নভেম্বর পর্যন্ত যে ৪১ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ ব্যবহূত হয়েছে, তার বেশির ভাগই পেয়েছেন মিডিয়াম শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত উদ্যোক্তারা। নারী, যাদের কুটির ও মাইক্রো শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত বলা যায়, তারা পেয়েছেন ব্যাংকগুলো কর্তৃক প্রদত্ত ঋণের মাত্র ৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ, গড়ে জনপ্রতি অর্থের পরিমাণ ১ দশমিক ৫ লাখ টাকার মতো। অন্যদিকে কিছুটা বড় উদ্যোক্তারা পেয়েছেন ১৫ লাখ থেকে ১৫ দশমিক ৫ লাখ টাকার মতো করে।
কথা হচ্ছিল ঝিনাইদহ চেম্বারের প্রতিনিধির সঙ্গে। তিনি জানালেন, সরকারের প্রচেষ্টায় জেলা পর্যায়ে ডিস্ট্রিক্ট কমিশনারের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হয়েছিল। অতি ক্ষুদ্র শিল্পগুলো খুব আশা করে এ সভাগুলোয় উপস্থিত থেকেছে, ব্যাংকের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট ট্রেড লাইসেন্সও তৈরি করেছে কিন্তু তারা ঋণ পায়নি, তার অন্যতম বড় কারণ ৫০ হাজার টাকা ঋণের জন্য তারা যে কোলেটারেল চেয়েছে, তা প্রায় তার সারা জীবনের সম্পদ। এছাড়া তাদের অনেকের কাছে পর্যাপ্ত জমি, ঘরবাড়ি বন্ধক দেয়ার মতো মজুদ নেই। তাই তারা শেষ পর্যন্ত উদ্যোগ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেনি। অন্যদিকে শোনা যায়, কন্ট্রাক্টর, ঠিকাদার—যাদের যথেষ্ট প্রতিপত্তি রয়েছে এলাকায়—তারা ঋণের সিংহভাগ নিয়ে গেছেন, কাজেই ক্ষুদ্রদের জন্য এ সাবসিডাইজড ঋণের আর কিছু বাকি নেই। এ পরিস্থিতিতে স্থানীয় প্রতিনিধি, যারা এ কুটির, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য কিছু করতে চেয়েছেন, তারাও হাল ছেড়ে দিয়েছেন। এ রকম পরিস্থিতিতে তাহলে এত যে আলোচনা, এত লেখালেখি, দেনদরবার, অ্যাডভোকেসি, তার কোনো দাম রইল না।
বাগেরহাট চেম্বারের প্রতিনিধি একই সুরে কথা বললেন। ওখানকার নারী উদ্যোক্তারা বিশেষ সমস্যায় পড়েছেন। এতদিন কিছুটা আশায় বুক বেঁধেছিলেন, কিন্তু এখন আর তার প্রয়োজন নেই। মূলত বন্ধক সম্পত্তি, গ্যারান্টর সবচেয়ে বড় সমস্যা। আমি জানতে চাইলাম চেম্বারগুলো তো গ্যারান্টর হিসেবে কাজ করতে পারে। তারা জানালেন, সে চেষ্টাও করা হয়েছে কিন্তু ঋণের অর্থ আর পাওয়া হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক অবশ্য একটি ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম ঘোষণা করেছে, তবে সুদহার, বন্ধকি নীতি কী রকম হবে তা এখনো নির্ধারিত হয়নি। শোনা যায় প্রায় আটটি ব্যাংক এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। দেখা যাক এদের আর কতদিন অপেক্ষা করতে হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রণোদনা প্যাকেজের গাইডলাইনে বলা হয়েছে, সিএমএসএমইদের জন্য যে পদ্ধতিতে ঋণ দেয়া হবে, তার মধ্যে প্রধান কয়েকটি হলো ব্যাংক ক্লায়েন্ট সম্পর্ক, বিগত বছরের মানুফ্যাকচারিং/সেলেস/টার্নভার মূল্য, ব্যাংক স্টেটমেন্ট ইত্যাদি। গাইডলাইনে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে, যেকোনো প্রকার হিডেন চার্জ নেয়া যাবে না, এর মধ্যে কোলেটারেল পরে কিনা অবশ্য জানি না। বলা হয়েছে ঋণের ৬৫ শতাংশ দেয়া হবে উৎপাদন খাতে এবং বাকি ৩৫ শতাংশ দেয়া হবে ট্রেডিং খাতে। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ দেয়া হবে কুটির, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের। তাহলে দেখা যায়, ১৪ হাজার কোটি টাকা রাখা হয়েছে এদের জন্য এবং বাকি ৬ হাজার কোটি রাখা হয়েছে মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য। অন্যদিকে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ৫ শতাংশ রাখা হয়েছে। এই ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অংশ থেকে আসবে কিনা, তা পরিষ্কার নয়। রংপুর মহিলা চেম্বার প্রতিনিধি জানালেন, এক বছরের মধ্যে এ অর্থ ফেরত দিতে হবে। এটা এসব ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার জন্য খুব সুখকর নয়।
এ কুটির ও মাইক্রো উদ্যোক্তাদের মধ্যে যিনি অনেক কষ্ট করে ট্রেড লাইসেন্স করলেন, তিনি ৫০ হাজার টাকা ঋণের জন্য কোলেটারেল, গ্যারান্টর কোথা থেকে দেবেন। তার চেয়ে ভালো অন্তত বসতভিটাটুকু থাকুক, আর কোনোমতে দিন কাটুক দারিদ্র্যকে আলিঙ্গন করে। গত নভেম্বরের পরিসংখ্যান থেকে একটা জিনিস দেখা গেল, নন-ব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল খাত থেকে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ দেয়া হয়েছে প্রায় ১৮ শতাংশ, যদিও প্রদেয় ঋণের পরিমাণ তেমন বেশি নয়, মাত্র ৮১ দশমিক ৫৬ কোটি টাকা। অন্যদিকে ব্যাংকের মাধ্যমে প্রদত্ত ঋণ প্রায় ৪১৯ দশমিক শূন্য ৮ কোটি টাকা। নন-ব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল খাত থেকে প্রায় ১৮ শতাংশ ঋণ প্রদান করতে পাড়ার কারণ তাদের ক্ষেত্রে নিয়ম বা বাধ্যবাধকতা কিছুটা শিথিল। ইসলামিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, আইপিডিসি, আইডিএলসি এবং বেশকিছু প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সহায়তার জন্য কাজ করছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক এদের গ্রাস রুট পর্যায়ে ব্রাঞ্চ খোলার অনুমতি দিয়েছে, যা এ সুযোগকে বাড়িয়ে দিতে পারে। কোলেটারেল ছাড়া ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে ব্র্যাক ব্যাংকের উদাহরণও আমাদের সামনে রয়েছে।
এ রকম একটা পরিস্থিতিতে একটি প্রসঙ্গ স্বাভাবিকভাবেই এসে যায়। সেটা হলো, আমরা যেভাবে বিভিন্ন ধরনের শিল্পকে সংজ্ঞায়িত করছি, তা আমাদের দেশের অবস্থান, অর্থনীতি, শিল্পোদ্যোগের ধরন বা ধারা এগুলোর সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কিনা।
এ বিষয়গুলো সামনে রেখে ১০ ডিসেম্বর বিল্ড-আইটিসি-জেনেভা শি ট্রেড ইনিশিয়েটিভের সহায়তায় একটি ডায়ালগের আয়োজন করে, সেখানে আইটিসি ও আইএলওর বিশেষজ্ঞ উপস্থিত ছিলেন। এ খাতের জন্য কাজ করছেন এমন কিছু গবেষক এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরাও এখানে উপস্থিত ছিলেন। দেখা যায় বাংলাদেশ একমাত্র দেশ, যেখানে আমরা সিএমএসএমই ব্যবহার করছি, অন্যদিকে পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এমএসএমই ব্যবহার করে থাকে। অর্থাৎ কুটির শিল্পকে মাইক্রো শিল্পের মধ্যেই গণ্য করে থাকে। আলোচনায় বিষয়টিকে সমর্থন করে বলা হয়, ধারণাগতভাবে কুটির শিল্প একটি টাইপ, যার সঙ্গে লোকেশনাল বিষয়টি জড়িত, তাদের জন্য আকারের বিষয়টি ততটা বড় নয়। কাজেই যদি সিএমএসএমই থেকে আমরা এমএসএমই বলি, তাহলে ক্লারিটি বেশি থাকতে পারে। অন্যদিকে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তুলনায় এবং তথ্য আদান-প্রদানে সুবিধা হতে পারে। নীতিমালা তৈরির ক্ষেত্রেও কিছুটা সুবিধা হতে পারে, অন্য নীতির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ করে নীতিমালাকে সাজানো যেতে পারে।
যেমন বাংলাদেশের প্রায় ১১টি শিল্পনীতি এ-যাবৎ প্রণীত হয়েছে। সময়ের বিভিন্ন ব্যবধানে এগুলো প্রকাশিত হয়েছে। শুরুতে এটা বিনিয়োগ নীতিমালা হিসেবে প্রকাশ করা হয়। পরবর্তী সময়ে এটাকে শিল্পনীতি হিসেবে বলা হয়। দু-একটা শিল্পনীতির উদাহরণ দিয়ে ক্ষুদ্র, কুটির শিল্পের আজকের এ উদাহরণ টেনে আনা যায়। ১৯৯১ সালের শিল্পনীতিতে মাইক্রো ও মাঝারি শিল্পের কোনো সংজ্ঞা ছিল না। একইভাবে ২০০৫ সালের নীতিতে মাইক্রো শিল্পের কোনো সংজ্ঞা ছিল না। এদের জন্য অ্যাসেট মূল্য ধরা হয়নি। কুটির শিল্পের জন্য কোনো থ্রেশোল্ড ধরা ছিল না। শিল্পনীতি ২০১০-এ কুটির শিল্পের অ্যাসেট এবং কর্মী সংখ্যা যোগ হয়, যা ২০১৬ সালেও পুনরাবৃত্তি করা হয় কিছুটা পরিবর্তন করে।
এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আমরা যদি শিল্পের ক্যাটাগরাইজেশনকে কূটির+মাইক্রো+ক্ষুদ্রকে একদিকে বা একভাবে দেখি এবং মিডিয়াম+বৃহেক একভাবে দেখি তাহলে অর্থায়নের বিষয়টি কিছুটা সহজ হতে পারে।
ক্রাইটেরিয়ার ক্ষেত্রে অন্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে মাইক্রো শিল্পের শ্রমিক সংখ্যা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে অনেক বেশি। অন্যদিকে বিনিয়োগ অনেক কম। ক্ষুদ্র শিল্পের সংজ্ঞার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। মাঝারি শিল্পের ক্ষেত্রে শ্রমিক সংখ্যা যদিওবা কাছাকাছি কিন্তু বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তা তুলনীয় দেশ চীন, মালয়েশিয়ার চেয়ে কম। তাহলে সংজ্ঞা নির্ধারণে কোন ক্রাইটেরিয়াটি বেশি গ্রহণযোগ্য হতে পারে। সব ক্রাইটেরিয়ার মধ্যে কর্মী সংখ্যা বা নিয়োজিত শ্রমিক সংখ্যা একটি সহজ নির্দেশিকা হতে পারে। কেননা বিনিয়োগ, টার্নওভার এগুলো সেকেন্ডারি প্যারামিটার, যা সাধারণত উদ্যোক্তারা প্রকাশ করতে চান না। কারণ করসংক্রান্ত সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
অন্যদিকে শিল্পনীতিতে রিপ্লেসমেন্ট কস্ট বলে একটি বিষয় রয়েছে, যার মধ্যে জমি ও বিল্ডিং বাদ দেয়া হয়েছে। তাহলে এটি প্রকৃতপক্ষে কোন খাতকে নির্দেশ করে তা ঠিক পরিষ্কার নয়। এ ধরনের ক্ষেত্রগুলোকে চিহ্নিত করে তা বিশ্লেষণের মাধ্যমে সংজ্ঞার বিষয়টি সবার কাছে সহজ করে আগামী শিল্পনীতি প্রণীত হওয়া দরকার। তাতে কুটির ও মাইক্রো শিল্পকে সঠিকভাবে পরিচিত করা যাবে।
অর্থায়নে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সবচেয়ে বেশি অবদান রাখে। তাই তাদের সংজ্ঞার দিকটিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। অথচ ব্যাংকের নীতি ও শিল্পনীতির সংজ্ঞার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। যেমন শিল্পনীতিতে এক হাজার নিয়োজিত শ্রমিকবিশিষ্ট তৈরি পোশাক কারখানাকে ক্ষুদ্র শিল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে ক্যাশ ইনসেনটিভ দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে বলা আছে, ক্ষুদ্র শিল্প তারাই হবে, যাদের রফতানি বছরে ৫ মিলিয়ন ডলারের কম হবে। এতে ক্ষুদ্র শিল্প বলে শিল্পনীতির মাধ্যমে বিবেচিত তৈরি পোশাক শিল্প এ ক্যাশ ইনসেনটিভ ব্যবহার করতে পারছে না। এ খাত শতভাগ রফতানিকারী খাত, সংগত কারণেই একটি শতভাগ রফতানিকারী শিল্পের রফতানি আরো বেশি হবে।
এছাড়া কর নীতিমালার সংজ্ঞা আর শিল্পনীতির সংজ্ঞা ভিন্ন। যেমন ভ্যাট ও এসডি ২০১২ আইনে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত টার্নওভার সংবলিত উদ্যোগ মূল্য সংযোজন করের আওতার বাইরে থাকবে বলা হয়েছে। আর ৫০ লাখ টাকা থেকে ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত টার্নওভার করের আওতাধীন, অর্থাৎ তারা ১৫ শতাংশের পরিবর্তে কর দেবেন ৪ শতাংশ হারে। এ সংজ্ঞা শিল্পনীতিতে ক্ষুদ্র শিল্পের সংজ্ঞার সঙ্গে সমন্বিত নয়।
সম্প্রতি কোম্পানিজ অ্যাক্টের সংশোধন হয়েছে, যেখানে এক ব্যক্তির কোম্পানি বা ওপিসি অনুমোদিত হয়েছে। যাদের পেইড আপ ক্যাপিটাল ২৫ লাখ টাকা থেকে ৫ কোটি টাকা এবং টার্নওভার ১ কোটি টাকা থেকে ৫০ কোটি টাকা, তারা এ ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত হবেন। এ সংজ্ঞাকে শিল্পনীতির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ করা দরকার। এছাড়া ইনকাম ট্যাক্স অর্ডিন্যান্সের দ্বারাও এটা ভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত। ফাইন্যান্স অ্যাক্ট ২০২০ (৮২সি) অনুযায়ী, টার্নওভার বা গ্রস প্রফিট ৫০ লাখের ওপরে হলে তারা করপোরেট কর দেবেন, যা শিল্পনীতির মাইক্রো শিল্পের সংজ্ঞার সঙ্গে তুলনীয় নয়।
কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্প কাদের বলা হবে, সে বিষয়টি সংগত কারণে চলে আসে এজন্য যে যদি এ শিল্পগুলো বা উদ্যোগগুলো কী ধরনের, তা সঠিকভাবে চিহ্নিত করা যায় এবং সব নীতিমালার সঙ্গে সমন্বয় থাকে তাহলে তাদের জন্য অর্থায়নের গাইডলাইনটি সেভাবে প্রণয়ন করা যাবে। তা না হলে গাইডলাইন ঠিকই থাকবে, তার মধ্যে পরিবর্তন আসবে কিন্তু যাদের জন্য নীতিমালাটি করা হয়েছে, তারা এর কোনো সুফল পাবেন না। শোনা যায় সিএমএসএমইদের জন্য নতুন প্যাকেজ ঘোষণা করা হবে, সেখানে কুটির, মাইক্রো ও ক্ষুদ্রদের জন্য আলাদা গাইডলাইনও থাকা দরকার। কারণ তাদের উদ্যোগের চরিত্র, প্রয়োজন, সক্ষমতা ভিন্ন।
ফেরদৌস আরা বেগম: প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও), বিল্ড