সাইবার আক্রমণের নেপথ্যে রাশিয়া: পম্পেও

বণিক বার্তা ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ সাইবার আক্রমণ ঘটানোর জন্য এবার সরাসরি রাশিয়াকে দায়ী করলেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। খবর বিবিসি।

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কম্পিউটার নেটওয়ার্কে সাইবার আক্রমণের পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ বেশির ভাগ শীর্ষ কর্মকর্তা ব্যাপার নীরবই ছিলেন। যদিও শুক্রবার মুখ খোলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও। তিনি বলেন, আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে পারছি যে, ঘটনার সঙ্গে রাশিয়াই জড়িত।

যদিও রাশিয়ার জড়িত থাকা সাপেক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ দিতে পারছেন না পম্পেও। এমনকি রাশিয়ার পক্ষ থেকেও হামলার দায় অস্বীকার করা হয়েছে। টেক্সাস-ভিত্তিক সোলারউইন্ডস ফার্মের তৈরি সফটওয়্যারের মাধ্যমে আক্রমণ চালায় হ্যাকাররা, যা গত সপ্তাহে প্রথম ধরা পড়ে। হ্যাকিংয়ের কার্যক্রম চলছিল মাসখানেক ধরেই।

যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি, অর্থ, বাণিজ্যসহ বিভিন্ন দপ্তরের কম্পিউটার নেটওয়ার্ককে টার্গেট করে সাইবার আক্রমণ চালানো হয়। যদিও ধারণা করা হয়, হ্যাকারদের মূল লক্ষ্যই ছিল পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ সম্পর্কিত তথ্য চুরি করা। পারমাণবিক খাতটি জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অধীন। জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার দাবি করা হয়, পারমাণবিক খাতের সফটওয়্যারের সুরক্ষাব্যূহ ভেদ করতে পারেনি হ্যাকাররা, তাই অস্ত্রের মজুদ সম্পর্কিত নিরাপত্তাও সমুন্নত রয়েছে।

একই নেটওয়ার্কের ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে যুক্তরাজ্য, কানাডা, বেলজিয়াম, স্পেনসহ বহু জায়গায় আক্রমণ চালায় হ্যাকাররা। গবেষকরা বলছেন, সানবার্স্ট নামের সাইবার আক্রমণের ক্ষয়ক্ষতি কিংবা জটিলতা সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে বুঝতে অন্তত বছরখানেক লেগে যেতে পারে।

হামলার জন্য পম্পেও কোনো রাখঢাক না রেখেই রাশিয়ার সম্পৃক্ততার কথা জানালেন। শুক্রবার রেডিও সঞ্চালক মার্ক লেভিনের টক শোতে তিনি বলেন, তার বিশ্বাস গত কয়েক মাস ধরে বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সরকারি দপ্তর, সংস্থা প্রাইভেট কোম্পানির নেটওয়ার্কে অবৈধ অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে আসছিল রাশিয়ার হ্যাকাররা। তিনি বলেন, তৃতীয় পক্ষের সফটওয়্যার কাজে লাগিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কম্পিউটার সিস্টেমে ঢোকার চেষ্টা করা হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে অনুপ্রবেশ করে গুপ্তচরবৃত্তির চেষ্টা চালানো হয়েছে বলে সন্দেহ করছে আমেরিকান প্রশাসন। রাশিয়াকে দায়ী করে পম্পেও বলেন, রাশিয়া আমাদের জীবনযাপনের ধরন স্টাইলের ধ্বংসসাধন করতে চায়।

এমনকি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে তিনি সত্যিকারের ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন।

এদিকে অন্তত তিনটি সূত্র সিএনএনকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা দেশের সংবেদনশীল অবকাঠামোগুলোতে সম্ভাব্য সাইবার আক্রমণ নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরকে আগেই সতর্ক করে দিয়েছিলেন, কেননা তারা সন্দেহজনক কর্মকাণ্ডের আঁচ পাচ্ছিলেন। কিন্তু এরই মধ্যে ঘটে গেল যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সাইবার আক্রমণের ঘটনা।

প্রারম্ভিক ইঙ্গিত মিললেও গত সপ্তাহে পরিষ্কার হয়ে গেল, সেখানকার সিস্টেমে গুপ্তচরবৃত্তির অবারিত সুযোগ রয়েছে। এলিট সাইবারসিকিউরিটি ফার্ম ফায়ারআই জানায়, তাদের নিজেদের নেটওয়ার্কের মধ্যেই ঢুকে পড়েছে হ্যাকাররা। 

সর্বশেষ হ্যাকিংয়ের সঙ্গে রাশিয়ার নাম উচ্চারিত হওয়ার ঘটনা এটা মনে করিয়ে দিল যে সাইবার দুনিয়ায় আমেরিকানদের পুরনো প্রতিদ্বন্দ্বী মস্কো। গত তিন দশক ধরেই মস্কোভিত্তিক হ্যাকাররা যুক্তরাষ্ট্রের গোপন অনলাইন তথ্য চুক্তি করার চেষ্টা করে আসছে। প্রতিবারের সাইবার আক্রমণের পর যুক্তরাষ্ট্র উপলব্ধি করতে পেরেছে, কী ধরনের সাইবার ব্যবস্থা তারা চায় এবং কীভাবে তার সুরক্ষা নিশ্চিত করা যাবে। তারা এটাও জানে, মস্কোর সাইবার আক্রমণ ঠেকানো সব সময় সম্ভব না- হতে পারে, কেননা সম্পর্কে পূর্বানুমান করা কঠিন হয়ে ওঠে।

১৯৮৬ সালে কুকুস এগস, ১৯৯০ সালে মুনলাইট মেইজ, ২০০৮ সালে বাকশট ইয়াঙ্কি, ২০১৬ সালে দ্য ডেমোক্র্যাটস সম্প্রতি নসানবার্স্ট নামের সাইবার আক্রমণের শিকার হয় যুুক্তরাষ্ট্র। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিবারই সাইবার আক্রমণ করে মস্কোভিত্তিক হ্যাকাররা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন