সাড়ে ৪৬ লাখ একর বনভূমির দায়িত্বে মাত্র ১১ জন সার্ভেয়ার!

জেসমিন মলি

গাজীপুরে সংরক্ষিত বনের পরিমাণ ৩৬ হাজার একর। বনের পুরোটাই বন অধিদপ্তরের নামে রেকর্ড হয়েছে। রাজধানীর কাছের জেলা হওয়ায় বন বিভাগের কর্মকর্তাদের তত্পরতায় গাজীপুরের পুরো সংরক্ষিত বন রেকর্ডভুক্ত হলেও ভিন্ন চিত্র দেশের অন্যান্য জেলার বনাঞ্চলের।

দেশের ৩৫টি জেলায় বনভূমি রয়েছে। সেখানে বন অধিদপ্তরের আওতায় মোট ভূমির পরিমাণ ৪৬ লাখ ৪৬ হাজার ৭০০ একর, যার মধ্যে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ৩৩ লাখ ১০ হাজার ৯০৭ একর। কিন্তু সংরক্ষিত এসব বনভূমির পুরোটা বন অধিদপ্তরের দখলে নেই। রেকর্ডেও নেই। আবার বনের কত অংশ অন্যদের নামে রেকর্ডকৃত বা দখলদারদের দখলে কত একর রয়েছে, সে বিষয়েও কোনো হালনাগাদ তথ্য নেই বন অধিদপ্তরের কাছে।

সংরক্ষিত বনের পুরোটা রেকর্ডভুক্ত না হওয়ার পেছনে সার্ভেয়ার সংকটকেই দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, বন বিভাগের মাত্র ১১ জন সার্ভেয়ার রয়েছেন। এত কম সার্ভেয়ার দিয়ে ৩৫টি জেলার বনভূমির রেকর্ড দখলের বাস্তব চিত্র তুলে আনা সম্ভব নয়।

পরিবেশ, বন জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতেও বনভূমি দখলের বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। সর্বশেষ কমিটির গত ১৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বৈঠকের আলোচনায় বিষয়টি উঠে আসে। বৈঠকে বনভূমি বেদখলসংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্য না থাকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে কমিটি।

পরিবেশ, বন জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বিষয়ে বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য জমি উদ্ধার। এই যে সংরক্ষিত বন দখল করে রাখা হয়েছে, এটা গেজেটভুক্ত। এখানে দখলদার আদালতে গিয়েও কিছু করতে পারবে না। বিভিন্ন ক্যাটাগরির বনের জমি দখল হয়ে আছে। আগে সংরক্ষিত বনের জমি উদ্ধারে মন্ত্রণালয়কে হাত দিতে বলা হয়েছে। এটা শুরু হলে অন্য দখলদাররা সতর্ক হয়ে যাবে।

বন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে বিভিন্ন শ্রেণীর মোট বনভূমির পরিমাণ ৪৬ লাখ ৪৬ হাজার ৭০০ একর। এর মধ্যে লাখ ৮৭ হাজার ৪৫২ একর বনভূমি দখলে আছে। আর ৮৮ হাজার ২১৫ দখলদার ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের দখলে সংরক্ষিত বনভূমি রয়েছে বলে অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ১৪০ প্রতিষ্ঠান মিলেই ৮০০ একর সংরক্ষিত ভূমি দখল করে রেখেছে।

বনভূমির মধ্য দিয়ে বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ, বিশেষ করে সড়ক নির্মাণের ফলে দুপাশে বনভূমি জবরদখলের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। দেশের প্রায় সবখানেই বনভূমি দখল করে চাষাবাদের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করেছে স্থানীয় জনগণ প্রভাবশালীরা। অনেক জায়গায় জবরদখল করা বনভূমিতে শিল্প-কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। আবার অবৈধ দখল করা বনভূমি বন্ধক দিয়ে ব্যাংকঋণ নেয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

বনের এসব জবরদখলকারীকে উচ্ছেদে বন বিভাগ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বনভূমি দখলমুক্ত করতে বন বিভাগ কার্যত লোক দেখানো উদ্যোগ নিয়েছে। ফলে বনের ভূমি দখলে কোনো সফলতা মেলেনি। আবার মামলা দায়েরের ফলে আদালতের নিষ্পত্তির অপেক্ষায় থাকায় দখলদারদের উচ্ছেদ করতেও পারছে না বন বিভাগ।

দেশে সংরক্ষিত ৪০টি বনাঞ্চলের মধ্যে জাতীয় উদ্যান ১৭টি এবং বন্যপ্রাণীদের অভয়াশ্রম ২০টি। বনাঞ্চল ধ্বংসের ফলে বিলুপ্তির পথে এসব অভয়াশ্রমের ৪০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৪১ প্রজাতির পাখি, ৫৮ প্রজাতির সরীসৃপ আট প্রজাতির উভচর প্রাণী।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন