যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনে রেকর্ড মাত্রায় খাদ্যাভাব

বণিক বার্তা ডেস্ক

সংঘাতপূর্ণ ইয়েমেনে অপুষ্টি রেকর্ড স্পর্শ করেছে এবং দুর্ভিক্ষ রোধের সুযোগও ক্রমেই সংকুচিত হয়ে এসেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। একদিকে নভেল করোনাভাইরাসের থাবা এবং অন্যদিকে তহবিলের স্বল্পতা যৌথভাবে দেশটিতে বড় ধরনের মানবিক আঘাতের হুমকি তৈরি করেছে। খবর এএফপি।

বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বলেছে, ২০২১ সালের প্রথমার্ধে ইয়েমেনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্তরের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মুখোমুখি হতে যাওয়া মানুষের সংখ্যা ৩৬ লাখ থেকে ৫০ লাখে উন্নীত হবে। 

২০১৪ সাল থেকে ইরান সমর্থিত হুথি বিদ্রোহী এবং সৌদি নেতৃত্বাধীন একটি সামরিক জোট সমর্থিত সরকারের যুদ্ধের কবলে পড়ে ইয়েমেন, যা তাদের ঠেলে দেয় বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহতম মানবিক সংকটের দিকে।

ডব্লিউএফপি একটি বিবৃতিতে বলেছে, দুই বছরে প্রথমবারের মতো দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি ফিরে এসেছে। 

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, বিধ্বংসী মাত্রার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা মানুষের সংখ্যা ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে বর্তমান সময়ের ১৬ হাজার ৫০০ থেকে বেড়ে ৪৭ হাজার হয়ে যেতে পারে। 

ডব্লিউএফপির নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বিয়েসলে বলেন, উদ্বেগ জাগানো এ সংখ্যা নিশ্চিতভাবেই বিশ্বের জন্য একটি সতর্কবার্তা। 

তিনি এ সময় আরো যোগ করে বলেন, ইয়েমেন এখন একটি দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে অবস্থান করছে। লাখো মানুষের এখন ব্যাপকভাবে সাহায্যের প্রয়োজন, আমাদের মোটেই উচিত হবে না তাদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া। 

জুলাইয়ে জাতিসংঘ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছিল, বিশ্বের নয়জনের একজন মানুষ ক্ষুধার মুখে পড়েছে। নভেল করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবা এবং জলবায়ু সম্পর্কিত ধাক্কা মূলত এ বছর পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করেছে। 

ইয়েমেনে শিশুদের ওয়ার্ডগুলো পরিস্থিতি কতটা খারাপ তার সাক্ষী দিচ্ছে এবং স্পষ্ট করেছে সংকটের চিত্র। যেখানে কঙ্কালসার শিশুদের কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে। 

এদিকে অনেক বাবা-মায়ের নতুন ভয় হচ্ছে, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মাধ্যমে সন্তানরা কভিড-১৯-এ আক্রান্ত হতে পারে।

পাশাপাশি তহবিল স্বল্পতার কারণে ইয়েমেনে জাতিসংঘের ত্রাণ প্রচেষ্টাও ব্যাপকভাবে সংকুচিত হয়ে পড়েছে। যেখানে মধ্য অক্টোবর পর্যন্ত প্রয়োজনীয় ৩২০ কোটি ডলারের মাঝে কেবল ১৪৩ কোটি ডলার পাওয়া গেছে।

সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ বলেছে, ৩০০টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জরুরি সহায়তা কেটে নেয়া হয়েছে এবং প্রধান মানবিক কর্মসূচিগুলোর এক-তৃতীয়াংশ হয় কমিয়ে দিয়েছে, নয়তো পুরোপুরিভাবে বন্ধ করে দিতে হয়েছে। 

জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা জানিয়েছে, সৌদি আরবসহ অনেক আরব দাতা নিজেদের সহায়তার প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেনি। মূলত করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে দাতা দেশগুলো নিজেরাই এখন অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে।

যুদ্ধ শুরুর আগে থেকেই ইয়েমেন আরব দেশগুলোর মাঝে সবচেয়ে গরিব দেশ হিসেবে স্বীকৃত ছিল। কিন্তু বর্তমান সময়ে এসে যুদ্ধের কারণে অর্থনীতি আরো অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যেখানে দেশের ৮০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে নির্ভর করতে হয় সহায়তার ওপর। 

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মহাপরিচালক কিউ দোংইউ বলেছেন, খাবারের সরবরাহ অব্যাহত রেখে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখা জরুরি। কিন্তু এ ধারা নিরবচ্ছিন্নভাবে সবসময় চলতে পারে না। 

তিনি যোগ করে বলেন, ইয়েমেনে জরুরি ভিত্তিতে যুদ্ধের অবসান হওয়া দরকার, যা মূলত দেশটির খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার প্রধান চালক।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন