করোনার ভ্যাকসিন ও সুশাসনের একটি ভিন্নধর্মী সূচক

ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ

বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন ও সুশাসনের একটি ভিন্নধর্মী সূচক শিগগিরই পাওয়া যেতে পারে:

করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে অচিরেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে। তবে ভ্যাকসিনের লভ্যতা (দাম ও সরবরাহ) ও সংরক্ষণ ব্যবস্থার বিবেচনায় প্রথম ধাপে কেবল সীমিতসংখ্যক মানুষকেই এই টিকা দেয়া সম্ভব হবে এবং পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে এ কর্মসূচি সম্প্রসারণ করা যাবে। সেজন্য কারা আগে টিকা পাবে, তার একটা গাইডলাইন তৈরি করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ সদ্য একটি গাইডলাইন ঘোষণা করেছে, যাতে প্রত্যাশিতভাবেই স্বাস্থ্যকর্মী (তাদের মধ্যে আবার যেসব ডাক্তার ও নার্স সরাসরি করোনা রোগীর চিকিত্সা দিচ্ছেন আগে তারা) এবং নার্সিং হোমে থাকা বয়োবৃদ্ধরা তালিকার প্রথমে আছেন। যুক্তরাজ্যের গাইডলাইনও একই রকম। বাংলাদেশেও এ ধরনের অগ্রাধিকারের গাইডলাইন তৈরির কাজ চলছে বলে শোনা যাচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকেও একটি গাইডলাইন হয়তো পাওয়া যাবে এবং অনুমান করা যায়, সেটি উন্নত দেশগুলোর অগ্রাধিকারের গাইডলাইনের আদলেই হবে। এ ধরনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি মানদণ্ড থেকে বিভিন্ন দেশের গাইডলাইনের বিচ্যুতির মাত্রা কতখানি (এবং আরো ভালো হয় সেই গাইডলাইন বাস্তবে কতখানি পালিত হচ্ছে, অর্থাত্ অনিয়মের মাত্রা কী পরিমাণ, তার পরিসংখ্যান সংগ্রহ করা গেলে), তার ভিত্তিতে একটি আন্তর্জাতিক সূচক তৈরি করা যেতে পারে। এটিকে তাহলে সুশাসন ও উন্নয়নের মাত্রা এই দুটোরই একটি ভিন্নধর্মী বাড়তি সূচক হিসেবে কাজে লাগানো যাবে। 

একটি দেশের শাসন ব্যবস্থা কতখানি মানবিক গুণে সমৃদ্ধ, তাও এ থেকে বোঝা যাবে; যেমন ঝুঁকির মুখে থাকা স্বাস্থ্যসেবাদানকারীদের সুরক্ষা, বয়োবৃদ্ধদের সুরক্ষায় সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, ক্ষমতা ও পদ বিবেচনা না করে শুধু করোনার ঝুঁকির বিবেচনায় অগ্রাধিকার নির্ণয় বা করোনার টিকাদানের মতো জরুরি জনস্বাস্থ্যসেবাকে শুধু বাজার অর্থনীতির ওপর ছেড়ে না দিয়ে সরকারি স্বাস্থ্য খাতের যথাযথ দায়িত্ব পালন।

এটি মানুষের বাঁচা-মরার বিষয় এবং সে কারণেই এক্ষেত্রে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি সুশাসনের মাত্রা নির্ধারণের ক্ষেত্রে বা উন্নয়ন-অনুন্নয়নের লক্ষণ বুঝতে গেলে প্রকটভাবে ধরা পড়বে।

ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন