ভুয়া চীনা সনদে দেশে প্র্যাকটিস

বিএমঅ্যান্ডডিসির রেজিস্ট্রারসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের ১২ শিক্ষার্থী চীনের তাঈশান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিবিএস পাসের ভুয়া সনদ ব্যবহার করে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমঅ্যান্ডডিসি) চিকিৎসক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নেন। সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নিবন্ধিত চিকিৎসক হিসেবে দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ইন্টার্ন হিসেবে চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত হন। কিন্তু রেকর্ডপত্র যাচাইকালে তাদের এমবিবিএস সার্টিফিকেটগুলো ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়। ভুয়া সনদের মাধ্যমে নিবন্ধন নেয়ার অভিযোগে ১২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে গতকাল একটি মামলা দায়ের করেছে দুদক। মামলায় ওই শিক্ষার্থী ছাড়া এমঅ্যান্ডডিসির রেজিস্ট্রারসহ একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তাকেও আসামি করা হয়েছে।

দুদকের উপপরিচালক সেলিনা আখতার মনি বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

জানা গেছে, ১২ শিক্ষার্থীর এমবিবিএস সনদের সঠিকতা যাচাই করতে সনদগুলোর ছায়ালিপি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশের  পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাঈশান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়। চীনের বেইজিংয়ে  বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে সেসব সনদ যাচাই করে গত বছরের ২১ জানুয়ারি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দুদকে প্রতিবেদন পাঠায়। সেসব রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, ওই ১২ শিক্ষার্থীর এমবিবিএস সনদ ভুয়া। এছাড়া সেসব সনদে স্বাক্ষরের সত্যতা পরীক্ষার জন্য হস্তলেখা বিশারদের মতামত গ্রহণ করা হয়। তাতেও সনদে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে বলে উঠে আসে। সেই শিক্ষার্থীরা কখনো চীনের তাঈশান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখাই করেননি। কেউ কেউ কেবলমাত্র ট্যুরিস্ট ভিসায় চীনে গিয়েছিলেন, সে দেশে থাকার স্বপক্ষে কোন প্রমাণ নেই। এমবিবিএস ডিগ্রির সনদ ভুয়া। তাঈশান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও এরকম জাল-জালিয়াতির নিন্দা জানায় এবং দোষীদের শাস্তি দাবি করে। 

দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, বিএমঅ্যান্ডডিসি সার্টিফিকেট যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোনপ্রকার সতর্কতা বা নিয়ম-নীতির প্রতিপালন করেনি। বিএমঅ্যান্ডডিসি কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. বোরহান উদ্দিনের কাছে প্রার্থীরা যখন তাদের বিভিন্ন ডকুমেন্টস জমা দেন সেগুলো যাচাই করার কথা, তিনি প্রথমে সঠিকতা যাচাই করে রেজিস্ট্রারের কাছে মূলসনদ তার ছায়ালিপি উপস্থাপন করেন। তখন রেজিস্ট্রার মো. জাহিদুল হক বসুনিয়া মূল রেকর্ডপত্র দেখে আবার ছায়ালিপিগুলি সত্যায়িত করেন। সে কারণে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সৃষ্ট ডকুমেন্টসগুলো সম্পর্কে তারা জ্ঞাত ছিলেন দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। তারা জেনে-বুঝে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অবৈধভাবে ভুয়া চিকিৎসকদের নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের সুযোগ দিয়ে পরবর্তীতে এমবিবিএস চিকিৎসক হিসেবে নিবন্ধন নম্বর প্রদান এর মাধ্যমে ফৌজদারি অপরাধ করেছেন।  মামলায় যেসব শিক্ষার্থীদের আসামী করা হয়েছে তারা হলেন- মো. ইমান আলী, সুদেব সেন, তন্ময় আহমেদ, মো: মাহমুদুল হাসান, মো: মোক্তার হোসাইন, মো. আসাদ উল্লাহ, মো. কাউসার, রহমত আলী, শেখ আতিয়ার রহমানমো. সাইফুল ইসলাম, মো: আসলাম হোসেন, মোহাম্মদ মাসুদ পারভেজ, এছাড়া মামলায় বিএমঅ্যািন্ডডিসি রেজিস্ট্রার  মো. জাহিদুল হক বসুনিয়া, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিনকেও আসামি করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন