নদীর পাড় ও কৃষিজমি দখল

সোনারগাঁ ইকোনমিক জোনের কার্যক্রম অবৈধ ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক

নারায়ণগঞ্জে নদীর পাড় কৃষিজমি দখল করে গড়ে তোলা সোনারগাঁ ইকোনমিক জোনকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) দায়ের করা একটি জনস্বার্থমূলক মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি আশরাফুল কামাল এবং বিচারপতি রাজীক আল জালীলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের একটি বিশেষ বেঞ্চ গতকাল রায় দেন।

সোনারগাঁ উপজেলায় প্রায় দুই হাজার বিঘা কৃষি জলাভূমি শ্রেণীর জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে সোনারগাঁ রিসোর্ট সিটি সোনারগাঁ ইকোনমিক জোন। মেঘনা নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠান দুটি কয়েক দফায় নদীর জমি কৃষিজমি অবৈধভাবে দখলে নেয়। প্রতিষ্ঠান দুটির মালিকানায় রয়েছেন ইউনিক গ্রুপের কর্ণধার নূর আলী।

মামলার বাদী বেলা জানায়, দীর্ঘ শুনানি শেষে হাইকোর্ট রুলটি চূড়ান্ত ঘোষণা করেন এবং ভরাটকৃত মাটি অপসারণ করে ছয় মাসের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেন। রায় বাস্তবায়নের স্বার্থে মামলাটি চলমান মামলা হিসেবে বিবেচিত হবে। প্রদত্ত রায়ে হাইকোর্ট নূর আলীর মালিকানাধীন ইউনিক প্রোপার্টিজ লিমিটেডের সোনারগাঁ রিসোর্ট সিটি নাম বদলে সোনারগাঁ ইকোনমিক জোন নাম ধারণ করে ছয়টি মৌজায় মাটি ভরাটের যে প্রক্রিয়া শুরু করেছিল, তা অন্তর্বর্তী আদেশকে পাশ কাটানোর প্রচেষ্টা বলে উল্লেখ করেছেন।

বেলার আইনজীবী সাঈদ আহমেদ কবীর জানান, স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ২০১৮ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী উল্লেখিত ছয়টি মৌজায় ২০০০ সালে যেখানে ২৫০ হেক্টর কৃষিজমিতে ১১টি সেচ প্রকল্প চালু ছিল, ২০১৮ সালে রবি মৌসুমে সেখানে মাত্র ৪৩ হেক্টর কৃষিজমিতে দুটি সেচ স্কিম সচল ছিল। নয়টি ইরি-বোরো স্কিম বন্ধ হওয়ার কারণ হিসেবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নূর আলীর প্রকল্পে মাটি ভরাটকে দায়ী করেছেন।

এর আগে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের পিরোজপুর, জৈনপুর, ছয়হিস্যা, চরভবনাথপুর, বাটিবন্ধ রতনপুর মৌজার কৃষিজমি, জলাভূমি, মেঘনা নদীর অংশ বিশেষে জোরপূর্বক মাটি ভরাট করে ইউনিক প্রোপার্টিজ ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের সোনারগাঁ রিসোর্ট সিটি প্রকল্পের কার্যক্রম অবৈধ ঘোষণার জন্য বেলা রিট পিটিশন (নং-১৬৮৩/২০১৪) দায়ের করে। ওই রিট পিটিশনের প্রাথমিক শুনানিতে হাইকোর্ট বিভাগ ২০১৪ সালের মার্চ রুলনিশি জারি করেন এবং ইউনিক প্রোপার্টিজ ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডকে প্রকল্প এলাকার মাটি বা বালি ভরাট কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নিষেধাজ্ঞা আদেশ জারি করেন। সেই সঙ্গে এরই মধ্যে ভরাটকৃত ভূমি থেকে মাটি/বালি অপসারণের নির্দেশ দেন। কিন্তু আদালতের ওই আদেশ বাস্তবায়ন না করে ইউনিক প্রোপার্টিজ ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের সহযোগী কোম্পানি ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেড উল্লিখিত ছয়টি মৌজায় সোনারগাঁ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য মাটি ভরাটের অনুমতি পেয়েছে দাবি করে এবং পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের ২০১৪ সালের মার্চ প্রদত্ত আদেশ অকার্যকর ঘোষণার জন্য হাইকোর্ট বিভাগের অবকাশকালীন বেঞ্চে আবেদন করে। পরে ২০১৬ সালের ২৫ অক্টোবর আদালত আগের আদেশ সংশোধনক্রমে সোনারগাঁ ইকোনমিক জোনের জন্য মাটি ভরাট কার্যক্রম পরিচালনার আদেশ দেন। পরে ওই আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে বেলা আপিল বিভাগে সিভিল মিসসেলেনিয়াস পিটিশন দাখিল করে। ২০১৬ সালের নভেম্বর আপিল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ স্থগিত করেন। ফলে মাটি ভরাটের কার্যক্রম অপসারণের বিষয়ে হাইকোর্টের মাটি ভরাটে নিষেধাজ্ঞার প্রথম আদেশ বহাল থাকে। পরবর্তী সময়ে আপিল বিভাগের আদেশ ভঙ্গ করে নূর আলী সোনারগাঁ ইকোনমিক জোনের নামে মাটি ভরাট অব্যাহত রাখলে বেলা আদালত অবমাননার মামলা (নং-২৭/২০১৭) এবং আদালত অবমাননার মামলা (নং-৮১/২০১৭) দায়ের করে। অব্যাহত মাটি ভরাটের প্রমাণস্বরূপ বেলা পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন এবং উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করেন।

বেলার পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন সিনিয়র আইনজীবী ফিদা এম কামাল, অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মিনহাজুল হক চৌধুরী, আলী মুস্তফা খান সাঈদ আহমেদ কবীর। অন্যপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা, অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম, আবু তালেব প্রমুখ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন