ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না ভিয়েতনামের চাল রফতানি

১১ মাসে রফতানি সাড়ে ৫৭ লাখ টন

বণিক বার্তা ডেস্ক

করোনা মহামারীর মধ্যে জনগণের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা অভ্যন্তরীণ খাদ্যশৃঙ্খল নির্বিঘ্ন রাখতে প্রায় এক মাস চাল রফতানি বন্ধ রেখেছিল ভিয়েতনাম। এর প্রভাব পড়েছে দেশটির চাল রফতানিতে। চলতি বছরের প্রথম ১১ মাসে (জানুয়ারি-নভেম্বর) দেশটি থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যটির রফতানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় শতাংশের বেশি কমে ৫৮ লাখ টনের নিচে নেমে এসেছে। ভিয়েতনামের রাষ্ট্রায়ত্ত জেনারেল স্ট্যাটিস্টিকস অফিসের (জিএসও) সর্বশেষ মাসভিত্তিক প্রতিবেদনে তথ্য জানানো হয়েছে। ২০২০ সাল শেষ হতে আর মাত্র এক মাস বাকি। ফলে চলতি বছর করোনার আঘাত সামলে চাল রফতানির বার্ষিক লক্ষ্যপূরণে ভিয়েতনাম বেশ পিছিয়ে থাকবে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। খবর রয়টার্স সিনহুয়া।

ভিয়েতনাম বিশ্বের পঞ্চম শীর্ষ চাল উৎপাদনকারী দেশ। খাদ্যপণ্যটির রফতানিকারদের বৈশ্বিক শীর্ষ তালিকায় দেশটি তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। ভিয়েতনামের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ১১ মাসে দেশটি থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ৫৭ লাখ ৪০ হাজার টন চাল রফতানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় দশমিক শতাংশ কম।

তবে বছরের প্রথম ১১ মাসে কমলেও মাসভিত্তিক হিসেবে গত নভেম্বরে ভিয়েতনাম থেকে চাল রফতানি বাড়তির পথে ছিল। ভিয়েতনামের মিনিস্ট্রি অব এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট জানিয়েছে, ২০২০ সালের নভেম্বরে ভিয়েতনাম থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে লাখ ৮৮ হাজার টন চাল রফতানির হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় গত মাসে ভিয়েতনাম থেকে খাদ্যপণ্যটির রফতানি বেড়েছে দশমিক শতাংশ।

অক্টোবরে ভিয়েতনামের চাল রফতানিতে রীতিমতো ধস নেমেছিল। দেশটির সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত অক্টোবরে ভিয়েতনাম থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে লাখ টন চাল রফতানির হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৩ দশমিক শতাংশ কম। অক্টোবরের রেকর্ড পতনের পর নভেম্বরে ভিয়েতনামের চাল রফতানি ঘুরে দাঁড়ালেও সম্মিলিত হিসেবে বছরের প্রথম ১১ মাসে দেশটি থেকে খাদ্যপণ্যটির রফতানিতে মন্দা ভাব বজায় রয়েছে।

এর মধ্য দিয়ে ভিয়েতনামের বার্ষিক চাল রফতানির লক্ষ্যপূরণ নিয়ে সংশয় আরো জোরালো হয়েছে। গত বছর ভিয়েতনাম থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ৬৩ লাখ টন চাল রফতানি হয়েছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে ভিয়েতনাম ফুড অ্যাসোসিয়েশন। আয় হয় ২৮০ কোটি ডলার। প্রবৃদ্ধির ধারা ধরে রাখতে চলতি বছর ভিয়েতনাম থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে ৬৭ লাখ টন চাল রফতানির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

তবে বছরের প্রথম ১১ মাসের রফতানির চিত্র বিশ্লেষণ করলে লক্ষ্য পূরণ নিয়ে সংশয় রয়ে যাচ্ছে। বছর শেষ হতে এক মাস বাকি। এখন পর্যন্ত খাদ্যপণ্যটির বার্ষিক রফতানিতে লক্ষ্যের তুলনায় ১০ লাখ ৪৮ হাজার টন পিছিয়ে রয়েছে দেশটি। ডিসেম্বরে ভিয়েতনাম থেকে ১০ লাখ টনের বেশি চাল রফতানির সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তাই চলতি বছর ভিয়েতনামের চাল রফতানিতে লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব হবে না বলে মনে করা হচ্ছে।

একই সম্ভাবনার কথা বলছে মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) ফরেন এগ্রিকালচারাল সার্ভিস। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে ভিয়েতনাম থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ৬৪ লাখ টন চাল রফতানির সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দেশটি থেকে খাদ্যপণ্যটির রফতানি আগের বছরের তুলনায় দশমিক ৪৮ শতাংশ কমতে পারে।

গত বছর ভিয়েতনাম থেকে মোট ৬৭ লাখ টন চাল রফতানি হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউএসডিএ। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ভিয়েতনামের চাল রফতানি কমতে পারে তিন লাখ টন। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালে ভিয়েতনামের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ৭৭ লাখ ১৭ হাজার টন চাল রফতানি হয়েছিল, যা আগের বছরের তুলনায় ১০ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি।

চলতি বছর চাল রফতানির লক্ষ্য পূরণে পিছিয়ে থাকার পেছনে করোনা মহামারীকে দায়ী করছেন ভিয়েতনামের চাল রফতানিকারকরা। তারা জানান, মার্চের শেষভাগে চাল রফতানিতে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ভিয়েতনাম সরকার। মূলত করোনাকালে জনগণের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা অভ্যন্তরীণ খাদ্যশৃঙ্খল নির্বিঘ্ন রাখতে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তবে মে মাসে এসে বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় ভিয়েতনাম সরকার। ফলে দেশটি থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে চাল রফতানি ফের শুরু হয়। তবে দেশটির চাল রফতানিতে এর প্রভাব এখনো রয়ে গেছে। বছর শেষেও করোনার প্রভাব কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না ভিয়েতনামের চাল রফতানি খাত।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন