ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়া অক্সফোর্ডের তৈরি তিন কোটি কভিড-১৯ ভ্যাকসিন বিনা মূল্যে বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। সেই সঙ্গে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় সর্বোচ্চ জরিমানায় কাজ না হলে মাস্ক না পরার অপরাধে জেল দেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি ।
মন্ত্রিসভার গতকালের বৈঠকে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ ও সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রীরা ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন। বৈঠকের শুরুতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলা ও ভ্যাকসিন সংগ্রহের সর্বশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে মন্ত্রিসভাকে জানানো হয়।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের দেয়া ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘অক্সফোর্ডের তৈরি নভেল করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের জন্য ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে অক্সফোর্ডের তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে সিরাম ইনস্টিটিউট। গত ১৪ অক্টোবর কভিড-১৯ ভ্যাকসিন সংগ্রহের জন্য অক্সফোর্ডের তৈরি ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত ভ্যাকসিন বাংলাদেশ সরকারের কাছে তিন কোটি ডোজ বিক্রির প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন। গত ৫ নভেম্বর স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সঙ্গে সিরাম ইনস্টিটিউট ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হয়। এরপর ১৬ নভেম্বর অর্থ বিভাগ ভ্যাকসিন কেনার জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে ৭৩৫ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। ভ্যাকসিন কেনার জন্য অর্থনৈতিক ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে প্রস্তাব পাঠাবে। এ প্রস্তাব চলে এসেছে।’
ভ্যাকসিন কারা পাবে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রথমে কারা পাবে, দ্বিতীয় ধাপে কারা পাবে তা নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) একটা গাইডলাইন আছে। সে অনুযায়ী তারা (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়) একটা প্রোগ্রাম ডেভেলপ করছে। প্রথমে ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার, পুলিশ, প্রশাসনের লোক যারা মাঠে চাকরি করছে তারা, তারপর বয়স্ক লোক, শিশু—এ রকম একটা প্রটোকল আছে।
তিনি আরো বলেন, ‘মানুষকে এ ভ্যাকসিন বিনা পয়সায় দেয়া হবে। টাকা সরকার পে করে দিচ্ছে। তিন কোটি ভ্যাকসিন ফ্রি দেয়া হবে।’ ভ্যাকসিন বিতরণ নিয়ে কেউ অনিয়ম করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
সরকার কত টাকায় ভ্যাকসিন কিনছে—জানতে চাইলে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘ক্রয়ের চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না।’
অন্যান্য ভ্যাকসিনের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আরো অনেকগুলো ভ্যাকসিনের বিষয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে যোগাযোগ রাখছে। এখনই বলা যাচ্ছে না কোনটা বেশি ইফেক্টিভ হবে। আমাদের ১ নম্বর কন্ডিশন হলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল মানতে হবে।’
মাস্ক পরার বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আগেই আমরা বলেছি, এই সপ্তাহ থেকে (যারা মাস্ক পরছে না তাদের বিরুদ্ধে) আরেকটু স্ট্রং অ্যাকশনে যাব। আমার মনে হয়, ঢাকার বাইরে পজিটিভ; ডিসিরা বলছেন, জেলা সদরে মানুষ মোটামুটি কেয়ারফুল (সচেতন) হচ্ছে। ঢাকা শহরে বোধহয় এখনো পুরোপুরি কেয়ারফুল হয়নি; তবে মোটামুটি একটা বার্তা যাচ্ছে যে (মাস্ক না পরলে) ফাইন হয়ে যাবে, ফাইন (জরিমানা) দিতে হবে ৫০০ টাকা। বলেছি এখন থেকে ম্যাক্সিমাম ফাইন করো, না হলে আমরা আরো ইনস্ট্রাকশন দেব। বলেছি সর্বোচ্চ জরিমানা করতে।’
তিনি বলেন, ‘আস্তে আস্তে আমরা...তারপর জেলে যেতে হবে। কী করবে, না যদি শোনে, আমরা তো উই ক্যান নট টেক রিক্স (ঝুঁকি নিতে পারি না), আমাদের যতটুকু সম্ভব করতে হবে, আমরা বলে দিয়েছি। আমরা আর সাত থেকে ১০ দিন দেখব, তারপর ইনস্ট্রাকশন দিয়ে দেব—আরো কঠোর পানিশমেন্টে (শাস্তি) যাও। যথাসম্ভব বেশি করে ফাইন করা হবে এবং স্ট্রং পানিশমেন্ট দেয়া হবে।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নীতিমালা, ২০২০’-এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। নীতিমালা অনুযায়ী, জরুরি সেবার হটলাইন নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করে মিথ্যা, বানোয়াট, গুজব ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিলে শাস্তির মুখে পড়তে হবে।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় সম্পদ, জননিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা, অপরাধ দমন, জনগণের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধানে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। জনজীবনের সফলতা ও সম্ভাবনার বিষয়ে আলোচনান্তে ইমার্জেন্সি সার্ভিস পলিসি ৯৯৯ তথা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। নীতিমালায় বলা হয়েছে, মিথ্যা, বানোয়াট, গুজব ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য যদি দেয়, তবে সেটাও দেখা হবে। দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে অভিহিত হবে। বাচ্চা ছেলে বা কেউ যদি না বুঝে করে দ্যাট উইল বি কনসিডার। তবে যদি চিট করতে চায়, ইচ্ছা করে যদি কেউ কিছু করতে চায় দ্যাট উইল বি পানিশ্যাবল। সেজন্য রেসপেক্টিভ আইন প্রযোজ্য হবে। মিথ্যা তথ্য দেয়ার শাস্তি পেনাল কোডে আছে। কে কোথা থেকে ফোন করতেছে, সেটা টোটালি ডিটেক্টের ব্যবস্থা থাকবে। সুতরাং কেউ সহজে ফলস রিং করতে যাবে না।’
বৈঠকে ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ সম্পর্কে মন্ত্রিসভাকে অবহিত করে পরিকল্পনা বিভাগ। এছাড়া তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়ে প্রণীত পাঁচটি কৌশলপত্র সম্পর্কে মন্ত্রিসভাকে অবহিত করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ।