চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ভারতের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি গত বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় কমেছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। টানা দুই প্রান্তিকে অর্থনৈতিক সংকোচনের জেরে ১৯৪৭ সালের পর এই প্রথম কৌশলগত মন্দায় পড়ল ভারত। শুক্রবার প্রকাশিত সরকারি উপাত্তে এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর ব্লুমবার্গ ও এএফপি।
সপ্তাহ দুয়েক আগেই মন্দার পূর্বাভাস দিয়েছিল ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই)। জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতে জানানো হয়েছিল, দেশটির অর্থনীতি মন্দার মুখোমুখি। এবার আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি নিশ্চিত করল সংশ্লিষ্ট ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।
এর আগে একাধিক অর্থনীতিবিদ ও আরবিআইয়ের ডেপুটি গভর্নরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দ্বিতীয় চতুর্থাংশে ফের নিচে নেমেছে অর্থনীতির সূচক, যা ভারতকে এক অভূতপূর্ব মন্দার দিকে ঠেলে দেবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকটির ডেপুটি গভর্নর মাইকেল পাত্রের নেতৃত্বাধীন বিশেষজ্ঞ দল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়া অর্থবছরের প্রান্তিকে তাদের জিডিপি ৮ দশমিক ৬ শতাংশ সংকুচিত হতে যাচ্ছে।
ভারতের পরিসংখ্যান মন্ত্রণালয় শুক্রবার জানায়, চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে জিডিপি কমেছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। প্রথম প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) জিডিপি কমেছিল রেকর্ড ২৪ শতাংশ। টানা দুই প্রান্তিকে সংকোচনের মানে হচ্ছে কৌশলগত মন্দায় পড়েছে ভারত।
মন্ত্রণালয়টি বিবৃতিতে জানায়, কভিড-১৯ সংক্রমণ ঠেকাতে অর্থনৈতিক কার্যক্রমের রাশ টেনে ধরায় এ প্রভাব পড়েছে। যদিও লকডাউন বিধিনিষেধ ধীরে ধীরে শিথিল হচ্ছে, কিন্তু অর্থনৈতিক কার্যক্রমে এখনো তার প্রভাব রয়ে যাচ্ছে।
ম্যানুফ্যাকচারিং খাত কিছুটা চাঙ্গা হলেও সেবা খাতগুলোয় এ নিয়ে টানা দুই প্রান্তিকে দুই অংকের সংকোচন হয়েছে। ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের ভারতবিষয়ক জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ শীলন শাহ বলেন, সংকট মোকাবেলায় সরকারের পর্যাপ্ত প্রণোদনার অভাবে সরকারি ব্যয় কমেছে।
একটি গবেষণাপত্রে তিনি আরো বলেন, কভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় যে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হচ্ছে, তা অর্থনীতিতে ভয়াবহ প্রভাব রাখছে এবং এক্ষেত্রে টিকা আবিষ্কার সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক ঘটনা।
অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের ভারত ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক প্রধান প্রিয়াংকা কিশোর মনে করেন, সবার কাছে টিকা পৌঁছানো একটি বড় চ্যালেঞ্জ এবং আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ের আগে তার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। ফলে কভিড-১৯ আরো কয়েক প্রান্তিক যে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব রাখবে তা স্পষ্ট। আগামী দিনগুলোয় ভারতের জন্য যে কঠিন দিন অপেক্ষা করছে, এ বিষয়ে একমত পোষণ করেন শীলন শাহ ও প্রিয়াংকা কিশোর।
গত মার্চে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কর্তৃক কঠোর লকডাউন আরোপের ফলে সাধারণ পণ্য ও সেবার চাহিদা তলানিতে গিয়ে ঠেকে। কঠোর এ পদক্ষেপ সত্ত্বেও ভারতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কভিড-১৯ আক্রান্ত রয়েছে।
দেশটির সেবা খাতের বড় অংশ জুড়ে রয়েছে আর্থিক, নির্মাণ ও আবাসন খাত। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে দেশটির এ খাত গত বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় ৮ দশমিক ১ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। এছাড়া ট্রেড, হোটেল ও পরিবহন এবং যোগাযোগ খাতের সংকোচন হয়েছে ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ। অন্যদিকে ম্যানুফ্যাকচারিং, বিদ্যুৎ ও গ্যাস এবং কৃষি খাত সম্প্রসারিত হয়েছে যথাক্রমে শূন্য দশমিক ৬, ৪ দশমিক ৪ ও ৩ দশমিক ৪ শতাংশ।
অর্থনীতি চাঙ্গায় একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে আরবিআই ও সরকার। এ পর্যন্ত তাদের প্রণোদনা প্যাকেজের আকার দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার ৫০০ কোটি ডলার, যা দেশটির মোট জিডিপির ১৫ শতাংশ। চলতি বছরে সুদের হার ১১৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়েছে আরবিআই। আগামী সপ্তাহে পরবর্তী মনিটারি পলিসি মিটিংয়ে বসার কথা ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকটির।