পর্যালোচনা

গ্রামীণ অর্থনীতির বিস্ময়কর রূপান্তরে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি

ড. আতিউর রহমান

সামনেই বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী। গত পাঁচ দশকে আমরা অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে এসেছি। আজকে যখন পেছন ফিরে তাকাই, তখন দেখতে পাই বহু চড়াই-উতরাই ডিঙিয়ে গত পাঁচ দশকে আমরা আসলেই অনেকটা পথ অতিক্রম করেছি। প্রতিকূল বিশ্বব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে দেশের ভেতরে ও বাইরের অসংখ্য চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে বাংলাদেশ আজ নিজেকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে এসেছে। এক সময়ের ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ থেকে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের রোলমডেল হয়ে ওঠাটা নিঃসন্দেহে বিস্ময়কর। আনন্দেরও। তবে এই অতুলনীয় রূপান্তরের গল্পটির মূলসূত্র সন্ধান করলে দেখতে পাই যে বাংলাদেশের যাত্রার শুরুতেই এ সাফল্যের বীজ বোনা হয়ে গিয়েছিল। সেই বীজ বুনেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর মুক্তির ডাকে লড়াকু এক জাতির আত্মপ্রত্যয় ফুটে উঠেছিল। সেই লড়াকু মনের বীর মুক্তিযোদ্ধারাই রক্তের বিনিময়ে অর্জন করেছেন স্বাধীন বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশেও আমরা তাঁর সেই উদ্দীপক নেতৃত্বের পরশ দেখতে পাই। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের শুরু থেকেই তাঁর ভাবনার প্রধান জায়গায় ছিল এ দেশের দুঃখী ও মেহনতি মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। তাঁর নিজের ভাষায়, ‘এদের মুখে হাসি ফোটাতে হবে, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে হবে, এদের খাবার দিতে হবে। ...আমার আদর্শ হলো বাংলাদেশকে স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ইজ্জত সহকারে দুনিয়াতে বাঁচিয়ে রাখা, বাংলার দুঃখী মানুষকে পেট ভরে খাবার দিয়ে শোষণমুক্ত সমাজ গঠন করা, যেখানে অত্যাচার জুলুম থাকবে না, দুর্নীতি থাকবে না’ (মোনায়েম সরকার সম্পাদিত, ‘বাঙালির কণ্ঠ’, আগামী প্রকাশনী, ১৯৯৮. পৃ. ৪৩১)। দেশের ভেতরের ও বাইরের চক্রান্তকারীদের অপতত্রতায় বঙ্গবন্ধুর সে স্বপ্নের অভিযাত্রা হঠাৎ করেই থমকে গিয়েছিল ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট। তারপর বহু ত্যাগ ও সংগ্রামের পর বাংলাদেশ আবার সে পথে ফিরেছে তাঁর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে। কাজেই আজ মাথাপিছু আয়সহ বিভিন্ন সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচক এবং মানব উন্নয়নের অধিকাংশ সূচকে বাংলাদেশ যখন সমতুল্য অন্য দেশগুলোকে পেছনে ফেলছে, তখন এই অর্জনকে বঙ্গবন্ধুর দর্শন ও স্বদেশ চিন্তার ধারাবাহিক ও কার্যকরভাবে অনুসরণ ও বাস্তবায়নের সুফল হিসেবে মানতেই হবে।

বদলে যাওয়া বাংলাদেশকে আমরা এখন নানা প্রান্তেই দেখতে পাচ্ছি। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অর্থনীতির রূপান্তর গ্রামকে বাদ দিয়ে সম্ভব নয়। কাজেই বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা নগরায়ণ আর নগরকেন্দ্রিক শিল্পায়নে আটকে থাকেনি। সত্তরের দশকের শেষ ভাগে এ দেশ নিয়ে অর্থনীতিবিদ কিংবা উন্নয়ন গবেষকদের লেখাপত্রে দেখা যায় এক করুণ চিত্র। বাংলাদেশের গ্রামগুলোয় সত্যিই মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছিল নাগরিকরা। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুসারে, ওই সময়টায় দেশের ৮০ শতাংশ মানুষই দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছিল। দারিদ্র্যের কশাঘাতে সবচেয়ে জর্জরিত ছিল গ্রামবাসী। একদিকে তাদের ঘরে খাবার ছিল না, পরিবারের আকার ছিল বড়, শিশুমৃত্যু হার ছিল উচ্চ, সম্ভাব্য আয়ুষ্কাল খুবই ক্ষুদ্র, সুপেয় পানি ও নির্ভরযোগ্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সুযোগ ছিল না বললেই চলে। অন্যদিকে আয়ের জন্য তারা প্রায় এককভাবে কৃষি খাতের ওপর নির্ভরশীল ছিল। দুর্বল কৃষি খাতের কারণে তাদের অর্থনৈতিক শক্তি বৃদ্ধির সম্ভাবনাও ছিল ক্ষীণ। অথচ তার দু-তিন দশকের মধ্যেই নাটকীয় ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটতে থাকে গ্রামবাংলায়। এখন তো পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। দারিদ্র্যের হার আগের তুলনায় চার ভাগের এক ভাগে নামিয়ে আনা গিয়েছে (২০ শতাংশের আশেপাশে), কৃষি উৎপাদন বহুগুণে বেড়েছে, কৃষি শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে পাঁচ থেকে দশ গুণ, বিদ্যুৎ সংযোগ, সেলফোনের সহজলভ্যতা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ বৃদ্ধির ফলে গ্রামীণ জীবনমান বেড়েছে ঈর্ষণীয় মাত্রায়। সর্বোপরি কৃষির বাইরে অকৃষি খাতে গ্রামাঞ্চলেও নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। গ্রামীণ আয়ের বড় অংশটিই এখন আসছে অকৃষি খাত থেকে। দেশের গ্রামাঞ্চল একদিকে বর্ধিষ্ণু শিল্প ও সেবা খাতের কাঁচামাল ও মূল্য সংযোজিত পণ্য/সেবা সরবরাহ করছে, অন্যদিকে গ্রামাঞ্চলে মানুষের আয় বৃদ্ধির ফলে নতুন ভোক্তা হিসেবে তারা অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা বৃদ্ধিতেও রাখছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। অর্থনৈতিক কাঠামোর ভেতরে এই মাত্রার স্বনির্ভরতা রয়েছে বলেই এই করোনা মহামারীকালেও বাংলাদেশের অর্থনীতি অন্য অনেক উন্নয়নশীল এমনকি উন্নত দেশের চেয়েও ভালো করছে। অবশ্য, করোনা মহামারী অতিদারিদ্র্য ও দারিদ্র্য উভয় ক্ষেত্রেই বড় রকমের আঘাত হেনেছে। তবে গ্রামের চেয়ে শহরেই এই আঘাত বেশি করে লেগেছে। কেননা শহরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বড় অংশই জীবিকার জন্য অনানুষ্ঠানিক খাতের ওপর নির্ভরশীল। আর মহামারীর আঘাতটা সেখানেই বেশি করে পড়েছে।

তা সত্ত্বেও একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, গত এক দশকে গ্রামীণ অর্থনীতিতে যে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে তা সত্যিই অতুলনীয়।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুবিবেচনাপ্রসূত নীতি ও সেগুলোর বেশির ভাগের সুদক্ষ বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশের প্রায় সব গ্রাম এখন নগরের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরেছে। একই সঙ্গে মানুষের নিজেদের উদ্যোগ, সামাজিক পুঁজির প্রয়োগ এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্রিয়তার কথাও ভুললে চলবে না। ব্যক্তি খাতও কিন্তু পিছিয়ে নেই। গ্রামেও এখন সেবা খাতের তত্পরতা প্রায় সমান দৃশ্যমান। চায়ের দোকান, কফিশপ, রেস্তোরাঁ, সেলুন, বিউটি পার্লার, কিন্ডারগার্টেন স্কুল, কোচিং সেন্টার, হেলথ ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সাইবার ক্যাফের উপস্থিতি এখন গ্রামাঞ্চলেও খুব স্বাভাবিক। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে মাথাপিছু কৃষিজমির পরিমাণ কমেছে ঠিকই, কিন্তু সেবা খাতের ব্যাপক প্রসারের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলে অকৃষি কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে তা সামাল দেয়া গেছে ভালোভাবেই। পরিসংখ্যান বলছে, এখন গ্রামীণ আয়ের ৬০ শতাংশ আসে অকৃষি খাত থেকে। নানামাত্রিক উদ্যোক্তারা এই অকৃষি খাতের সঙ্গে যুক্ত। তরুণ শিক্ষিত উদ্যোক্তা, বিশেষ করে ডিজিটাল উদ্যোক্তারা এ খাতে এখন বেশি বেশি যুক্ত হচ্ছেন। অকৃষি খাতের এই উন্নতির পেছনে কৃষি খাতের ভূমিকাও কম নয়। উপকরণ সরবরাহ ও চাহিদার জোগান দিয়ে কৃষি অকৃষি খাতকে চাঙ্গা রাখছে। বস্তুত আমরা দুই পায়েই হাঁটছি।

ভুললে চলবে না যে এখনো মোট শ্রমশক্তির ৪০ শতাংশ কৃষি খাতেই নিযুক্ত। ভবিষ্যতেও এ খাতে শ্রমশক্তির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ যুক্ত থাকবে তা বোঝা যায়। সরকারও তাই কৃষির দিকে নীতি মনোযোগ অব্যাহত রেখেছে। নিঃসন্দেহে দিনবদলের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের কৃষিও বদলে গেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ধারাবাহিকভাবে প্রতিটি বাজেটে কৃষি খাতে বাড়তি বরাদ্দ দিয়েছেন। বস্তুত তিনি কৃষিতে ভর্তুকি নয়, বিনিয়োগ বাড়িয়েছেন। গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য নীতিনির্ধারকরা বিশেষ মনোযোগ দিয়েছেন কৃষির যান্ত্রিকীকরণ ও আধুনিকায়নে। শিক্ষিত তরুণারও তাই আজকাল নতুন করে কৃষির দিকে ঝুঁকছেন। কৃষি গবেষণায় বেশি বেশি নীতি সমর্থন থাকায় নতুন নতুন জাতের ধান, গম, ভুট্টা ও সবজির উৎপাদন বেড়েছে। আর জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিশ্বনেতৃত্ব দেয়া আমাদের প্রধানমন্ত্রী কৃষিকে টেকসই করাকে অগ্রাধিকার দেবেন, সেটাই স্বাভাবিক। এরই মধ্যে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার জন্য প্রতিকূল পরিবেশসহিষ্ণু ১৩টি জাতের ধান উদ্ভাবন করেছে। তাছাড়া ২০১৩ সালে বিশ্বে প্রথমবারের মতো জিংকসমৃদ্ধ ধানের জাত উদ্ভাবন করেন আমাদের কৃষি গবেষকরা। এর বাইরে পাটের কয়েকটি নতুন জাত উদ্ভাবনের পাশাপাশি পাটের জীবনরহস্যও উন্মোচন করেছে বাংলাদেশ পাট গবেষণা প্রতিষ্ঠান। কৃষিতে এমন বিপ্লবের ফল হিসেবেই ১৯৭২-এর তুলনায় আজ আমাদের উৎপাদন ২৫ গুণেরও বেশি। আমাদের কৃষকরা ৮০-৯০ শতাংশ প্রযুক্তিনির্ভর। আমাদের খাদ্য উৎপাদন সূচকের মান ১৪৫ দশমিক ৩ (২০১৬ সালের হিসাব)। পেছনে ফেলেছি ভারত (১৪৪), চীন (১৩৯), ভিয়েতনাম (১৩৬), শ্রীলংকা (১৩১) ও পাকিস্তানকে (১৩০)। সরকারের যুগোপযোগী পরিকল্পনা, পরিশ্রমী কৃষক, মেধাবী কৃষিবিজ্ঞানী ও সম্প্রসারণ কর্মীদের পাশাপাশি ব্যক্তি খাত ও অ-সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর যৌথ প্রয়াসেই এ সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়েছে।

আমরা জানি যে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে জীবনমানের যে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে, তার পেছনে কাজ করেছে কৃষির আধুনিকায়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, অ-কৃষি খাতের বিস্তার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রসার এবং সর্বোপরি প্রবাসী আয় বৃদ্ধি। তবে এ সবগুলো শক্তিকে একসূত্রে গাঁথতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে সরকারের যথাযথ সহায়তায় এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেতৃত্বে পরিচালিত আর্থিক অন্তর্ভুক্তির অভিযান। এক দশক আগে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বে যে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির অভিযান শুরু করেছিলাম, তার পেছনে মূল ভাবনাটিই ছিল সামাজিক পিরামিডের পাটাতনে থাকা প্রান্তিক ও গ্রামীণ জনগণের কাছে সহজে উপযোগী আর্থিক সেবা পৌঁছে দেয়া। উন্নয়নমুখী কেন্দ্রীয় ব্যাংকিংয়ের দর্শনের জায়গা থেকেই আমরা সর্বাত্মক কাজ করার চেষ্টা করেছি। চেষ্টা ছিল (১) কৃষি অর্থায়নে আনুষ্ঠানিক আর্থিক সেবাদাতাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করার, (২) ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের বিকাশে সহায়ক নীতি প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন তদারকি করা, (৩) নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে কৃষি ও অকৃষি খাতে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আর্থিক সেবা নিশ্চিত করা এবং (৪) প্রবৃদ্ধি যেন সবুজ তথা পরিবেশবান্ধব হয়, সেদিকে বিশেষ নজর রাখা। আর এসব লক্ষ্য অর্জনে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে সংগত কারণেই বেছে নেয়া হয়েছিল সর্বাধুনিক ডিজিটাল আর্থিক প্রযুক্তির উদ্ভাবনী প্রয়োগকে। এর সুফলও আমরা দেখেছি। মাত্র অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই দেশের আর্থিক খাতে ঘটে গেছে এক নীরব বিপ্লব। আর এ কারণেই গ্রামাঞ্চলে কৃষি ও অকৃষি খাতের কাঙ্ক্ষিত বিকাশ যেমন নিশ্চিত করা গেছে, তেমনি প্রবাসী আয় সহজে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে পৌঁছানোর ফলে গ্রামীণ অর্থনীতি ক্রমেই চাঙ্গা হয়েছে। শুনে অবাকই লাগে জুলাই-সেপ্টেম্বর এই তিন মাসে এজেন্ট ব্যাংকের এজেন্টরা ৩০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকার রেমিট্যান্স উপকারভোগীদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। আগের বছরের ওই সময় থেকে তা ২২১ শতাংশ বেশি। পাশাপাশি মোবাইল আর্থিক সেবা তো আছেই।

সাম্প্রতিক দশকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি প্রসারিত হওয়ায় এ দেশে গ্রামীণ বাস্তবতায় নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে, একথা সত্য। তবে স্বাধীনতার পর পরই কিন্তু উদ্ভাবনী আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কর্মসূচিগুলোর কারণে গ্রামবাংলার ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে শুরু করেছিল। শুরুটা হয়েছিল এমএফআইগুলোর হাত ধরেই। সত্তর ও আশির দশকে সারা দেশেই বিস্তৃত হয়েছিল এমএফআইগুলো। এদের কারণেই যে দরিদ্র মানুষ আনুষ্ঠানিক আর্থিক সেবার বাইরে ছিল, তাদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি শুরু হয়েছিল, বেড়ে উঠেছিল গ্রামীণ অকৃষি খাত এবং খুদে ও মাঝারি উদ্যোক্তারা। তবে নতুন শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে এসে সরকারের যথাযথ নীতি সহায়তা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সময়োপযোগী দিকনির্দেশনা এ খাতের বিকাশকে এক নতুন মাত্রা দিয়েছে। প্রাথমিকভাবে এ দেশের মাইক্রো ফাইন্যান্স খাত প্রধানত দাতাদের সহায়তানির্ভর হলেও এখন এ খাত অনেকটাই স্বাবলম্বী। সত্যি বলতে, মাইক্রো ফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠানগুলোর তহবিলের ৮৪ শতাংশই এখন আসছে নিজস্ব উৎস থেকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে মাইক্রো ফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠানগুলোর যোগসূত্র গড়ে তোলায় এখন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও মাইক্রো ফাইন্যান্স তহবিলের নির্ভরযোগ্য উৎস হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। ২০১৮ সালের হিসাবমতে, মাইক্রো ফাইন্যান্স তহবিলের ১৩ শতাংশ সরবরাহ করছে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। গত এক দশকে মাথাপিছু মাইক্রো ফাইন্যান্স প্রদানের পরিমাণ বেড়েছে তিন গুণেরও বেশি। ২০০৯-১০ অর্থবছরে মাথাপিছু মাইক্রো ফাইন্যান্স দেয়া হয়েছিল প্রায় ১৪ হাজার টাকা। আর ২০১৭-১৮-তে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার টাকায়। ঋণ প্রদানের পরিমাণ বাড়লেও কিস্তির টাকা ফেরত পাওয়ার হার (রিকভারি রেট) ধারাবাহিকভাবে ৯০ শতাংশের ওপরেই ধরে রাখা গেছে। এ থেকে বোঝা যায় যে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মাইক্রো ফাইন্যান্স খাত আরো পরিণত হয়ে উঠছে। ফলে মাইক্রো ফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন নতুন উদ্ভাবনী কর্মসূচি নিয়ে হাজির হয়ে তাদের সেবার ব্যাপ্তি আরো বাড়াচ্ছে। যেমন মাইক্রো ইন্স্যুরেন্স নিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠানই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। একই রকম উদ্যোগ সরকারের তরফ থেকেও নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতি বছর গ্রামাঞ্চলের প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, সুপেয় পানি ও পয়োনিষ্কাশন, পরিবার পরিকল্পনা ও আইনি সেবা পাচ্ছে মাইক্রো ফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে।

গ্রামীণ অর্থনীতিতে মাইক্রো ফাইন্যান্সের ইতিবাচক প্রভাব সাম্প্রতিক কিছু পরিসংখ্যান থেকেই পাওয়া সম্ভব। সমুন্নয় পরিচালিত ২০১৮ সালের জরিপ থেকে দেখা যায়, মাইক্রো ফাইন্যান্স সেবা গ্রহণ করেছে এমন পরিবারগুলোর আয় ২০১০ থেকে ২০১৭ সাল সময়কালে বেড়েছে ৬১ শতাংশ, অথচ এ সেবা গ্রহণ করেনি এমন সমতুল্য পরিবারগুলোর আয় বেড়েছে ৪২ শতাংশ। ভোগের ক্ষেত্রেও যারা মাইক্রো ফাইন্যান্স সেবা পেয়েছে, তারা এগিয়ে আছে ৯ শতাংশ। আর ভোগব্যয় বৃদ্ধির ইতিবাচক প্রভাব কেবল গ্রামীণ অর্থনীতিতে পড়েছে এমন নয়, বরং অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির ফলে পুরো দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ভিত্তিই আরো মজবুত হয়েছে। 

তবে গ্রামাঞ্চলে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কিন্তু শুধু মাইক্রো ফাইন্যান্সেই আটকে নেই। বরং মূলধারার ব্যাংকিং সেবাও বিশেষ করে গত এক দশকে পৌঁছে দেয়া গেছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারী প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বে সাম্প্রতিক দশকে পরিচালিত ব্যাপকভিত্তিক আর্থিক অন্তর্ভুক্তির অভিযানে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারী এবং সচরাচর আনুষ্ঠানিক আর্থিক সেবার বাইরে থাকা নাগরিকদের কাছে সেবা পৌঁছে দেয়াকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। সামাজিক পিরামিডের পাটাতনে থাকারাও যেন সহজে ব্যাংকিং সেবা পান, সেজন্য এ সময়ে প্রায় ২ কোটি ১০ টাকার ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে, কৃষিঋণের সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে ১৩০ শতাংশ, বর্গাচাষীদের জন্য বিশেষ ঋণ প্রকল্পের আওতায় ১৬ লাখ কৃষিজীবীকে ঋণ দেয়া হয়েছে (যাদের মধ্যে বড় অংশটিই নারী)। অকৃষি খাতকে সহায়তার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে স্বতন্ত্র এসএমই বিভাগ খোলা হয়েছে, দেয়া হয়েছে সুবিবেচনাভিত্তিক এসএমই অর্থায়নের গাইডলাইন। এসএমই অর্থায়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যকর নির্দেশনা ও তদারকির ফলে ২০১০ থেকে ২০১৭ সময়কালে ৪৫ লাখ এসএমইকে প্রায় ৯৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়া সম্ভব হয়েছে। এর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ গ্রামের খুদে ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের কাছে গেছে, ফলে সেখানে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, কমেছে কৃষির ওপর নির্ভরতা। এছাড়া সিএমএসএমই ঋণের ১৫ শতাংশ নারী উদ্যোক্তাকে দেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকায় এ সময়ে চার লাখের বেশি নারী উদ্যোক্তা পেয়েছেন ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ। এসবের পাশাপাশি জামানতবিহীন হিসাবধারীদের জন্য ২৪ মিলিয়ন ডলারের পুনঃঅর্থায়ন কর্মসূচি, ১৫ লাখ স্কুল ব্যাংকিং হিসাবের মতো উদ্যোগগুলোর সুফলেরও বড় অংশ গিয়েছে গ্রামাঞ্চলে। 

বাংলাদেশে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী গ্রাহকদের কাছে সুলভে বিভিন্ন রকম আর্থিক সেবা পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে প্রধানতম ভূমিকাটি পালন করেছে ডিজিটাল প্রযুুক্তির কার্যকর প্রয়োগ। এক্ষেত্রে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) ও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এক দশক আগে এমএফএসের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জগুলো বিবেচনায় নিয়ে ‘ব্যাংক লেড মডেল’ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তিন-চার বছরের মধ্যেই সর্বস্তরের নাগরিকদের এমএফএস সেবার আওতায় নিয়ে এসে সারা বিশ্বের ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রোভাইডারদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সে সময়ের সাহসী ও সুবিবেচনাপ্রসূত উদ্যোগের সুফল পাওয়া গেছে করোনা পরিস্থিতিতে। করোনার মাসগুলোয় প্রতি মাসেই এমএফএস লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। কারণ আংশিক লকডাউনের সময় প্রায় সর্বস্তরের মানুষই নির্ভর করেছে মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেনের ওপর। জুলাই ২০২০-এর হিসাবমতে, ওই এক মাসে এমএফএস লেনদেনের পরিমাণ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৮ শতাংশ বেশি। মানুষ বেশি মাত্রায় এমএফএসের ওপর নির্ভর করার ফলস্বরূপ এ সেবার ওপর তাদের আস্থাও বেড়েছে। ফলে বেড়েছে এমএফএস হিসাবের সংখ্যাও। ফেব্রুয়ারি ২০২০-এ এমএফএস হিসাবের সংখ্যা ছিল ২ দশমিক ৭ কোটি, আর জুলাই নাগাদ এ সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে হয়েছে ৪ দশমিক ৩ কোটি। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে সামাজিক নিরাপত্তা ভাতাগুলো দ্রুত ও তুলনামূলক ত্রুটিহীনভাবে পৌঁছে দেয়া গেছে এমএফএসের মাধ্যমে। করোনাজনিত স্থবিরতার মধ্যেই জুলাই ২০২০-এ এমএফএসের মাধ্যমে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা দেয়া হয়েছে বিপন্ন মানুষকে। মানুষ দ্রুতই এমএফএস ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে ‘নিউ নরমাল’-এর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্য। নতুন সেবাও আসছে। সিটি ব্যাংক ও বিকাশ এমএফএসের মাধ্যমে ঋণ বিতরণের কর্মসূচি হাতে নিচ্ছে।

এজেন্ট ব্যাংকিংও প্রত্যন্ত অঞ্চলে পূর্ণাঙ্গ আর্থিক সেবার নয়া দিগন্ত উন্মোচন করেছে। ২০১৮-এ উন্নয়ন সমন্ব্বয় পরিচালিত মাঠ জরিপ থেকে দেখা যাচ্ছে যে ৫২ শতাংশ এজেন্ট ব্যাংকিং গ্রাহক জানিয়েছেন, এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটগুলো তাদের বসবাসের স্থানের খুব কাছাকাছি হওয়ায় তারা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় সময় বাঁচাতে পারছেন। আবার ৬৭ শতাংশ গ্রাহক জানিয়েছেন, এজেন্ট ব্যাংকি সেবা আসার আগে ব্যাংকে যাতায়াত বাবদ অর্থ ব্যয় করতে হলেও এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট কাছাকাছি হওয়ায় তাদের আর অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে না। কেবল সময় ও অর্থ সাশ্রয়ই নয়, এজেন্ট ব্যাংকিং সঞ্চয়ের প্রবণতাও বাড়াচ্ছে। যেমন উল্লিখিত জরিপে ২০ শতাংশ গ্রাহক জানিয়েছেন, তাদের এলাকায় এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু হওয়ায় তাদের পক্ষে সঞ্চয় করা সম্ভব হচ্ছে, অন্যথায় হতো না। এসব সুবিধার কথা বিবেচনা করেই গ্রাহকরা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের দিকে ঝুঁকছেন। সঞ্চয়ের জন্য গ্রাহকরা বেশি যাচ্ছেন এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটগুলোয়। তাই এ বছর মার্চ থেকে জুনের মধ্যেই এজেন্ট আউটলেটে জমার পরিমাণ তিন গুণ বেড়ে হয়েছে ১০ হাজার ২২০ কোটি টাকা। পাশাপাশি অর্থায়নেও এগিয়ে যাচ্ছে এজেন্ট ব্যাংকিং। গত বছরের তুলনায় এ বছরের জুনে প্রদত্ত ঋণ বেড়েছে তিন গুণেরও বেশি (৭২০ কোটি টাকা)। এজেন্ট ব্যাংকিং হিসাবের ৮৭ শতাংশ গ্রামে হওয়ায় গ্রামীণ অর্থনীতি সচল রাখতে এটি বিশেষ ভূমিকা রাখছে। তবে সম্প্রতি প্রবাসী আয় দেশে প্রেরণের ক্ষেত্রে সরকার ২ শতাংশ প্রণোদনা দেয়া শুরু করার পর গ্রামাঞ্চলের গ্রাহকরা রেমিট্যান্স তোলার জন্য ব্যাপক হারে এজেন্ট আউটলেটগুলোর ওপর আস্থা রাখছেন। চলমান ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (অর্থাৎ করোনা মহামারী চলমান অবস্থায়) ৩৮ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকার রেমিট্যান্স এসেছে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। আগের তিন মাসের তুলনায় এ পরিমাণ ৪৪ শতাংশ বেশি এবং তার আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২২১ শতাংশ বেশি। আমরা জানি, করোনাজনিত অর্থনৈতিক স্থবিরতার সময়ে এই রেমিট্যান্সই অর্থনীতি পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় অন্যতম সহায়ক শক্তি হিসেবে দাঁড়িয়েছে। কাজেই বোঝা যাচ্ছে এজেন্ট ব্যাংকিং কেবল গ্রামাঞ্চলে আর্থিক সেবার বিস্তারে ভূমিকা রাখছে তা নয়, পাশাপাশি সামষ্টিক অর্থনীতিতে শক্তিসঞ্চারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এগুলো। মোবাইল আর্থিক সেবার খরচ কীভাবে আরো কমিয়ে আনা যায়, এক্ষেত্রে মোবাইল অপারেটরগুলোর সহযোগিতা কী করে আরো বেশি পাওয়া যেতে পারে এবং কীভাবে সরকারের সেবাগুলো বেশি করে দেয়ার ব্যবস্থা করে ‘ইকোনমি অব স্কেল’-এর প্রসার ঘটানো যায়, এসব বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, বিটিআরসি ও সরকারকে একযোগে ভাবতে হবে। এছাড়া এমএফএস সেবাদাতাদের মধ্যে ‘ইন্টার অপারেবিলিটি’ নিশ্চিতকরণের দিকে এবং সার্ভিস চার্জের ক্ষেত্রে সমতাবিধানের মাধ্যমে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি করার দিকে নীতি মনোযোগ দিলে তা দীর্ঘমেয়াদে এ খাতের প্রসারকে টেকসই করবে।

উদ্ভাবনী আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নীতির কল্যাণে সর্বশেষ বৈশ্বিক মন্দার মুখেও সামষ্টিক অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে সক্ষম হয়েছিল বাংলাদেশ। একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে চলমান করোনাজনিত অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার ক্ষেত্রেও আর্থিক অন্তর্ভুক্তির অভিযানের ওই ধারাবাহিকতা ধরে রেখে উদ্ভাবনী ও ডিজিটাল আর্থিক সেবার টেকসই প্রসার নিশ্চিত করতে হবে। আর এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে হবে ‘অর্থনীতির রক্ষাকবচ’ কৃষি ও এসএমই খাতকে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে এবং/অথবা আগে আর্থিক সেবার আওতার বাইরে থাকা গ্রাহকদের কাছে সেবা পৌঁছাতে এমএফএস ও এজেন্ট ব্যাংকিং মডেলগুলোর কার্যকারিতা এরই মধ্যে প্রমাণিত। এক্ষেত্রে আরো উদ্ভাবনী কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন মানুষকে ডিজিটাল সেবার প্রতি আরো আস্থাশীল করে তুলবে এবং ফলস্বরূপ অর্থনীতির কাঙ্ক্ষিত গতিও নিশ্চিত করা যাবে। নিঃসন্দেহে গ্রামবাংলায় চালু হওয়া প্রচলিত ও অপ্রচলিত ব্যাংক হিসাব, মোবাইল ও এজেন্ট ব্যাংক হিসাব ব্যবহার করে কৃষি ও ক্ষুদ্র উদ্যোগ খাতের জন্য তৈরি প্রণোদনা কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়নে সৃজনশীল উদ্যোগ নেয়া গেলে গ্রামীণ অর্থনীতিকে আরো চাঙ্গা করা সম্ভব। আর এই চাঙ্গা গ্রামীণ অর্থনীতিই বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনীতিকে গতিময় ও স্থিতিশীল রাখতে মূল ইঞ্জিনের কাজ করবে।

ড. আতিউর রহমান: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর

[পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) পরিচালিত বাংলাদেশ পলিসি অ্যাডভোকেসি ইনিশিয়েটিভ (পিএআই)-এর অধীন প্রকাশিত]

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন