করোনা মহামারীর প্রভাব

ধসের মুখে দক্ষিণ কোরিয়ার ইস্পাত উৎপাদন

বণিক বার্তা ডেস্ক

আগে থেকেই মন্দার মুখে ছিল দক্ষিণ কোরিয়ার ইস্পাত শিল্প। উৎপাদন কমে আসায় গত বছর শীর্ষ ইস্পাত উৎপাদনকারীদের বৈশ্বিক তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অবস্থান হারায় দেশটি। চলতি বছর দক্ষিণ কোরিয়ার ইস্পাত উৎপাদনে রীতিমতো ধস নামতে যাচ্ছে। চার বছর পর ফের দেশটিতে শিল্প ধাতুটির বার্ষিক উৎপাদন সাত কোটি টনের নিচে নেমে আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এর পেছনে নভেল করোনাভাইরাসের মহামারীকে দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা। খবর মেটাল বুলেটিন বিজনেস কোরিয়া।

ওয়ার্ল্ড স্টিল অ্যাসোসিয়েশনের (ডব্লিউএসএ) হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বের পঞ্চম শীর্ষ ইস্পাত উৎপাদনকারী দেশ ছিল। ওই বছর দেশটির কারখানাগুলোয় সব মিলিয়ে কোটি ২৫ লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন হয়েছিল। গত বছর দক্ষিণ কোরিয়ায় শিল্প ধাতুটির বার্ষিক উৎপাদন কমে দাঁড়িয়েছে কোটি ১৪ লাখ টনে, যা আগের বছরের তুলনায় ১১ লাখ টন কম। এর মধ্য দিয়ে ইস্পাত উৎপাদনকারীদের বৈশ্বিক শীর্ষ তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে একধাপ অবস্থান হারিয়ে - নেমে এসেছে দেশটি।

চলতি বছর দক্ষিণ কোরিয়ার ইস্পাত শিল্পের চ্যালেঞ্জ আরো বেড়েছে। কোরিয়া আয়রন অ্যান্ড স্টিল অ্যাসোসিয়েশন (কেআইএসএ) ডব্লিউএসএর তথ্য বিশ্লেষণ করে বলা হচ্ছে, ২০২০ সালের প্রথম নয় মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) দক্ষিণ কোরিয়ার কারখানাগুলোয় কোটি ৯৬ লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় গত জানুয়ারি-সেপ্টেম্বরে দেশটিতে শিল্প ধাতুটির উৎপাদন কমেছে দশমিক শতাংশ।

দেশটিতে অপরিশোধিত ইস্পাতের উৎপাদন কমার দশমিক শতাংশ হার বৈশ্বিক গড়ের তুলনায় বেশি। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে বিশ্বজুড়ে শিল্প ধাতুটির উৎপাদন কমেছে দশমিক শতাংশ। এর মধ্যে জাপানে কমেছে ১৯ দশমিক শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্র ভারতে যথাক্রমে ১৮ দশমিক শতাংশ ১৬ দশমিক শতাংশ হারে ইস্পাত উৎপাদন কমে গেছে। গত জানুয়ারি-সেপ্টেম্বরে শুধু চীনে শিল্প ধাতুটির উৎপাদনে দশমিক শতাংশ প্রবৃদ্ধি বজায় ছিল।

কেআইএসএর এক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ার ইস্পাত উৎপাদন খাতে বিদ্যমান মন্দা ভাব বছরজুড়ে বজায় থাকতে পারে। ২০২০ সাল শেষে দেশটিতে শিল্প ধাতুটির বার্ষিক উৎপাদন নেমে আসতে পারে কোটি ৭০ লাখ টনে। সে হিসাবে ২০১৯ সালের তুলনায় চলতি বছর দেশটিতে ইস্পাত উৎপাদন কমতে পারে প্রায় ৪৪ লাখ টন।

এর আগে ২০১৬ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় সর্বশেষ সাত কোটি টনের নিচে ইস্পাত উৎপাদন হয়েছিল। ওই বছর দেশটিতে শিল্প ধাতুটির বার্ষিক উৎপাদন ছিল কোটি ৮৬ লাখ টন। সে হিসাবে চলতি বছর দক্ষিণ কোরিয়ায় শিল্প ধাতুটির উৎপাদন ২০১৬ সালের তুলনায় কমে আসার সম্ভাবনা দেখছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

বিষয়ে হানা ফিন্যান্সিয়াল ইনভেস্টমেন্টের পন্যবাজারবিষয়ক বিশ্লেষক পাক সুন-বং বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার ইস্পাত শিল্পের জন্য ২০২০ সাল ভীষণ চ্যালেঞ্জের একটি বছর। বছরের শুরু থেকে করোনা মহামারীর বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে ইস্পাত উৎপাদনে রীতিমতো ধস নেমেছে। সময় অনেক কারখানার কার্যক্রম হয় বন্ধ ছিল। নয়তো সীমিত করা হয়েছিল। বছরের মাঝামাঝি থেকে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে এলে শিল্প ধাতুটির উৎপাদন বাড়তে থাকে। তবে তা স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি। মূলত কারণে চলতি বছর দক্ষিণ কোরিয়ার ইস্পাত উৎপাদনে বড় পতন দেখা যেতে পারে।

এদিকে শীত মৌসুমের শুরুতেই অন্য অনেক দেশের মতো দক্ষিণ কোরিয়াতেও করোনা সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। চলতি বছরের শুরুর দিকে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সাফল্য দেখিয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়া। এখন নতুন করে সংক্রমণ শুরু হওয়ায় ফের লকডাউনে যেতে পারে দেশটি। পরিস্থিতি দক্ষিণ কোরিয়ার ইস্পাত শিল্পের চ্যালেঞ্জ আরো বাড়িয়ে দিতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন