এফবিসিসিআই ক্লাউড স্কলার কনক্লেভে বক্তারা

‘মহানবী (স.) মানবতা ও টেকসই উন্নয়নের পথপ্রদর্শক’

মহানবী হজরত মোহাম্মদ (স.) ছিলেন মানবতার পথপ্রদর্শক। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার মত আধুনিক সনদেও তার শিক্ষা ফুটে উঠেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কাজেও হজরত মোহাম্মদ (স.) এর শিক্ষা প্রতিফলিত হয়েছে। 

ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) উপলক্ষে গতকাল শনিবার ফেডারেশন অব চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই) আয়োজিত ‘এফবিসিসিআই ক্লাউড স্কলার কনক্লেভ অন লাইফ অ্যান্ড টিচিংস অব প্রফেট, মেসেঞ্জার অব পিস হজরত মোহাম্মদ (স.)’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তারা এই অভিমত তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এম আবদুল মোমেন। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম। অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, ইন্দোনেশিয়ার আল আযহার ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. আসেপ সাইফুদ্দিন, নাইজেরিয়ার ইসলামিক স্কলার শেখ আবুবকর এস মোহাম্মদ এবং তুরস্কের দ্য ইকোনমিক পলিসি রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর ও হিতিত ইউনিভার্সিটি স্কুল অব ডিভাইনিটির সহযোগী অধ্যাপক ড. হিলমি ডেমির। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. মুনতাকিম আশরাফ। এফবিসিসিআইয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহফুজুল হকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম রেজনু, মীর নিজাম উদ্দিন, নিজাম উদ্দিন রাজেশ ও পরিচালকবৃন্দ।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে বিশ্ব এক উদ্বেগপূর্ণ, হতাশাজনক এবং অস্থির সময় পার করছে। পরিতাপের বিষয় হলো, আমরা মুসলিম এবং ইসলামের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন, কুৎসামূলক, বৈষম্যমূলক এবং বর্ণবাদী মনোভাব এবং আচরণের মাধ্যমে ইসলামোফোবিয়ার ক্রম বৃদ্ধি দেখতে পারছি। অথচ আমাদের নবী (স.) সব ধর্মের অনুসারীদের প্রতি সহনশীলতা ও সহানুভূতি প্রদর্শনে অগ্রদূত ছিলেন।

তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়ন ইসলামের জন্য নতুন নয়। পবিত্র কোরান এবং হাদিস মানুষের শারীরিক ও আধ্যত্মিক কল্যাণের কাঠামো দেয়া আছে। কোরানে অন্তত ৫০০ আয়াত আছে, যা আমাদের পরিবেশের সঙ্গে আচরণ নিয়ে শিক্ষা দেয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি আমাদেও অভ’তপূর্ব অবস্থার দিকে ঠেলে দিয়েছে। একজন মুসলিম হিসেবে সব মানুষের প্রতি সদয় হওয়া আমাদের কর্তব্য।

তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবেলায় ত্বরিত এবং জোরালো পদক্ষেপ নিয়েছে। জাতি হিসেবে আমাদের প্রস্তুতির কারণে আমরা পরিবার এবং বন্ধুদের নিয়ে ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন করতে পেরেছি। আমরা এই প্রাণঘাতী ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভুগছি না। বরং আমরা এই মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় পদক্ষেপ নিচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, আমাদের মত অনেক দেশই এখন এই ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলা করছে। এই যুদ্ধ জিততে বৈশ্বিকভাবে সামষ্টিক পদক্ষেপ নেয়া দরকার। আমাদের ভুলে য্ওায়া উচিত নয় যে, একতাই আমাদের শক্তি এবং এটাই আমাদেও চুড়ান্ত বিজয়ী করবে।

এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, মহানবী (স.) মানুষকে বাড়িতে, সমাজে ও অন্যান্য ধর্মের প্রতি মানবিক হওয়া, কাজে দায়িত্বশীল হওয়া এবং সম্পর্কের প্রতি যত্মশীল হওয়ার বৈশ্বিক বার্তা দিয়ে গেছেন। একজন শিক্ষক হিসেবে মহানবীর (স.) অনেক অতুলনীয় গুণাবলী ছিল, যা সামগ্রিকভাবে তার আচরণ, বক্তব্য এবং কাজের দ্বারা প্রতিফলিত হয়েছে। চারিত্রিক দিক থেকে বিবেচনা করলে দেখা যায়, তার মধ্যে মানসিক ধীরতা, দূরদর্শী চিন্তা এবং কর্ম অনুযায়ী বিচারের গুণ ছিল। হুদাইবিয়ার সন্ধি এবং মদীনা সনদের ঘটনায় তার এসব গুণবলী প্রতিফলিত হয়েছে। এগুলো ছিল মানবীয় গুণাবলীর ধারক, যা জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার মত আধুনিক বিভিন্ন সনদে অনুসৃত হয়েছে।

তিনি বলেন, চলতি বছর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উদযাপিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন, নেতৃত্ব ও দূরদর্শিতায় হযরত মোহাম্মদ (স.) এর শিক্ষা প্রতিফলিত হয়েছে, যা গতিশীল অর্থনীতি, সামাজিকভাবে নারীর সমঅধিকার, স্বাধীনতাপূর্ব সময়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭৫ পর্যন্ত জাতীয় উন্নয়নে কৌশলে ফুটে উঠেছে। এ ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদেরকে মধ্যম আয়ের দেশের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি আমরা কোভিড-১৯ এর ঝাঁকুনি সামলে নিয়েছি। আমাদের লক্ষ্য হলো আগামী দুই বছরের মধ্যে কোভিড পূর্ব উন্নয়নের ধারায় ফিরে যাওয়া।

প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ব্যক্তির পারলৌকিক মুক্তি ছাড়্ওা সমাজে ধর্মের তিনটি ভূমিকা আছে। প্রথমত আচার ও বিশ্বাস ভাগাভাগির মাধ্যমে ধর্ম মানুষের মধ্যে সামাজিক ঐক্য ধরে রাখে। দ্বিতীয়ত ধর্মভিত্তিক নৈতিকতা সামাজিক নিয়ন্ত্রণ ও স্বাচ্ছন্দ্য বজায় রাখে। এবং সবর্শেষ এটি অস্তিত্ব সম্পর্কীয় যে কোন প্রশ্নের উত্তর উদ্দেশ্য নির্ধারণ করে দেয়।

তিনি বলেন, ধর্মীয় মূল্যবোধ কমতে থাকায় বিশ্বব্যাপী অসহিঞ্চুতা এবং অন্য ধর্মের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন বাড়ছে। হযরত মোহাম্মাদ (স.) এ ধরনের মানবসৃষ্ট সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন এবং নিয়ন্ত্রণে এনেছিলেন।

ইন্দোনেশিয়ার আসেপ সাইফুদ্দিন বলেন, ইসলামে মহামারী মোকাবেলাসহ সব সমস্যার সমাধান আছে। রোগের প্রাদুর্ভাব ঠেকানোর জন্য কোয়ারেন্টাইন খলিফা উমর ইবনে খাততাব (রা.) এর সময়ে প্রথম কার্যকর করা হয়।

নাইজেরিয়ার ইসলামিক স্কলার শেখ আবুবকর এস. মোহাম্মদ বলেন, আইয়ামে জাহিলিয়াতের সময় নারীদের সঙ্গে বিরুপ আচরণ করা হত। তাদের সব ধরনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। এমনকি কন্যা সন্তানকে জীবিত কবর দেয়া হত। মহানবী হয়রত মোহাম্মদ (স.) এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ান। তিনি নারীদের স্বাধীনতা ও মুক্তির অনুমোদন করে এমন সমাজের ভিত্তি তৈরি করেছিলেন, যা তার আগে কেউ করেনি।

তুরস্কের ড. হিলমি ডেমির বলেন, ইসলাম পরিবেশের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে মানুষের ভূমিকা ঠিক করে দেয় এবং মানুষের সামাজিক আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে এমন প্রাকৃতিক আইনেরও বিধান দেয়। টেকসই উন্নয়নের বস্তুগত দিকের চেয়ে আধ্যত্মিক দিক বেশি প্রাসঙ্গিক, যা লোভ নয় বরং সন্তুষ্টি, তাড়াহুড়ো নয় বরং ধৈর্য, অতিরিক্ত নয় বরং পরিমিত, একপক্ষীয় নয় বরং নিরপেক্ষ এবং প্রতিযোগিতা ও দুর্নীতি নয় বরং সহযোগিতা ও সমতার মাধ্যমে অর্জন করা যায়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন