নগরবাড়ী-বাঘাবাড়ী নৌরুট

এক সপ্তাহ ধরে মাঝনদীতে আটকে আছে ৩০টি কার্গো

মেহেদী হাসান, রাজবাড়ী

তীব্র নাব্য সংকটের কারণে এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে রাজবাড়ীর নগরবাড়ী-বাঘাবাড়ী নৌরুট। এতে দৌলতদিয়া নম্বর ফেরিঘাটের কাছে মাঝনদীতে আটকে আছে অন্তত ৩০টি পণ্যবোঝাই কার্গো। অনেক কার্গো থেকে পণ্য অনলোড করে ছোট ছোট বাল্কহেডে তীরে আনা হচ্ছে। কিন্তু কাজেও অন্তত ১৫ দিন সময় লাগছে। এতে খরচ বাড়ার পাশাপাশি ভোগান্তিতে পড়েছেন কার্গোচালকরা।

চালকরা জানান, পদ্মায় নাব্য সংকটের কারণে কার্গো চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। কারণে কার্গোগুলোকে আটকে থাকতে হচ্ছে দিনের পর দিন।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ীতে পণ্য পরিবহনের সহজ উপায় রাজবাড়ীর নগরবাড়ী-বাঘাবাড়ী নৌরুট। প্রতিদিন নৌরুট দিয়ে চলাচল করে কয়েক হাজার পণ্যবাহী কর্গো। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে পদ্মার পানি কমে যাওয়ায় মোল্লার চর, কাজিরহাট, বেতালিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় তৈরি হয়েছে অসংখ্য ডুবোচর। যে কারণে মাঝ পদ্মায় আটকা পড়েছে অন্তত ৩০টি কর্গো।

গত শুক্রবার সকালে সরজমিন রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া নম্বর ঘাট থেকে এক কিলোমিটার দূরে পদ্মা নদীর উত্তর দৌলতদিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে আটকে আছে অন্তত ৩০টি বিভিন্ন পণ্য বোঝাই জাহাজ। সময় তিনটি বড় জাহাজে দেখা যায় শ্রমিকরা ছোট বাল্কহেডে পণ্য পরিবহন করে তীরে আনছেন।

সময় সার বোঝাই বড় কর্গো এমভি রামিশার শ্রমিক আনোয়ার খান জানান, কোনো উপায় না পেয়ে তারা বড় কার্গো থেকে সার, গম, কয়লা, ক্লিংকার, পোলট্রি খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্য নামিয়ে ছোট বাল্কহেডে করে গন্তব্যে নিচ্ছেন। এতেও পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। খরচও হচ্ছে দ্বিগুণ।

শ্রমিক বিল্লাল মোল্লা বলেন, মাঝ পদ্মায় জাহাজগুলো ভিড়ে আছে এতে খাবারসহ বিভিন্ন ধরনের ভোগান্তি পেতে হচ্ছে। একেকটি বড় কার্গো থেকে ছোট বাল্কহেডে পণ্য তুলতে কমপক্ষে ১৫ দিন সময় লেগে যাবে।

এমভি রামিশার চালক (মাস্টার) মো. বাদল বলেন, প্রতি বছর শীত মৌসুমে নাব্য সংকটের কারণে নৌপথে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। প্রতিটি কার্গোতে ৮০০ টন করে মালামাল রয়েছে। নাব্য সংকটের কারণে তীরে ভিড়তে পারছি না। তাই মাঝ নদীতেই পণ্য খালাস করতে হচ্ছে। ব্যাপারে সরকারের সদিচ্ছা থাকলেও বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তাদের গাফিলতি রয়েছে।

এমভি হিমুর চালক (মাস্টার) মো. কামরুজ্জামান বলেন, এখানে বেশির ভাগ নৌযানে বিভিন্ন প্রকার সার রয়েছে, যা উত্তরবঙ্গের কৃষিকাজে ব্যবহূত হয়। নাব্য সংকটের কারণে দৌলতদিয়ায় দুই সপ্তাহ আটকে থাকার মানে ওই অঞ্চলে দুই সপ্তাহ পর সার পৌঁছাবে। এতে পিছিয়ে পড়বে কৃষিকাজ। সেই সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের কৃষকদের বেশি দামে ক্রয় করতে হবে সার। তাই দ্রুত সময়ে নদীর ড্রেজিং করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনার দাবি জানান তিনি।

নদী কবে ড্রেজিং হবে? কবে অচলাবস্থা কাটবে? ব্যাপারে কোনো সদুত্তর মেলেনি বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে। এমনকি দৌলতদিয়ায় বিআইডব্লিউটিএর সাইড অফিসে বারবার গিয়েও পাওয়া যায়নি কোনো কর্মকর্তাকে।

টেলিফোনে বিআইডব্লিউটিএ দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রকৌশল বিভাগ দেখাশোনা করি। নদী ড্রেজিংয়ের ব্যাপারে ওই বিভাগের প্রকৌশলী মো. আক্কাছ মিয়ার সঙ্গে কথা বলতে হবে।

বিষয়ে প্রকৌশলী আক্কাছ মিয়া বণিক বার্তাকে বলেন, চলতি মাসে নগরবাড়ী-বাঘাবাড়ী নৌরুটে সর্বোচ্চ ফুট ড্রাফটের কার্গো চলাচলের কথা। বিষয়ে আমরা পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছি। কিন্তু যে কার্গোগুলো এখন আটকে আছে, সেগুলোর ড্রাফট কমপক্ষে ১২ ফুট। প্রতিটি কার্গোই ধারণক্ষমতার বেশি পণ্য পরিবহন করছে। অবস্থায় নদীতে আটকে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। আমাদের নিয়মিত ড্রেজিং চলমান রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন