সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা দেশ গড়ায় আরো অবদান রাখবে —প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ গঠনে আরো বেশি অবদান রাখবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সশস্ত্র বাহিনী দিবস ২০২০ উপলক্ষে গতকাল টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের প্রক্রিয়ায় ক্ষুদ্রতর পরিসর থেকে উদ্ভূত সশস্ত্র বাহিনী আজ একটি বিশাল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এ বাহিনীর সদস্যরা সততা, নিষ্ঠা, দেশপ্রেম ও পেশাগত দক্ষতায় বলীয়ান হয়ে দেশের প্রতিরক্ষা এবং দেশ গড়ার কাজে আরো বেশি অবদান রাখবেন—পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালার কাছে এ প্রার্থনা করি।

সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, আমাদের সরকারের আমলে সশস্ত্র বাহিনীর যে আধুনিকায়ন হয়েছে অতীতে কোনো সময়েই তা হয়নি। বিগত এক দশকে আমরা সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি শাখাকে আধুনিক সমরাস্ত্র ও উপকরণ দ্বারা সমৃদ্ধ করেছি।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতির বিজয়ের স্মারক হিসেবে প্রতি বছর ২১ নভেম্বর ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। তবে এ বছর করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে প্রচলিত উৎসবের আমেজ পরিহার করে এ দিবসটি পালন করেছে সশস্ত্র বাহিনী। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ দিবস উপলক্ষে ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে তার ভাষণ দিয়েছেন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই সরকার সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন করছে। বঙ্গবন্ধুর প্রতিরক্ষানীতি ১৯৭৪-এর আলোকে আমরা ফোর্সেস গোল-২০৩০ প্রণয়ন করেছি। তারই ধারাবাহিকতায় সশস্ত্র বাহিনীকে সাংগঠনিকভাবে পুনর্গঠন, উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান ও বিশেষায়িত সামরিক সজ্জায় সজ্জিত করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ২টি পদাতিক ব্রিগেড, রামুতে ১০ পদাতিক ডিভিশন, সিলেটে ১৭ পদাতিক ডিভিশন, পদ্মা সেতু প্রকল্পের নিরাপত্তা ও তদারকির জন্য একটি কম্পোজিট ব্রিগেড, স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন ছাড়াও ১০টি ব্যাটালিয়ন, এনডিসি, বিপসট, এএফএমসি, এমআইএসটি, এনসিও’স একাডেমি ও বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টাল সেন্টারের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

‘মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মহান আত্মত্যাগ ও বীরত্বগাথা জাতি চিরদিন গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে জাতির পিতার অসামান্য ভূমিকার কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ক্ষুদ্র পরিসরে যে সশস্ত্র বাহিনীর জন্ম হয়েছিল, তা আজ মহীরুহ হয়ে বিশাল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতার পর পরই জাতির পিতা একটি উন্নত ও পেশাদার সশস্ত্র বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিলেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে সীমিত সম্পদ নিয়ে বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালেই গড়ে তোলেন বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি, কম্বাইন্ড আর্মস স্কুল এবং সেনাবাহিনীর প্রতিটি কোরের জন্য স্বতন্ত্র ট্রেনিং সেন্টার।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু একই সঙ্গে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর তিনটি ঘাঁটি উদ্বোধন করেন। ভারত ও যুগোস্লাভিয়া থেকে নৌবাহিনীর জন্য যুদ্ধজাহাজ সংগ্রহ করেন। ১৯৭৩ সালে সে সময়ের সুপারসনিক মিগ-২১ যুদ্ধবিমানসহ হেলিকপ্টার ও পরিবহন বিমান এবং এয়ার ডিফেন্স রাডারের মতো অত্যাধুনিক সরঞ্জাম বিমান বাহিনীতে সংযোজন করেন।

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘আজ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীলগ্নে জাতির পিতা প্রণীত জাতীয় প্রতিরক্ষানীতির শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর পেশাদারিত্ব এবং কর্মদক্ষতা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যগণ দেশের যেকোনো ক্রান্তিলগ্নে সর্বোচ্চ নিষ্ঠা ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।’

কভিড-১৯ মোকাবেলায়ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের বলিষ্ঠ ভূমিকা পালনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের প্রতিটি অঞ্চলে ‘লকডাউন কার্যক্রম’ বাস্তবায়ন করেছে। সাধারণ জনগণের মধ্যে মহামারী প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টি এবং বিদেশ থেকে আগতদের জন্য কোয়ারেন্টিন সেন্টার স্থাপন ও পরিচালনা করে যাচ্ছে। এছাড়া সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, ঢাকার সমন্বিত করোনাভাইরাস চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। করোনাকালে দুস্থ ও অসহায় মানুষের সাহায্যার্থে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নানাবিধ কার্যক্রমও অত্যন্ত প্রশংসা কুড়িয়েছে।

শেখ হাসিনা করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কার্যক্রম তুলে ধরে বলেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা এবং দুস্থ ও অসহায় পরিবারদের মানবিক সহায়তা প্রদানে তারা কাজ করে যাচ্ছে।

মালদ্বীপের করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের প্রদত্ত চিকিৎসাসামগ্রী নৌবাহিনীর জাহাজযোগে সেখানে পাঠানো হয়। এছাড়া জাতিসংঘে নিয়োজিত বাংলাদেশ নৌবাহিনী জাহাজ ‘বিজয়’ লেবাননের বৈরুতে বসবাসরত বাংলাদেশী পরিবারগুলোর মধ্যে খাদ্য ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করে।

আর্তমানবতার সেবায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ভূমিকা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে কভিড-১৯-এ আক্রান্ত জনপ্রতিনিধি, চিকিৎসক, শিক্ষক, বিশিষ্টজনসহ উল্লেখযোগ্যসংখ্যক রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তর করেছে। আটকে পড়া দেশী-বিদেশী নাগরিকদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের জন্য বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ১৭টি ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। এছাড়া বাংলাদেশ বিমান বাহিনী মালদ্বীপে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের করোনা চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি মেডিকেল টিম মালদ্বীপে প্রেরণ এবং লেবাননে সংঘটিত ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর সেখানে মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করে।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মোকাবেলা করতে গিয়ে সশস্ত্র বাহিনীর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন এবং বেশ কয়েকজন মৃত্যুবরণ করছেন। আমি যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই এবং অসুস্থদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন