লুব্রিক্যান্ট সাধারণ গাড়ির ইঞ্জিন, শিল্প-কারখানা যন্ত্রপাতিতে ব্যবহার করা হয়। দেশে এক দশক ধরে লুব্রিক্যান্টের ব্যবসা চললেও এ শিল্পের বাজার খুব বেশি বড় হয়ে ওঠেনি। তবে চাহিদা বাড়ায় এ শিল্পে এখন অনেকে বিনিয়োগ করছেন। তবে ব্যাপক আকারে প্রসারিত হওয়ার ক্ষেত্রে বাজারে নিম্ন মানের লুব্রিক্যান্ট আমদানি, উচ্চমানের ব্র্যান্ডকে ব্যবসায়িক স্বার্থে স্থানীয় বাজারে ব্র্যান্ডিং করা, সর্বোপরি সরকারি সংস্থাগুলোর এ সেক্টরে ব্যবসা করার প্রবণতা বাজার প্রসারিত হওয়ার ক্ষেত্রে বড় বাধা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল ‘দেশীয় লুব্রিক্যান্ট শিল্পের ভবিষ্যৎ ও চ্যালেঞ্জ’
শীর্ষক ওয়েবিনারে একথা জানান বক্তারা। তারা বলেন, লুব্রিক্যান্ট শিল্পকে এগিয়ে নেয়ার জন্য সরকার বেশ কয়েক বছর আগে আইন করলেও এ আইন শিল্পকে খুব বেশি সহায়তা করতে পারেনি।
এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার ম্যাগাজিন আয়োজিত ওয়েবিনারে সঞ্চালক ছিলেন এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ারের এডিটর মোল্লাহ আমজাদ হোসেন। লুব্রিক্যান্টের বাজার ব্যবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, এ শিল্পের মার্কেট দেশে খুব একটা বড় নয়। ১ লাখ ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার টনের মধ্যে, যার আর্থিক বাজারমূল্য প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। বিশ্বের বড় বড় কোম্পানি দেশীয় কোম্পানিগুলোর সহায়তা নিয়ে লুব্রিক্যান্ট ব্র্যান্ডিং করছে। একই সঙ্গে এখানে আন্তর্জাতিক মানের লুব উৎপাদন করা হচ্ছে। বর্তমানে এ শিল্পে ১১টা লুব কোম্পানি রয়েছে। তাদের উৎপাদিত লুব্রিক্যান্টের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাইরে রফতানি করছে। তবুও সরকারি কোম্পানি বিপিসি ৫ হাজার ৪০০ টন লুব্রিক্যান্ট আমদানি করে নিজেই ব্র্যান্ডিং করছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এমজেএল লুব্রিক্যান্টের পরিচালনা বোর্ড সদস্য অধ্যাপক ইজাজ হোসেন বলেন, ফুড মেডিসিনের পরেই লুব্রিকেটিং অয়েল খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এটা সাংঘাতিক ক্রিটিক্যাল। এটি ভালো না হলে ইঞ্জিন সিজ করবে, কুলিং কম হবে, অনেক সমস্যা হতে পারে। আমি অবাক! সরকার কেন এদিকে নজর দিচ্ছে না।
বুয়েটের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী বায়েজিদ কবীর বলেন, লুব্রিক্যান্টের নিজস্ব কাঁচামাল নেই। যে কারণে এটি এ সেক্টরের বড় একটি সমস্যা। মার্কেটে কিছু লো-গ্রেডের লুব্রিক্যান্ট রয়েছে। প্রপার ওয়েতে কালেক্ট করে রিসাইকেল করা গেলে ৬০ শতাংশ চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।
দেশে লুব্রিক্যান্টের বাজার তৈরির প্রতিবন্ধকতার কথা তুলে ধরে এমজিএল লুব্রিক্যান্ট ইন্ডাস্ট্রি বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী (সিও) মুকুল হোসেন বলেন, লুব্রিক্যান্টের বাজার প্রসারিত হওয়ার ক্ষেত্রে ট্যারিফ একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। একসময় লুবের ট্যারিফ ভ্যালু ১ দশমিক ৫ ডলার ছিল, যে কারণে অনেকে লুব্রিক্যান্ট আমদানি করত। এখনো ট্যারিফ ভ্যালুটা বেড়েছে। অর্থাৎ ১ দশমিক ৮ ডলার হয়েছে। এজন্য অনেকে আমদানি করা কমিয়ে দিয়েছে।
এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ারের কনসালট্যান্ট এডিটর প্রকৌশলী খন্দকার সালেক সুফী বলেন, বাংলাদেশের স্ট্যান্ডার্ডগুলো আপডেট করা হয়নি। তিনটি রেগুলেটরের মধ্যে একটি নিজে একজন বিক্রেতা। বিএসটিআই মান সেট করে দিতে পারে। সাব-স্ট্যান্ডার্ড কেউ আনলে পুলিশিং করতে হবে।
