ভাইরাসের মরণঘাতী হওয়া নির্ভর করছে মানুষের ওপর

বণিক বার্তা ডেস্ক

কভিড-১৯-এর ভাইরাসকে মানব সমাজে কম-বেশি চালিত হতে দিলে বিপজ্জনকভাবে তা কেবল হাসপাতালগুলোতে রোগীর আগমন ঘটিয়ে মানুষের জীবন হুমকিতে ফেলবে না, বরং এটি ভাইরাসের আরো সৌম্য রূপে বিবর্তনকে বিলম্বিত করতে পারে। যা ভাইরাসকে আরো বেশি মরণঘাতী করে তুলবে।

যদিও পরিসংখ্যানগুলো এখনো পরিপূর্ণ পরিশোধিত না। তবে প্রভাব হয়তো এরই মধ্যে সুইডেন (কিছুদিন আগেও যারা বিধিনিষেধ শিথিল রেখেছিল) এবং নরওয়ের (যাদের বিধিনিষেধ অপেক্ষাকৃত কঠোর ছিল) মৃত্যুহারে পার্থক্যকে প্রভাবিত করেছে। সুইডেনের মৃত্যুহার মাথাপিছু একশটি সংক্রমণে তাদের প্রতিবেশীদের তুলনায় তিন গুণ বেশি ছিল।

রোমাঞ্চকর পার্থক্যটির ব্যাখ্যা অংশত নিহিত থাকতে পারে প্রাকৃতিক নির্বাচন এবং জীবাণু তার হোস্টের বায়োলজিক্যাল প্রতিযোগিতার মাঝে। যেকোনো জনসংখ্যার মাঝে জিনগত পার্থক্য থাকে। ভাইরাসও তার চেয়ে ভিন্ন কিছু না। ভাইরাসের কিছু সংস্করণ মানুষের শরীরের জন্য কিছুটা হলেও অধিক বিপজ্জনক তীব্র হতে পারে। কোনো কোনোটা আবার কম হতে পারে। উপযুক্ত পরিস্থিতি পেলে কিছুটা অধিক তীব্র ভাইরাসও প্রাধান্য বিস্তার করতে পারে এবং আরো অনেক বেশি ক্ষতির কারণ হতে পারে।

সুইডেন নরওয়ের পার্থক্যের ব্যাখ্যা অনুসারে, এমন না যে সুইডেনের কেবল ভাইরাসের একটি সংস্করণ ছিল এবং নরওয়ের আরেকটি। ব্যাপারটা মূলত এমন যে সুইডেনের পরিবেশ ভাইরাসের মধ্যে থাকা তীব্র রূপটিকে প্রবেশের সুযোগ করে দিয়েছিল। কেউ যদি এর একটি চূড়ান্ত উদাহরণ খুঁজতে চান, তবে ১৯১৮ সালের ফ্লু মহামারীর দিকে তাকানো যেতে পারে। সেই মহামারী অন্তত ৫০ মিলিয়ন মানুষকে হত্যা করেছে। যেখানে বেশির ভাগই মারা গেছে দ্বিতীয় ঝড়ে। মূলত ১৯১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের ১৩টি সপ্তাহে এটি ঘটেছিল। যদিও সেই পরিসংখ্যান পূর্ণাঙ্গ না। তবে বিবেচনা করা হয় যে সেটি অন্য যেকোনো ফ্লু মহামারীর তুলনায় ২৫ গুণ অধিক মরণঘাতী ছিল।

একটি জীবাণু কিংবা রোগ তার হোস্টকে হত্যা করতে চায় না। তার একমাত্র বিবর্তনীয় চাহিদা হচ্ছে টিকে থাকা এবং পুনরুৎপাদন সম্পন্ন করা। যদি সেটি করতে তারা ব্যর্থ হয় তবে তা হত্যা করতে শুরু করে। এটি ক্ষতিকর হয়ে ওঠে কারণ পুনরুৎপাদনের জন্য এবং নতুন হোস্টে স্থানান্তরের জন্য তাদের হোস্টের সেলুলার মেশিনারি প্রয়োজন হয়। আমরা অসুস্থ বোধ করি কারণ এগুলো আমাদের শারীরিক সংস্থানকে বন্ধ করে দেয়।

যখন মানুষের মধ্যে একটি নতুন রোগজীবাণুর উদ্ভব ঘটে, তখন সেটি প্রাণীদেহ থেকে মানুষের দেহে লাফিয়ে পড়ে। আমাদের শরীর তার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে না। যদি এটা খুবই তীব্র হয়, তবে এটি হোস্টকে অসুস্থ কিংবা ছড়িয়ে পড়ার আগেই মৃত্যুর ঝুঁকিতে ফেলে দেয়। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে একটি সফল রোগজীবাণুর মাঝারি মানের তীব্রতা থাকে, ফলে এটি খুব বেশি ক্ষতি না করেই ছড়িয়ে পড়তে পারে।

মানুষের গঠনও প্রক্রিয়ায়, কারণ আমরাও রোগজীবাণুর সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারি। আমরা এর পথে বাধা প্রদান করিবিধিনিষেধ, ভ্যাকসিন শেষ পর্যন্ত হার্ড ইমিউনিটির মাধ্যমে। যদিও হোস্ট জীবাণু একে অন্যের সঙ্গে অবিচ্ছিন্নভাবে বোঝাপড়া চালিয়ে যেতে থাকে। বাধার মুখোমুখি হওয়া তীব্র নতুন ভাইরাস নিজেকে দ্রুততার সঙ্গে কম তীব্র হিসেবে বিবর্তিত করবে। এর ফলে এটি মরে যায় না এবং এটা সংবেদনশীল নতুন হোস্ট খুঁজে বের করতে পারে।

এখন গোটা বিষয়টি নির্ভর করছে আমাদের ওপর। আমাদেরই বলতে হবে কতদিন মহামারী স্থায়ী হবে এবং কতজন মানুষ মারা যাবে। ভাইরাসকে আমরা যেমন তৈরি হওয়ার সুযোগ দেব, এটি সেভাবেই তৈরি হবে। এখন আমাদেরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

দ্য গার্ডিয়ান

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন